রাধাষ্টমী
ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে শ্রীরাধিকা এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হন।তাঁর জন্মদিন রাধাষ্টমী নামে খ্যাত। কথিত যে সূর্যদেব পৃথিবী পরিভ্রমণ এসে পৃথিবীর রূপ রস আনন্দ দেখে আকৃষ্ট হয়ে মন্দর পর্বতের গুহায় গভীর তপস্যায় মগ্ন হন। এইভাবে অনেক কাল কাটলে পৃথিবী অন্ধকার আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। কখন দেবতারা ভীত হয়ে ভগবান শ্রী হরির শরণাপন্ন হন । শ্রীহরি সূর্যের সামনে উপস্থিত হলে সূর্যদেব খুব আনন্দিত হন। তিনি শ্রীহরিকে বলেন ভগবানের দর্শন পেয়ে তার তপস্যা সার্থক হয়েছে। শ্রী হরি তাকে বর দিতে চাইলে সূর্যদেব –বলেন—- আমাকে এমন একটি গুণবতী কন্যার বর প্রদান করুন যার কাছে আপনি চিরকাল বশীভূত থাকবেন। শ্রী হরি তথাস্তু বলে বর প্রদান করেন। ভগবান বলেন— পৃথিবীর ভার লাঘবের জন্য আমি নন্দালয়ে জন্মগ্রহণ করব। তুমি সেখানেই বৃষভানু রাজা হয়ে জন্মাবে। শ্রীমতি রাধা তোমার কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করবে। এই ত্রিলোকেকে আমি কেবলমাত্র শ্রীরাধার ই বশীভূত থাকবো। রাধা ও আমার মধ্যে কোনো প্রভেদ থাকবে না। আমি সবাইকে আকর্ষণ করি কিন্তু একমাত্র শ্রীরাধিকাই আমাকে আকর্ষণকরবে ।
শ্রী হরি নন্দালয়ে জন্মগ্রহণ করলে সূর্যদেব বৈশ্য কূলে জন্মগ্রহণ করেন বৃষভানু নামে। গোপ কন্যা কীর্তিদা র সাথে তার বিবাহ হয়। যথাকালে ভাদ্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ধরিত্রী কে পবিত্র করে কীর্তিদার গর্ভে শ্রীমতি রাধা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আবির্ভাব তিথি রাধাষ্টমী নামে পরিচিত।
অন্য এক পুরান কথায় বলা হয়েছে যে সেই সময় যমুনা নদী বর্ষাণার রাভেল নামক স্থানটি পাশ দিয়ে বয়ে যেত। একদিন রাজা বিষ ভানু নদীতে স্নান এ গিয়ে দেখেন যে হাজার সূর্যের আলোর মতো জ্যোতির্য়র পদ্ম যমুনা র ঠিক মাঝখানে ফুটে আছে। আর তার মাঝখানে আছে একটি ছোট শিশু কন্যা। ভগবান ব্রহ্মা এসে বিস্মিত রাজাকে বলেন যে রাজা বৃষভানু ও তাঁর পত্নী কীর্তিদা পূর্ব জন্মে ভগবান বিষ্ণুর পত্নী কে কন্যারূপে পাবার জন্য কঠোর তপস্যা করেন। তার ফলস্বরূপ রাজা এই জন্মে ভগবান বিষ্ণুর পত্নীকে কন্যারূপে পেয়েছেন। এরপর রাজা বৃষভানু সেই শিশু কন্যাকে পত্নী কীর্তিদার হাতে তুলে দিলেন। কিন্তু তারা দেখলেন যে কন্যাটি কিছুতেই চোখ খুলছে না। তাঁরা ভাবলেন শিশুটি বোধহয় অন্ধ। যখন নারদ মুনি রাজা বৃষভানু কাছে এসে শিশু জন্মের জন্য আনন্দ উৎসবের আয়োজন করতে বললেন। নারদ মুনির কথা অনুযায়ী রাজা বৃষভানু উৎসবের আয়োজন করলেন। এই উৎসবে নন্দ মহারাজ শিশু কৃষ্ণ সহ সপরিবারে এসেছিলেন। ওই অনুষ্ঠানেই শিশু কৃষ্ণ যখন হামাগুড়ি দিয়ে শিশু রাধারানীর দিকে এগিয়ে এলেন সেই মুহূর্তেই রাধারানী প্রথম চোখ খুলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে দেখলেন। বৃন্দাবনের নিকটবর্তী বর্ষণা এলাকার রাভেল নামক পবিত্র স্থানে রাধারানী আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর আবির্ভাবের পবিত্র দিনটিই রাধাষ্টমী হিসাবে পালন করা হয়।
রাধাষ্টমী পালন প্রসঙ্গে ভাগবত পুরাণে বর্ণনা করা আছে যে এই ব্রত পালনে কোটি জন্মের ব্রহ্মহত্যার মত মহাপাপও বিনষ্ট হয়। শতশত একাদশী ব্রত পালনে যে ফল রাধাষ্টমী পালনের তার শতাধিক ফল লাভ হয়।।
জয় শ্রীরাধে!!!
তথ্যসূত্র- বিভিন্ন পুরাণ ও পত্র-পত্রিকা