রাজামণি সরস্বতী (সুপ্ত ইতিহাস)
পৃথিবীর ইতিহাসকে যারা পাল্টায়, তাদের যতটা মনে থাকে, এক সঙ্গে চলা সহযোদ্ধাদের ততটা থাকে না। এটাই হয়ত সভ্যতার সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি। সে শিবাজীর বহিরজী নায়েক বা পৃথ্বীরাজের চন্দ্র বরদাঈ ই হোক বা অটোহানের মেইটনার। গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে যখন ইংরেজদের অতিরিক্ত তৎপরতা, তখন কিছু মানুষ বার্মাতে চাকরির জন্য আসতে থাকেন ও উন্নতি করেন। তেমন এক তামিল পরিবারের মেয়ে রাজামণি। একটা রেডিওর খবরে স্বচ্ছল পিতামাতার প্রথম দুঃখ দেখেছিল রাজামণি। ভগত সিং এর ফাঁসি। এরপর ক্রমাগত এই চিন্তা, কবে নেতাজী আসবেন রেঙ্গুনে। তাই আই এন এ ক্যাম্পের ডোনেশন প্রোগ্রামে একজন ছাত্রী যখন সোনা রুপোর গয়না দিয়ে গেল, তখন তা ফেরত দিতে স্বয়ং নেতাজী গেছিলেন তার বাড়িতে, কিন্তু তার যুক্তিতে অবাক হয়ে নাম দিয়ে ছিলেন সরস্বতী। এরপর নার্সিং থেকে শুরু করে কঠোর যুদ্ধ বিদ্যা শিক্ষা এবং ঝাঁসি রানী বাহিনীর গুপ্তচর হয়ে অতি উৎসাহের সঙ্গে ইংরেজ ক্যাম্পের খবর দেওয়া, ধরা পড়ে যাওয়া বান্ধবী দূর্গাকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেও মনের জোরে দুজনের ব্রিগেডে ফিরে আসা ইত্যাদি অভিজ্ঞতায় তার জীবন পরিপূর্ণ। নেতাজী তাকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গুপ্তচর বলে অভিহিত করেছিলেন কারণ এসব অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার মাত্র ষোলো বছর বয়সে। এরপর তারা ভারতে ফিরে আসেন। হয়তো এমন আরো বীরাঙ্গনা ইতিহাসের পাতায় এখনও গা ঢাকা দিয়ে আছেন। নিশ্চয়ই একদিন মানুষের দ্বারাই এদের উপযুক্ত মূল্যায়ন হবে।