(আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফকে)
রবীন্দ্রনাথ, আজ পঁচিশে বৈশাখ, আপনার
জন্মদিন, এই অনুপম সত্য কোন্ প্রকৃত
বাঙালির অজানা? এই দিবস তাদের প্রত্যেকের
হৃদয়ে সূর্যকিরণের মতো, চরাচর-ভাসানো
পূর্ণিমার মতোই উদ্ভাসিত।
রবীন্দ্রনাথ, আপনি, হ্যাঁ আপনিই তো আমাদের
জানিয়েছে আনন্দলোক মঙ্গলালোকের অপরূপ স্তোত্র।
কিন্তু, হা কপাল, কোথায় সেই আনন্দলোক, কোথায় মঙ্গলালোক?
শান্তির ললিতবাণী আপনি শুনিয়েছেন
বিশ্ববাসীকে। এই আমরা, একবিংশ শতাব্দীর বাঙালিরা
অসহায়, থরথর দৃষ্টিতে দেখছি-
অরণ্যের শ্বাপদের চেয়েও অধিক ভয়ঙ্কর, হিংস্র সেই সব
মানুষের খোলসের আড়ালে বসবাসকারী পশুদের
থাবায় ছিন্ন ভিন্ন সেই বাণী।
রবীন্দ্রনাথ, আপনার জন্ম মাসের পয়লা তারিখে আমরা প্রকৃত
বাঙালিরা চারপাশে আনন্দের ফুল ছড়িয়ে
বরণ করি নববর্ষকে আপনারই অমল, আনন্দময়,
শান্তি-বিলানো গানের ডালা দুলিয়ে। সুরে সুরে
সবুজ ঘাস-ছাওয়া মাটি, বটমূল, গাছপালা, আকাশ
আমাদের অপরূপ হৃদয়-উদ্যান
ছেয়ে যায়। আমাদের করতলে চকিতে নৃত্যপর আনন্দলোক।
অথচ এই প্রথমবারের মতো আপনার গান কেন
রক্তপিপাসু হয়ে উঠল আমাদের রমনার বটমূলে?
নববর্ষকে স্বাগত জানানোর জন্যেই কি
আপনার অনুপতম গীতধারা বয়ে আনল পাশবিকতা?
বঙ্গ-সংস্কৃতির প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা, রবীন্দ্রনাথ,
আপনার গানের চেতনা সমৃদ্ধ করার
অপরাধেই তো ঘাতকদের বোমা উড়িয়ে দিল
কারো মাথার খুলি, ছিন্ন ভিন্ন করল কারও নিরপরাধ
শরীর, দুঃখের বানে ভাসিয়ে দিল কয়েকটি সংসার!
রবীন্দ্রনাথ, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডে
ক্রোধে, ঘৃণায়, আপনি বৃটিশরাজের দান নাইট উপাধি
ছুঁড়ে ফেলেছিলেন দিল্লীর দরবারের ধুলোয়। আজ
আপনি কী করবেন রবীন্দ্রনাথ? আপনার গীতবিতান কি
ছুঁড়ে দেবেন ঈশ্বরের দরবারে? জানি,
তা কস্মিনকালেও হবার নয়। আজ আপনার ক্রোধ, ধিক্কার ঘৃণা
কোনও কিছুরই অস্তিত্ব নেই। আমরা মাথা খুঁড়ে মরলেও আপনি
আজ আমার অন্তর্জ্বালা, ক্রোধ
এবং প্রতিবাদের ঝড়ে শরিক হতে পারবেন না রবীন্দ্রনাথ।