রঙ
পলাশ শিমুলের আগুনে সারা জঙ্গল পাহাড় হোলি খেলছে। পাহাড় গড়ানে পলাশ বন— লালে লাল। বন এসে যেন ঝাবর নালায় মুখ দেখছে—- ভারী সুন্দর লাগে জায়গাটা! প্রকৃতির সবুজ আঁচলে পলাশ শিমুলের আগুনরঙা আলপনা মনকে ভালোলাগায় ভরিয়ে দেয়। রাই এই জঙ্গল পাহাড় কে ভালবেসে এখানেই থেকে গেছে–ওর এই প্রকৃতি সংরক্ষণের গুরু ওর বন্ধু কৌশিক। ছোটবেলার বন্ধুত্ব পরিণতি পেয়েছিল যুগল সম্মিলনে। দুজনেই এই জঙ্গল পাহাড়ি এলাকায় জনসচেতনতার কাজ নিয়ে চলে আসে। বেশ ছিল দুজনে। কৌশিকের এই সচেতনতা আদিবাসীদের সঙ্ঘবদ্ধ করেছিল বন সংরক্ষণের কাজে। কিন্তু কাঠ মাফিয়ারাএটাকে ভালো চোখে নেয় নি। ওদের কুনজরে পড়েছিল কৌশিক। জঙ্গল সংরক্ষণ গাছ কাটা বন্ধ করতে গিয়ে কাঠ মাফিয়াদের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল। এমনই এক দোল পূর্ণিমার সাঁঝে বুলেটের রক্ত হোলি খেলাতে না ফেরার দেশে চলে যেতে বাধ্য হয় কৌশিক। রাই এর কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছিল যে রাই এই জঙ্গল পাহাড় ছেড়ে কলকাতা ফিরে যাবে না। এখানেই যে ছড়িয়ে আছে কৌশিকের কর্মজীবনের রামধনুর রং। রাই নিজেকে সেই রঙে রাঙ্গিয়ে নিয়েছিল।
এক দঙ্গল কচিকাঁচার কলকলানি তে চমক ভাংলো রাইয়ের। ওর “সুখের ডেরা”র প্রাঙ্গণে এসে সমবেত হয়েছে স্থানীয় গ্রামের বাচ্চারা–যারা- রাই এর বেঁচে থাকার অবলম্বন। ওদের সাথে প্রভাতফেরিতে পা মেলালো প্রৌডা রাই। মন বলে উঠলো–
“রঙ শুধু দিয়েই গেলে আড়াল থেকে অগোচরে
সে রঙ কখন লাগলো এসে মনে
গেল জীবন মরণ ধন্য করে।”