মুক্তি
শ্রাদ্ধ ভোজ
ভবেনবাবু মারা যাওয়ার পর আজ ১৩ দিনের মাথায় তাঁর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের এবং আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীদের খাওয়া দাওয়া চলছে।
দুই ছেলে এবং এক মেয়ে -জামাই নিজেরা দাঁড়িয়ে থেকে অতিথি অভ্যাগতদের খাওয়া-দাওয়ার তদারকি করছে।
“মেসোমশাই আরেকটু ছানার ডালনা নিন, এইরকম ছানার ডালনা বাবা খুব ভালোবাসতো “,
“আরে কাকাবাবু পাতটা খালি কেন ? এই কাকাবাবুকে মাছ দিয়ে যা “,
“পিসেমশাই ,আপনার পাত ও দেখছি খালি, আর দুটো রসগোল্লা নিয়ে আয় পিসেমশাইয়ের জন্য “,
“কাকিমা ,ভালো করে খেয়েছেন তো?”
এইভাবে অতিথি অভ্যাগতদের আদর আপ্যায়ন চলছে।
অতিথির অভ্যাগতরাও খাওয়া-দাওয়া করে পান চিবোতে চিবোতে বলছেন,
“বাহ ,বেশ ভালো খাইয়েছে, ভবেন বাবুর ছেলে মেয়েদের দিল আছে “!
এসব দেখে পাশের বাড়ির প্রতিবেশীরা আর নিকট আত্মীয়রা মনে মনে ভাবছেন কি যে দিল আছে ,তারা তো জানেন ।
কারণ তারা তো দেখেছেন ,ভবেন বাবুর শেষ জীবনে কি পরিস্থিতি হয়েছিল ।
বিপত্নীক ওই লোকটি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া পেতেন না শেষের দিকে, আদর যত্ন তো দূরের কথা ।
আর তার সাথে যোগ হয়েছিল সম্পত্তির আর বাড়ির ভাগ বাটোয়ারার চুল চেরা হিসেব, দুই ছেলে আর মেয়ে -জামাই এর মধ্যে!
অনেক সময় রীতিমতো শারীরিক অত্যাচার করাও হতো ওই বৃদ্ধ মানুষটার ওপর, সেই সময় তার আর্ত চিৎ্কারের আওয়াজ যেন এখনো ভেসে আসে পাড়া প্রতিবেশীদের কানে।
আর এখন তাঁর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে, কে কত ভালবাসত তার বাবাকে?
এখন উনি এই খেতে ভালোবাসতেন, ওই খেতে ভালোবাসতেন, এইসব দেখতে হচ্ছে!
এই নির্লজ্জ আত্মপ্রচার বন্ধ করা দরকার। আর সত্যি কথা বলতে গিয়ে বেশিরভাগ সময়ই শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের নামে এই কবজি ডুবিয়ে ভোজ খাওয়ার প্রথা বন্ধ করা দরকার।
তার থেকে জীবিত অবস্থায় আদর যত্নের মাধ্যমে এবং মৃত্যুর পরে ফুলের মালা এবং স্মরণের মাধ্যমে মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা যায়!
কিন্তু কে শোনে কার কথা!
সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে!
যারা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের ভোজে কবজি ডুবিয়ে খাচ্ছেন, এবং যারা খাওয়াচ্ছেন তারা উভয়েই দায়ী!
অবিলম্বে এই চক্ষু লজ্জাহীন ভোজের অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়া দরকার।