মায়ের পূজা কালী রূপে
“কাল”—- অর্থ অনন্ত সময়। এই “কাল”এর স্ত্রীলিঙ্গ বোধক “কালী”। “কাল” সর্ব জীবকে গ্রাস করে। সেই “কাল”কে যিনি গ্রাস করেন তিনিই “কালী”।
মহিষাসুর সহ সব অসুর দেবী দুর্গার হাতে নিহত হলেও, জীবিত থেকে যায় ব্রহ্মার আশীর্বাদ ধন্য “রক্তবীজ”। যার শরীরের এক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়লে তা থেকে সৃষ্টি হয় হাজার অসুর।
ভয়ানক ক্রোধানলে দেবী দুর্গার ভ্রূ যুগলের মধ্যস্থল থেকে জন্ম নিলেন দেবী “কালী”। কৃষ্ণবর্ণা, আলুলায়িত কেশা, রক্তচক্ষু, লোল জিহ্বা, করালবদনা, চতুর্ভূজা, দক্ষিণ করে উন্মুক্ত খড়্গ, রুদ্রমূর্তি নগ্নিকা ত্রিনয়নীর ভয়াল দৃষ্টি এবং হুংকারে প্রাণ গেল হাতি ঘোড়া সমেত অবশিষ্ট অসুর দলের।
দলপতি রক্তবীজকে অস্ত্রে বিদ্ধ করে শূন্যে তুলে, তার শরীরের সমস্ত রক্ত পান করেন ক্রূরা। রক্তশূন্য নিথর দেহটি ছুঁড়ে ফেলে দেন মহাবলা।
আকন্ঠ রক্ত পান করে রৌদ্রমুখী তখন উন্মাদিনী। নিহত অসুরদের হাত কেটে তৈরী করেন কোমরবন্ধনী। মাথা দিয়ে কন্ঠের মুণ্ডমালা। রক্তবর্ণ লকলকে জিহ্বা বার করে শুরু হয় ঘোররূপার প্রলয়নৃত্য।
প্রমাদ গোনেন দেবতারা। কালভৈরব তথা শিব’এর শরণাগত হন তাঁরা। কিন্তু মহেশ্বরের কোনো আহ্বান শুনতে পান না মাহেশ্বরী। তিনি তখন হত্যালীলার মহাঘোরে হাস্যরতা।
উপায়ন্তর না দেখে, নৃত্যরতা মাতঙ্গীর পায়ের কাছে শুয়ে পড়েন ভোলানাথ। পশুপতিনাথ’এর দেহের উপর পা পড়ে যায় নৃত্যরতা অভব্যার। মূহুর্তে সম্বিত ফেরে তাঁর। থেমে যায় প্রলয়নাচন। পদতলে স্বামীকে দেখে লজ্জিতা দেবী। কামড় পড়ে রক্ত পানে সিক্ত জিহ্বায়।
মার্কণ্ডেয় পুরাণের পৌরাণিক এই কাহিনী অবলম্বনে যুগ যুগ ধরে কার্তিকী অমাবস্যায়, মহামেঘবর্ণা এলোকেশী নৃমুণ্ডমালিনী পূজিতা হয়ে আসছেন দেবী “কালী” রূপে।।