Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » মনের মানুষ || Samarpita Raha

মনের মানুষ || Samarpita Raha

―ক্রিং ক্রিং―
মা ফোনটা ধরো দয়া করে।জানি তুমি যা অভিমানী…আমার ফোন নম্বর দেখলে ফোনটা ধরবে না.।
.মা তুমিতো আমার গর্ভধারিণী মা…হয়তো আমি তোমার কুলাঙ্গার ছেলে।তোমার অমতে বড়লোকের দুলালীকে বিবাহ করে ঘরজামাই হয়ে আছি।
একটিবার ও তোমার একাকীত্বের কথা ভাবিনি।

হুম কি মনে করে ফোন করলি বাবা?
এখনো বেঁচে আছিরে !মরলে তোকে বিব্রত করব না।পেনশন যা পাই ভালোমতো চলে যায়।এক তোর বাবা কোথায় নিরুদ্দেশ হলো! সমবয়সী ছিলাম কোথাও হয়ত ছোট কোনো মেয়ের সঙ্গে সুখে বাস করছে।আমার কপাল খারাপ তাইতো বর ও ছেলে থাকতেও একাকীত্ব জীবন। তবে আমার ষাট বছরের জীবনে আক্ষেপ আর নেই।

মা তোমার বৌমা মৃত্যুশয‍্যায়।বাচ্চাটাকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।এদিকে শ্বশুর – শ্বাশুড়ি বেড়াতে গেছেন।মা বিরবির করে আপনমনে বলেন বিপদে পড়লেই প্রিয়জনের কথা মনে পড়ে ।আমার ও আজ ছেলের কথা বারবার মনে পড়ছিল।

কিছু বললে মা???

ঠিক আছে আমি আসছি আমার নাতি-বৌমার ক্ষতি হতে দেব না।

ঠিকানাটা বল তোর কাছে আসব কি করে?

মা আমি তো কোলকাতায় থাকি না।ব‍্যাঙ্গালোর থাকি।

ঠিক আছে এয়ারপোর্ট থেকে কত দূরে থাকিস।চটপট করে বল।

ছেলেতো জানে না …আমি ওর বাবার খোঁজ পেয়ে আমার ভায়ের সাথে ব‍্যাঙ্গালোরে আছি।

আধা ঘন্টা পর ছেলের বাড়ির কলিং বেল বাজে।

দরজা খুলতেই মাকে,মামাকে দেখে অবাক।
ছেলেটা অনেকক্ষণ ধরে কাঁদতে থাকে।খাটে ছোট্ট নবজাতক শিশু।বৌমা সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায়।বাচ্চা অপারেশন করে বার করা হয়।প্রচন্ড রক্তপাতের ফলে বৌমা খুব অসুস্থ।ছোট বাচ্চা কৌটোর দুধ খাচ্ছে।মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত।
শ্বশুর – শ্বাশুড়ি খরচ করে ইউরোপ গেছেন।সুইজারল্যান্ড হয়ে প্রায় দিন পনেরো বাদে আসবেন।গেলেইতো সহজে আসা যায় না।
বৌমাকে নার্সিংহোম থেকে অনেক রক্ত দেওয়ার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে।আপাতত মা ও মামা ছেলের সঙ্গে। একদিকে বৌমার সেবা,নাতির দেখাশুনা।

ছেলে মাকে বলে তুমি কেন ব‍্যাঙ্গালোর এসেছিলে।আমাকে খোঁজবার জন্য।

মা জানান তোমার বাবার খোঁজে।

উনি পঁচিশ বছর ধরে একজনের সন্তান হয়ে আছেন।নুতন ভাবে নুতন পরিচয়ে।স্মৃতিভ্রষ্ট হয়ে।এক সপ্তাহ আগে তোমার বাবার একটা দুর্ঘটনা ঘটে।পুরাতন কথা মনে পড়ে ।
তারপর লোকাল থানা থেকে আমাকে জানানো হয়।কিন্তু আমার পঁয়ত্রিশ থেকে ষাট সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে।আমিও তো তোর বাবাকে পঁয়ত্রিশের পর দেখিনি।

ছেলে ও ভাই সহ ঐ ষাট বছরের ব‍্যক্তির সম্মুখে যায়।মাথায় চোট।তাই ডাক্তার চাপ দিতে বারণ করেছেন। আমার স্বামী নিঃসন্তান দম্পতির ছেলে হয়ে ছিলেন।এক দুর্ঘটনার পর জামসেদপুর থেকে ওনাকে পান।

স্বামীর ঘরে গিয়ে বলি আপনার স্ত্রী আছে?
উনি বলেন কেন থাকবেন না।
সেই মুহুর্তে উনি বলেন “বসন্ত এসে গেছে” কবিতাটা একটু শোনাও।কত বছর তোমার আবৃত্তি শুনিনি।পাগলের মতো পঁচিশ বছর ধরে তোমাকে খুঁজেছি।কিন্তু কোথায় থাকো সেটা প্রকাশ করতে পারিনি।তবে হালকা স্মৃতি ছিল।ছোট্ট শিশুর কিছু স্মৃতি মনে আসত।
“চলো যায় কিংশুক বনে..হাত ধরে ঘুরি..কত কথা কত ব‍্যথা হৃদয়ে জমা..তারপর ছাড়াছাড়ি”।আর মনে নেই কবিতাটা ..সব ভুলে গেছি।

দুজনের চোখে জলের ধারা বহিতে থাকে
বিরবির করে বলি “পলাশ ও বসন্ত এসে গেছে”।
হঠাৎ আমাকে ছেলে ও ভায়ের সামনে হাত ধরে টেনে বারান্দায় আনে।বাগানে পলাশ গাছে লালফুলে ছেয়ে গেছে তা দেখায়।।হঠাৎ জোড়া কোকিল ঝগড়া বা সোহাগ করতে করতে
কু হু করে ডেকে ওঠে।ষাট বছরে এসে নুতন বাবা ও মা পাব..বর পাব..ছেলে -বৌমা-নাতি।সত্যি গমগম পরিবেশ।
আকাশ বাতাস যেন বলছে “ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে”―আমার কপালে এত সুখ অপেক্ষা করছিল…ভাবতে থাকি।
বর্তমানে আমি ব‍্যাঙ্গালোর থাকি।ছেলে বৌমা ও নাতি আসে ঠাম্মা ও দাদুর নুতন সংসারে।।
বলতে দ্বিধা নেয় বুড়ো ও বুড়ি একে অপরকে খুশির রঙ মাখাতে ব‍্যস্ত।খুশির আনন্দে পলাশ গাছের তলে গুনগুন করে গান করি,যেন মনে হয় সেই পঁয়ত্রিশে ফিরে গেছি।পলাশ ও বসন্ত সবাই যেন আমাদের কে বাঁচিয়ে রাখার প্রতিশ্রুতি নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress