মনবাউল
আমার প্রিয়নদী সুবর্ণরেখার পরানকথা শোনাবোআজ! ছোটনাগপুরের মালভূমিতেযার চলা শুরু হয়ে ওড়িশার তালসারিতেশেষ সেই তটিনীর সাথে চলুন সফর শুরু করি॥
উৎস থেকে মোহনা পুরো যাত্রা পথ টাই পরান কথায় মোড়া!
ঝাড়খন্ডের রুক্ষ্ম পাথুরেমালভূমির মধ্যে দিয়ে বয়ে
চলা খরস্রোতা সুবর্ণরেখার তীরে ঘন জঙ্গল,,,,পলাশ,শিমূল,মহুয়া,বাঁশের !দিগন্ত বিস্তৃত মালভূমি,ছোট ডুংরি পাহাড়ের উঁচুনিচু ভূমি!
কখনো পান্না সবুজ,কখনো ধূসর॥আর বসন্তে???
ফুলের আগুনে সারা জঙ্গলপাহাড় ভেসে যেতে থাকে!শাল,মহুয়ার সুবাসে মাতোয়ারা হয় প্রকৃতি!
আদিবাসী মাদলের দ্রিম,দ্রিমবোলে,আড়বাঁশিরও সারিন্দার মধুরধ্বনিতে মুখরিত হয় সুবর্ণরেখার তীর॥মানভূম,ধলভূমবিভিন্ন গড় বা দুর্গ আদিবাসীদের শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছে!নদীর খরস্রোত ওপাহারা দিয়েছে॥নদীর কূলের মাটির নিচেখনিজেরভান্ডার॥লৌহআকর,তামা,অভ্র,,,ধনী করে তুলেছে!আর রয়েছে বনজ সম্পদ॥বিভিন্ন জীবজন্তুরআবাস এই বনভূমি,,,,,পাখীর কলতানে মুখরিত॥নদীর বালিতে নাকি সোনার কনা পাওয়া যায় তাই নাম সুবর্ণরেখা॥কত নদী এসে মিশেছেএতে॥ডুলুং,কেলেঘাই ,খড়কাই সব
সুন্দর সুন্দর নদী!জঙ্গলে হাতির পাল জলকেলি
করে!রাতে শোনা যায় বাঘের হুংকার॥জঙ্গল পাহাড়
সচকিত হয়ে ওঠে!হরিনের দল আসে জল খেতে॥
নদীকূলের সবুজ ঘাসে চরে বেড়ায় দল বেঁধে॥
বাঁদরের দল হুটোপুটি করে॥নদীর চরে পানকৌড়ি
বালিহাঁস আড্ডা জমায়॥ সন্ধ্যে নামলে চখাচখি
চলেযায় দুকূলে॥রাক্ষুসী বেলাররক্তরাগ গায়ে মেখে পশ্চিমে উড়ে যায় বলাকার সারি॥সন্ধ্যাতারার
উদয়ে নিশি টহলে বেরোয় পেঁচা দম্পতি॥
ঝাড়খন্ডের রুক্ষ্ম পাথুরে প্রকৃতি ছেড়ে সুবর্ণরেখা
এবার প্রবেশ করেছে পলল সমতল পশ্চিমবঙ্গে॥
পশ্চিমমেদিনী পুরের জঙ্গলমহলের আদরের দুলালি সে॥জঙ্গলমহলের প্রাণভ্রমরা সে! শাল,মহুয়া,পলাশের বনে তার কি অপরূপ বিস্তার॥
তাকে পূজো করে এখান কার শবর,লোধা,বীরহোড়,
কুর্মি,সাঁওতাল আদিবাসীরা॥
নদী এখানে ,,,”মা সুবনবুড়ী”॥নদীতে মাছ ধরে, নুড়ি,বালি চালান দিয়ে জীবন ধারন করে এরা॥
নদী এখানে অপরূপা,,,,প্রায় দেড় কিমি বিস্তৃত॥
মাঝে মাঝে চর পড়েছে॥দুপারেই দিগন্তবিস্তৃত সবুজের মেলা!ফসলে উথলে উঠছে ডালা॥
নদীতে মাছের শেষ নেই ,,,,গলদা চিংড়ি,পাবদা,চেলা,পুঁটি,খলসে তো আছেই! আর আছে বিখ্যাত ,,,”কালবোশ” মাছ॥
এই মাছ ধরতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসে এখানে॥নদী এখানে স্বর্ণপ্রসবিণী॥নদীর দু ধারে
কত না দেবদেউল,,,,,গোপীবল্লভপুর,,,শ্রীপাট গুপ্ত বৃন্দাবন, রামেশ্বর,তপোবন,বাল্মিকীআশ্রম॥
কতনা পরান কথা॥নদী নীরব দর্শক॥কতনা মানুষের আনাগোনা এই নদীর কূলে!
নদী যেন কথা বলছে দুপারের সাথে,,,,,”আধেক কথা দিনের বেলা, আধেক কথা রাতে॥”
যেখানে নদী চলেছে জঙ্গলের ভেতর দিয়ে সেখানে
রূপ আলাদা॥বন জ্যোৎ স্না সবুজ অন্ধকারে লুটোপুটি খায়॥নদীর বিরাট বিস্তার॥ মাঝে মাঝে চর! ঐ চর ডিঙিয়ে আসে দলমার দামাল ,,,,,,হাতিরপাল॥দল বেঁধে দুপাশের ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে,ঘরবাড়ি ভাঙে!আদিবাসীরা তবুও
হাতিঠাকুরের ক্ষতি করে না॥ এই শাশ্বত ভারতীয়
শিক্ষা॥
নদী এবার বাঁক নিয়েছে ডানে॥গভীর জঙ্গলের
মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে ওড়িশার দিকে॥
এই যাত্রা পথের দুতীরেঘন জঙ্গল ও চাষজমি॥
সবজি,তৈলবীজ সূর্যমুখী,সরষে রবি খন্দের প্রাচুর্যে
প্রকৃতি উথলে উঠেছে॥ নদী এবার ধীর গতিতে চলেছে সমুদ্র সঙ্গমে!,,,,,,,,ওড়িশার তালসারি,,,,,, সুবর্ণরেখা মিলেছে সাগরে॥ দিগন্তবিস্তৃত চর॥
চরের মাঝে ঝাউবন॥ আদিগন্ত বিস্তৃত জল॥
দিকচক্রবালে সুনীল জলধি॥ফেনার মুকুট শোভিত॥ধীর গতি সুবর্ণরেখা আত্মসমর্পণ করেছে
সাগরের বুকে॥ কি অপূর্ব দৃশ্য! মন ভরে যায়॥
ছোটনাগপুর মালভূমিতে যার চলার শুরু তার শেষ হয় এই সাগর সঙ্গমে॥শেষ হয় এক রূপকথার!এক নদীর পরানকথার॥