ভূতু ও ভূতনির দুষ্টুমি
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বিক্রমাদিত্য ফিরে গেলেন সেই গাছের কাছে।গাছ থেকে শব নামিয়ে কাঁধে ফেলে যথারীতি তিনি নীরবে শ্মশানের দিকে হাঁটতে লাগলেন।তখন শবস্হিত বেতাল বলল,”রাজন, তোমার অবস্হা দেখে আমার বড্ড করুণা হচ্ছে।জীবন পথে অনেক সময় অনেকেই অজান্তেই ভুল করে বসে। হয়তো তিনি কোনো ভুল করেন নি।আর অজান্তেই ভুল হলে আক্ষেপ থাকলে ভগবান ও ভুল বলেন না।
এক বুড়ি দিদা ও তার একমাত্র নাতনির গল্প শুনলে রাজন তোমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।তেমার পথ চলার পরিশ্রম ,মনখারাপ ও লাঘব হবে”।বলে বেতাল কাহিনী শুরু করে দেয়।
আজ থেকে অনেক বছর আগে নয়নপুর গ্রামে এক বিধবা বুড়িও তার একমাত্র সোমত্ত নাতনি থাকত।নাতনি এত সুন্দরী বাইরে বার করতে দিদা ভয় পেত।ষোল বছরের মেয়ে বেশ ডাগর চেহারা।সংসারে দিদা আর নাতনি।মেয়ে ও জামাই ওলাওঠায় গত হয়েছে।স্বামীর যা টাকা ছিল সব প্রায় শেষ।ঘরের সামনে জমিতে চাষ করে ওই ফসল হাটে বেচে সংসার চালাত কোনোমতে। দিদা হাটবার গাছের লাউ শাক ও দুটি লাউ বেচতে নিয়ে যায়।একটি লাউ ছাড়া আর সব বিক্রি হয়ে যায়।বিক্রির পর দিদা ঝুড়ি মাথায় ফিরছিল হনহনিয়ে।বনে অশ্বত্থ গাছের ডালে বসেছিল ভূতু আর ভূতনি।ওরা এত দুষ্টু,যে যেত এই বন দিয়ে তাদের যত ফল আপেল,কলা,লেবু,শশা থাকত,সেখান থেকে তুলে টপাটপ খেত।আবার জমিয়ে রেখে দিত।ওরা বুড়িকে আসছে দেখে কি আছে দেখতে গেছে ।”একটি শুধু লাউ “।তখন ভূতু তার ভাগের সব ফল ঝুড়িতে দেয়।ওই দেখে ভূতনিও তাই করে।ভূতু আর ভূতনি বুড়ির পিছন পিছন বুড়ির বাড়ি অবধি যায়।বুড়ি সারা রাস্তা বকবক করে, “ঝুড়িটা এত ভাড়ি লাগছে কেন”?
আমি নিশ্চয় খুব বুড়ি হয়েছি।বাড়ির সামনে হাঁপাতে হাঁপাতে নাতনিকে ডাকে।আর বলে আমি এতোটা রাস্তা একটা লাউ বয়ে আনতে যা কষ্ট হয়েছে বুঝলি নাতনি।
নাতনি বলে দিদা এত ফল কিনতে গেলে কেন?ফল কোথায় কিনলাম?
ভূতুরা চুপ করে রগড় দেখছিল।দিদা কাঁদতে কাঁদতে বলে লোকেরা আমায় চোর বলবে।বিশ্বাস কর নাতনি আমি চুরি করি নি।তাহলে দিদা উড়ে এলো??
এত কান্নাকাটি দেখে ভূতুরা বলে আঁমরা দিঁয়েছি।তুঁমি চুঁরি কঁরো নিঁ।খেঁয়ে নাঁও।রোঁজ দেঁব।তোঁমরা আঁমাদের দেঁখতে পাঁবে নাঁ।
কাহিনীর এইটুকু শুনিয়ে বেতাল বলে বলো রাজন বুড়ির কি ওই ফল খাওয়া উচিৎ ছিল।যদি উত্তর জানা সত্বেও না দাও উত্তর তো তারমার মাথা ফেটে চৌচির হয়ে যাবে।
বিক্রমাদিত্য বলেন অভাবের সংসার,চুরি তো করেন নি।কেউ যদি কাউর অসহায়তা দেখে সাহায্য করে।বুড়ি তো জানে না তারা চুরি করে দিচ্ছে।কি একটা কথা আছে না ,”ফল খাচ্ছ খাও,গাছের খোঁজে কি?”
বেতাল বলে রাজন ঠিক উত্তর দিয়েছেন।
রাজা বিক্রমাদিত্য এই ভাবে মুখ খোলার সাথে সাথেই বেতাল শব নিয়ে সেই গাছে ফিরে যায়।