ভিখিরি
“যশোরানি কয়, গোপাল আমার …..”
এই মুখরা টুকুই জানি , মানে– মনে আছে, খুব ভোর ও রাত সন্ধিক্ষণের ঊষাকালে, উঠোনে একতারা বাজিয়ে খোলা অ-রেওয়াজী গলায় একজন মাঝে মাঝে গান গেয়ে চলে যেতেন ।
শহরের সব বাড়িগুলিতেই দুটো উঠোন বা প্রাঙ্গন , রাস্তার ধারের লোহার রেলিং গেট হুরকাতে নেই তালা, ভেতর উঠোনে ঢুকতে টিনের দরজা সহজেই আলতরাফ খোলা যায় দুপাশে থেকেই। ঢুকতে বাঁধা কোথায় ?
শুধু চারধারের ঘর দুয়ার বন্ধ বাইরে বা ভেতরে । একটু বেলাতেই সে আবার আসত “সিধে” নিতে, গেরুয়া বসন , গেরুয়া ঝুলি, হাতে একতারা । গ্লাস করে আধসের মতো চাল একটু তেল একটা বেগুন কি আলু আর মরশুমি ফল, গাছের।
হাসিমুখে গ্রহণ, কম বেশিতে নেই কোন প্রকাশ। মাসে এক- দুদিন এক এক পাড়াতে। ওটাই তার জীবিকা। কিন্তু সবাই বলে ভিখিরি ! এখানে একটু বলে নি কাকে বলে ভিখিরি এক কথায় যিনি ভিক্ষে চান মানে at gratis অর্থাৎ বিনিময়ে তিনি কিছু দেবেন না, বলা হয় ভিক্ষাবৃত্তি ।
কিন্তু জীবিকা ত গ্রাসাচ্ছাদন , তার জন্য এক অর্থোপার্জন, বিনিময়ে কিছু দিয়ে। তাহলে ভিক্ষে ত জীবিকা হতে পারে না, কিন্তু যখন বাউল বা কেউ, কিছু পরিবেশন করে বিনিময়ে চাইছেন তা তখন নিশ্চয়ই জীবিকা হবে ভিক্ষে নয়।
যখন টিকিট কেটে আমরা স্বেচ্ছায় বিনোদনে অংশ গ্রহণ করি ভাল মন্দ সমালোচনা করি, এও কি তাই নয়? হ্যাঁ, এখানে টিকিট আগে কাটতে হয় না বটে। অথচ পথে ঘাটে , ট্রেনে বাসে, মন্দিরে বাড়িতে
তারা গান শুনিয়ে হাত পাতলেই , বলি ভিখিরি এরা। বিনোদন বিক্রি ত অন্যায় নয়। বরং এ ক্ষেত্রে সুবিধা আছে ভাল না লাগলে পয়সা না দিলেও কেউ জোর করবে না।
এখনও ছোট বেলার সেই গান —যেন স্বপ্নিল আবেগে, অজস্র পাখিদের কাকলি সোহাগে আর রাঙা হয়ে আসা পুবের আশমানে— ভরা আছে স্মৃতি ঘড়া।