ভালোবাসার সরজমিন
লালমাটিয়া পথটা মাঠের বুক চিরে এয়োতির সিঁথির মত পশ্চিম দিগন্তের দিকেবেঁকে গেছে। ওটা ধরে এগোলে মাঠের ভেতরে ঝোরার পাশ দিয়ে সোজা মিলিটারি রোডে গিয়ে ওঠা যায়। ওই রাস্তাটা সালুয়াও কলাইকুন্ডা কে যোগ করেছে তাই নাম মিলিটারি রোড। রাস্তাটার দু’পাশে রাখা জঙ্গল। জনবসতি বিরল ফাঁকা টাঁড জমি আর জঙ্গলের মিলিজুলি সরজমিন। আজ থেকে প্রায় তিরিশ বছর আগের কথা। এই রাস্তাটার আদিম সৌন্দর্য দেখলে মন ভরে যেত। মাসে একবার হলেও আসতাম এখানে। রাস্তাটা নিরাপদ ছিল না। চোর ডাকাতের উপদ্রব ছিল। জনবসতি বিরল এলাকা শুনতাম ছিনতাই হতো খুব। রাস্তার দু’পাশের জমি খোয়াই এর মত উঁচু-নিচু। জঙ্গলের বুক চিরে কুমারী সিঁথির মতো শঁুডি পথটা চলে গেছে নিরুদ্দেশে। রাস্তাটা থেকে জঙ্গল পেরিয়ে গ্রামে যেতে হলে প্রায় এক কিলোমিটার পথ পেরোতে হয়। গেৱাশুলি গ্রামটার নাম। রাস্তার পাশের জঙ্গল শাল মহুয়া পলাশের হরজাই জঙ্গল। একপাশে বিরাট একটা বঁাধ। সবাই বলে রানীসায়র। কোন রানীর নামে কে জানে। বাঁধের জলে মুখ দেখে শালবন, রাতে চাঁদ নামে জলের বুকে জলকেলি করতে। বাঁধ পাডের ভাঙা দেব দেউলের চূড়ায় বসে পেঁচা দম্পতি। দূর থেকে ভেসে আসা মাদলের ড্রিম ড্রিম বোলে মন উদাস হয়ে যায়। ফাল্গুন-চৈত্রে শাল মঞ্জুরির মৃদু সুবাসে জঙ্গল যেন মোহময়ী হয়ে ওঠে। কতনা পাখপাখালি কীটপতঙ্গ প্রজাপতি ; প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর প্রকৃতি। নিস্তব্ধ দুপুরে সুনীল আকাশে চক্কর কাটে গেরোবাজ। চিল তীক্ষ্ণ স্বরে দুপুর কে চমকে দিয়ে শিরিষ গাছ এ এসে বসে। বাঁধের জলে কলমি লতা ,,,,,,দামে কাঁপন লাগে। রানী ফড়িংয়ের ডানা তির তির করে কাঁপতে থাকে জল মাকড়সা আলপনা আঁকে জলে শাপলা দলে জলপিপি পা পা করে ঘুরে বেড়ায়। লাল নীল শালুকে সারা বাঁধ যেন রূপসী হয়ে ওঠে।বাঁধের ভাঙ্গা ঘাটের পাথরে শ্যাওলা জমে—- সময়ের। আকাশ যখন কাল বাদল-মেঘে সেজে ওঠে—- রিমঝিম জল নূপুরের ধ্বনি বাঁধের শাপলা শালুকের বুকে অনুরণন তোলে। ডানা ভেজা পানি কাক– বকের ঝাঁক পারের সিরিষ শেওড়া— বাঁশ গাছের ডালে বসে ঝিমুতে থাকে। আবছা বৃষ্টির জল চুরি ওড়নায় ফাঁকা পড়ে সরজমিন—- জল জঙ্গল অপেক্ষায় থাকে— আগামীর।