Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

আঁকা শেখানোর সাথে সাথে চলে গান শেখানো। এ করেই মা দাদা দিদি বৌদির সাথে থাকা। না বিয়ে হয় নি। কারন নারী সুলভ আচরণের পুরুষ কে কেউ বিয়ে করতে চায় না। যতীন এর রং ঢং টা মেয়েদের মত। চলনে বলনে তার প্রকাশ। ছোটোবেলা থেকে মা আগলে রেখেছিল যতীন কে। খুব ভীতু ছিল। মা বলে তুই তো পুরুষ মানুষ, ভীতু হবি কেন? আরশোলা দেখলে ভয়ে ছুটোছুটি, টিকটিক দেখলে বাড়ি হুলু স্থুলু বাঁধাতো। বড় রা সকলেই চিৎকার, কি রে তুই না পুরুষ মানুষ। কেউ কেউ বলত তোর হরমোন এর দোষ। মেয়ে দের হরমোন টা তোর বেশী।

মা বলত, যতীন তুমি যে পোষাক পরবে সেই রূপ ই ধরবে। পৃথিবী টা খুব কঠিন। বেঁচে থাকা, টিকে থাকা মুশকিল। এক নৌকা তে পা দিয়ে চলতে হবে। তুমি যে পোষাক পরবে তার রংয়ের মত হয়ে চলবে। তাকে মনের মধ্যে যতন করতে হবে। যদি তুমি মেয়ের পোষাক পর তাহলে মেয়েদের মত চলতে হবে। বাথরুমে গেলে, মেয়ে দের মতো বোসে হিসু করতে হবে, পারবে তো।

যতীন ভাবে, মা ঠিক বলেছে। সে ছেলেদের বেশ ই পরবে। কারণ তার গঠন তো পুরো ছেলেদের শুধু কথা বলার সময় মেয়েলি সুলভ কথা বার্তা,’ যাঃ ভাল লাগে না, এ বাবা, তাই নাকি। ও মা কি বলে’ এগুলো আসে। আর মেয়েদের মত ঢং। এগুলো চেস্টা করবে জীবন থেকে যতটা সম্ভব কেটে ফেলতে। মা আর একটা জিনিস যতীনের জীবনে, গেথে দিল। যোগা, জিম আর ক্যারাটের অনুশীলন। সাথে সাথে মা এর ও চলে অনুশীলন। মানে যতীন কে চোখে চোখে রাখা। মা বলে, ভবিষ্যতে এই তিনটে জিনিস খুব কাজে দেবে। তুমি যে পুরুষ বাইরের চেহারা তে যেন সেটা মনে হয়। মেডিটেশন কর, তোমাকে ভিতর থেকে শক্ত করবে। তুমি তোমার ডিশিসন নিজেই নিতে পারবে। কারো কে দরকার হবে না। মা তো চিরদিন বেঁচে থাকবে না। যতীন মায়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল।

গুরুজির কাছে নাড়া বেধেছে যতীন। ভোর হলেই তানপুরা নিয়ে সাধনা চলে। যোগা মেডিটেশন আর আঁকা শেখা সমান তালে চলে। এত কিছু করে ও ভয় যায় না। দুপুর বেলা সকলে ঘুমালে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে কাজল, লিপস্টিক এগুলো হাতছানি দেয়, মা বলে, যতীন আমি যখন থাকবো না তখন কে তোকে বাচাবে, নিজেকে শক্ত কর। সবসময় মনে করবি, পোষাক, তোমার আমি। সেই ঢং য়ে রাঙাবি নিজেকে। ভয় কে জয় করবি। গাইবি রবী ঠাকুরের গান। “আমি ভয় করব না ভয় করব না”। দিদিদের শাড়ি নিয়ে নাড়া চাড়া করে, লিপস্টিক কাজল সেগুলো ও নাড়া চাড়া করে কিন্তু পরে না। ভয় টা মাথায় চড়ে বসে। পৃথিবী বড় কঠিন, তোমার সূক্ষ্ম অনুভূতি গুলো নিয়ে খেলবে আর তুমি রক্তাক্ত হবে। ক্যারাটে করে আর জিম করে, যতীন এখন অনেকটা শক্ত হয়েছে। মনটা কিন্তু মেয়েদের মত নরম। মা বলে যতীন তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ যদি তোমার শরীর টাকে দখল করতে চায় তাহলে পিছু পা হবে না। ক্যারাটের সাহায্য নেবে, দমন করবে তাকে।
যতীন এখন আঁকা শেখায়, গান শেখায়, ক্যারাটের স্কুল খুলেছে। অনেক স্টুডেন্ট আসে শিখতে, সকলে যতীন কে ভালো বাসে কিন্তু খুব হাসাহাসি করে। মেয়েলি সুলভ আচরণের জন্য। গা সওয়া হয়ে গেছে। হরমোন থেরাপি করে অনেকটা কমেছে তবু প্রকাশ হয়ে যায়। মায়ের খুব ইচ্ছে, যতীন এবার বিয়ে করুক, সব জানিয়ে ই একটা গরীব ঘরের বা প্রতিবন্ধী বা যার মাথার ওপর কেউ নেই তাকে অন্তত বিয়ে করুক। যতীন এর ভয় টা খুব তীব্র হল। যোগা, ব্যায়াম, মেডিটেশন ওষুধ চলল বেশ কয়েক দিন। মা বলে, তবে থাক। মন যেটা চায় কর যতীন, ছেলেবেলা থেকে তোর ভালোর জন্য ছকেবেঁধে দিয়েছিলাম। এখন তুই তোর ভালো মন্দ তুই বুঝে নে।

যতীন বিয়ে করেনি। অনেক স্টুডেন্ট কে মানুষ করল। যোগ ব্যায়াম মেডিটেশন ক্যারাটে নিয়ে ভালো কাটছে। কোনো কোনো দিন অলস দুপুরে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দিদির লিপস্টিক কাজল ঘাটার সময় পেছন থেকে নেড়ি, দিদির মেয়ের চিৎকার, মা দেখো মামু আবার তোমার লিপস্টিকে হাত দিয়েছে, পাকা বুড়ি। মা তার পরবর্তী জেনারেশন কে রেডি করে রেখে গেছে। শুধু শুধু ভয় করবে না। হ্যা, পৈতৃক বাড়ি টা দুই ভাইবোনের। একসাথে ই থাকা। রবী ঠাকুরের গানটা বরং গাই। মা শিখিয়েছিল কোন ছোটোবেলায় – – “আমি ভয় করব না ভয় করব না।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress