Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বৈষ্ণবকবিতা || Baishnabkabita by Rabindranath Tagore

বৈষ্ণবকবিতা || Baishnabkabita by Rabindranath Tagore

শুধু বৈকুণ্ঠের তরে বৈষ্ণবের গান!
পূর্বরাগ , অনুরাগ , মান-অভিমান ,
অভিসার , প্রেমলীলা , বিরহ-মিলন ,
বৃন্দাবনগাথা — এই প্রণয়-স্বপন
শ্রাবণের শর্বরীতে কালিন্দীর কূলে ,
চারি চক্ষে চেয়ে দেখা কদম্বের মূলে
শরমে সম্ভ্রমে — এ কি শুধু দেবতার!
এ সংগীতরসধারা নহে মিটাবার
দীন মর্তবাসী এই নরনারীদের
প্রতিরজনীর আর প্রতিদিবসের
তপ্ত প্রেমতৃষা ?

এ গীত-উৎসব-মাঝে
শুধু তিনি আর ভক্ত নির্জনে বিরাজে ;
দাঁড়ায়ে বাহির-দ্বারে মোরা নরনারী
উৎসুক শ্রবণ পাতি শুনি যদি তারি
দুয়েকটি তান — দূর হতে তাই শুনে
তরুণ বসন্তে যদি নবীন ফাল্গুনে
অন্তর পুলকি উঠে , শুনি সেই সুর
সহসা দেখিতে পাই দ্বিগুণ মধুর
আমাদের ধরা — মধুময় হয়ে উঠে
আমাদের বনচ্ছায়ে যে নদীটি ছুটে ,
মোদের কুটির-প্রান্তে যে-কদম্ব ফুটে
বরষার দিনে — সেই প্রেমাতুর তানে
যদি ফিরে চেয়ে দেখি মোর পার্শ্ব-পানে
ধরি মোর বাম বাহু রয়েছে দাঁড়ায়ে
ধরার সঙ্গিনী মোর , হৃদয় বাড়ায়ে
মোর দিকে , বহি নিজ মৌন ভালোবাসা ,
ওই গানে যদি বা সে পায় নিজ ভাষা ,
যদি তার মুখে ফুটে পূর্ণ প্রেমজ্যোতি —
তোমার কি তাঁর , বন্ধু , তাহে কার ক্ষতি ?

সত্য করে কহ মোরে হে বৈষ্ণব কবি ,
কোথা তুমি পেয়েছিলে এই প্রেমচ্ছবি ,
কোথা তুমি শিখেছিলে এই প্রেমগান
বিরহ-তাপিত । হেরি কাহার নয়ান ,
রাধিকার অশ্রু-আঁখি পড়েছিল মনে ?
বিজন বসন্তরাতে মিলনশয়নে
কে তোমারে বেঁধেছিল দুটি বাহুডোরে ,
আপনার হৃদয়ের অগাধ সাগরে
রেখেছিল মগ্ন করি! এত প্রেমকথা —
রাধিকার চিত্তদীর্ণ তীব্র ব্যাকুলতা
চুরি করি লইয়াছ কার মুখ , কার
আঁখি হতে! আজ তার নাহি অধিকার
সে সংগীতে! তারি নারীহৃদয়-সঞ্চিত
তার ভাষা হতে তারে করিবে বঞ্চিত
চিরদিন!

আমাদেরি কুটির-কাননে
ফুটে পুষ্প , কেহ দেয় দেবতা-চরণে ,
কেহ রাখে প্রিয়জন-তরে — তাহে তাঁর
নাহি অসন্তোষ । এই প্রেমগীতি হার
গাঁথা হয় নরনারী-মিলনমেলায় ,
কেহ দেয় তাঁরে , কেহ বঁধুর গলায় ।
দেবতারে যাহা দিতে পারি , দিই তাই
প্রিয়জনে — প্রিয়জনে যাহা দিতে পাই ,
তাই দিই দেবতারে ; আর পাব কোথা!
দেবতারে প্রিয় করি , প্রিয়েরে দেবতা ।

বৈষ্ণব কবির গাঁথা প্রেম-উপহার
চলিয়াছে নিশিদিন কত ভারে ভার
বৈকুণ্ঠের পথে । মধ্যপথে নরনারী
অক্ষয় সে সুধারাশি করি কাড়াকাড়ি
লইতেছে আপনার প্রিয়গৃহতরে
যথাসাধ্য যে যাহার ; যুগে যুগান্তরে
চিরদিন পৃথিবীতে যুবকযুবতী —
নরনারী এমনি চঞ্চল মতিগতি ।

দুই পক্ষে মিলে একেবারে আত্মহারা
অবোধ অজ্ঞান । সৌন্দর্যের দস্যু তারা
লুটেপুটে নিতে চায় সব । এত গীতি ,
এত ছন্দ , এত ভাবে উচ্ছ্বাসিত প্রীতি ,
এত মধুরতা দ্বারের সম্মুখ দিয়া
বহে যায় — তাই তারা পড়েছে আসিয়া
সবে মিলি কলরবে সেই সুধাস্রোতে ।
সমুদ্রবাহিনী সেই প্রেমধারা হতে
কলস ভরিয়া তারা লয়ে যায় তীরে
বিচার না করি কিছু , আপন কুটিরে
আপনার তরে । তুমি মিছে ধর দোষ ,
সে সাধু পণ্ডিত , মিছে করিতেছ রোষ ।
যাঁর ধন তিনি ওই অপার সন্তোষে
অসীম স্নেহের হাসি হাসিছেন বসে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress