Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বুদ্ধিমান ঘোড়া আর বোকা চোর || Adrish Bardhan

বুদ্ধিমান ঘোড়া আর বোকা চোর || Adrish Bardhan

বুদ্ধিমান ঘোড়া আর বোকা চোর – শার্লক হোমস (Sherlock Holmes)

স্যার আর্থার কোনান ডয়ালের গল্প নিয়ে গোয়েন্দা ধাঁধা
বুদ্ধিমান ঘোড়া আর বোকা চোর। শার্লক হোমস

চলন্ত ট্রেনে বসে ঘটনাটার আদ্যোপান্ত ওয়াটসনকে বলল হোমস। ভারী রহস্যজনক ব্যাপার। ডার্টমুর জায়গাটা যেমন ফাঁকা তেমনি নিরিবিলি। দু-চারটে স্বাস্থ্যনিবাস আছে স্বাস্থ্যকামীদের জন্যে। সিম্পসন বলে একটা লোক প্রায় আসত সেখানে। খুনের দিন এসেছিল সিলভার বেজ যে আস্তাবলে আছে, সেইখানে। তখন সন্ধে হতে চলেছে। মাংসের বাটি হাতে ঝি আসছে ট্রেনারের বাড়ি থেকে হান্টার ছোকরার জন্যে। রাত্রে আস্তাবল পাহারা দেবে হান্টার–খাবেও ওইখানে। এমন সময়ে সিম্পসন পাকড়াও করল ছুঁড়িকে। হাতে মাথামোটা ভারী লাঠি। মিঠে-মিঠে বুলি ছেড়ে হাতে একটা দশ পাউন্ডের নোটও গুঁজে দিতে গেল। ভড়কে গিয়ে ঝি গিয়ে বলে দিল হান্টারকে। সিম্পসন ততক্ষণে কাছে এসে গেছে। হান্টারকেও ঘুস দিয়ে জানতে চাইল সিলভার বেজ সম্বন্ধে খবরাখবর।

তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল হান্টার। রেসের আগে এরকম ঘটনা আকছার ঘটে। তাই তবে রে বলেই দৌড়ল কুকুর লেলিয়ে দেওয়ার জন্যে। ঝি মেয়েটিও ভো দৌড় দিল বাড়ির দিকে। যেতে-যেতে দেখল জানলা দিয়ে ভেতরে মুণ্ড বাড়িয়ে রয়েছে সিম্পসন। হান্টার অবশ্য কুকুর নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখল লোকটা ভেগে পড়েছে।

ট্রেনারের নাম স্ট্রেকার। খুব নাম আছে। ঝিয়ের মুখে সব শুনে অস্থির হলেন ভদ্রলোক। রাত একটায় বর্ষাতি কাঁধে বেরিয়ে পড়লেন আস্তাবলের দিকে। বউকে বলে গেলেন মন চঞ্চল হয়ে আছে ঘোড়াদের জন্যে। একটু দেখে আসা যাক।

সেই হল তাঁর কালযাত্রা। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেও মিসেস স্ট্রেকার বোঝেননি তিনি বিধবা হয়ে গেছেন। আস্তাবলে গেলেন স্বামীর খোঁজে। গিয়ে দেখেন তাজ্জব কাণ্ড। হান্টার ছোঁড়া বেহুঁশ। মাচায় শুয়ে নাক ডাকাচ্ছে আরও দুটো ছোঁড়া। আস্তাবলের দরজা খোলা। সিলভার বেজ উধাও।

বেশ খানিকটা দূরে পাওয়া গেল গাছে ঝুলন্ত বর্ষাতি। একটু তফাতে মুখ গুঁজড়ে পড়ে স্ট্রেকার। খুলি চূর্ণ কঠিন আঘাতে। হাতে একটা রক্তমাখা তীক্ষ্ণ ছুরি। বেশ খানিকটা কাটা দাগ। পাশে পড়ে সিম্পসনের পরিত্যক্ত গলাবন্ধ–তাতেও রক্ত লেগে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে আরও কয়েকটা অদ্ভুত প্রশ্ন করল হোমস। স্ট্রেকারের হাতের ছুরিটাকে ডাক্তারি ভাষায় ছানিকাটা ছুরি বলে। খুব দামি আর খুব সূক্ষ্ম ধারালো ফলা। কিন্তু ফলা মোড়া যায় না। পকেটে নিয়ে যাওয়া যায় না। তা সত্ত্বেও স্ট্রেকার ছুরি নিয়ে দৌড়েছিলেন। তাড়াতাড়িতে নাকি টেবিল থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন–বললেন তার বিধবা বউ।

স্ট্রেকারের পকেটে পাওয়া গিয়েছিল মোমবাতি, দেশলাই আর কুড়ি গিনি দামের একটা মেয়েদের জামার ক্যাশমেমো। কুড়ি গিনি দামের জামা কি সাধারণ বউ-ঝি পরে? মিসেস স্ট্রেকারকে আচমকা শুধোল হোমস, অমুক পার্টিতে একটা ঝলমলে দামি পোশাক পরে আপনি গিয়েছিলেন না?

আজ্ঞে না, সাফ জবাব দিলেন স্ট্রেকার গৃহিণী। আপনি আর কাউকে দেখেছেন! কর্নেল রস হতাশ হলেন হোমসের পাগলাটে কথাবার্তা আর কাদার মধ্যে মুখ ঘষটানো দেখে। হোমস কিন্তু গ্রাহ্য করল না। বলল, আমি একটু বেড়িয়ে আসি। নমস্কার।

বলে ওয়াটসনকে নিয়ে পা বাড়াল জলার ভেতর দিকে। যেতে যেতে বললে, বেদেরা ঘোড়া লুকোয়নি। ওরা পুলিশকেও এড়িয়ে চলে। ফাঁকা জায়গাতেও ঘোড়া ঘুরছে না। ঘোড়ারা দল বেঁধে থাকে। কাজেই হয় যাবে কিংস পাইল্যান্ডে নয় কেপলটনে। কিংস পাইল্যান্ডে ঘোড়া যখন ফেরেনি–তখন কেপলটনেই আছে।–ওই দেখো ঘোড়ার পায়ের ছাপ।

আসবার সময়ে সিলভার ব্লেজ-য়ের পায়ের নাল সঙ্গে এনেছিল হোমস। পায়ের ছাপের সঙ্গে তা মিলে গেল। পাশেই দেখা গেল থ্যাবড়ামুখো একসারি জুতোর ছাপ। ঘোড়া আর মানুষে কিংস পাইল্যান্ডের দিকে কিছুটা এসে ফের ফিরেছে কেপলটনের দিকে।

চিহ্ন অনুসরণ করে একটা আস্তাবলের সামনে পৌঁছল দুজনে। পাহারাদার ছোকরা তেড়ে এল ওদের দেখে। তারপরেই বেরিয়ে এল আস্তাবলের মালিক। সে আরও রুক্ষ। এই মারে কি সেই মারে।

কিন্তু শার্লক হোমস কি মন্ত্র জানে? চোয়াড়ে লোকটার কানে-কানে কী মন্ত্র বলতেই সাপের ফণা নেমে এল যেন। কুকুরের মতো কেঁউ-কেঁউ করে ঘুরতে লাগল হোমসের পেছন পেছন। উলটে ধমক দিয়ে হোমস-ই বলে গেল রেসের দিন ঘোড়া যেন হাজির থাকে।

ফেরার পথে হোমস বললে, ওয়াটসন, লোকটার পায়ে থ্যাবড়া জুতো লক্ষ করেছ? কর্নেল রসের কাছে গিয়ে বললে, আমরা চললাম। আপনার ঘোড়া রেসে দৌড়োবে।

কর্নেল তাচ্ছিল্যের সঙ্গে চেয়ে রইলেন। বেরোনোর পথে ভেড়ার পাল দেখে থামল হোমস। ছোকরাটাকে ডেকে জিগ্যেস করলে, দিন কয়েকের মধ্যে তোমার ভেড়াদের অসুখ-বিসুখ করেনি? অবাক হয়ে ছোকরা বললে, করেছে বইকি। তিনটে ভেড়া খুঁড়িয়ে চলছে। শুনে ভীষণ খুশি হল হোমস। গ্রেগরিকে ডেকে বললে, বৎস, ভেড়াদের অদ্ভুত অসুখটা নিয়ে তলিয়ে ভেবো।

আর কিছু উপদেশ দেবেন? গ্রেগরি বুঝল হোমস রহস্যের কিনারা করে ফেলেছে।

হোমস বললে, কুকুরটার অদ্ভুত আচরণ নিয়েও ভেবে দেখো।

কুকুর! সে তো রাতে চেঁচায়নি।

সেইটাই তো অদ্ভুত ব্যাপার!

নির্দিষ্ট দিনে একটা অন্য ঘোড়া সিলভার ব্লেজ-য়ের জায়গায় দৌড়ে বাজি জিতল। অন্য ঘোড়া মনে হল এই কারণে যে সিলভার ব্লেজ-য়ের যেখানে-যেখানে সাদা দাগ থাকা উচিত সেখানে তা নেই।

হোমস কিন্তু বললে কর্নেল রসকে, মদ দিয়ে ধুয়ে দিন ওই জায়গাগুলো। সাদা দাগ বেরিয়ে পড়বে। ঘোড়া যে লুকিয়ে রেখেছিল। সে পাকা জোচ্চোর। ঘোড়া ফিরিয়ে দিতে এসেও লুকিয়ে রেখেছিল ভোল পালটে মাঠে নামাবে বলে। ওই জন্যে সব আস্তাবল সার্চ করেও সিলভার ব্লেজ কে দেখতে পায়নি গ্রেগরি।

কিন্তু স্ট্রেকারকে খুন করল কে? শুধোলেন কর্নেল রস।

সে তো আমাদের সঙ্গেই রয়েছে।

খেপে গেলেন কর্নেল। হোমস তখন সিলভার ব্লেজয়ের পিঠ চাপড়ে বললেন, ভারী বুদ্ধিমান ঘোড়া। স্ট্রেকার মেয়েমানুষের খপ্পরে পড়েছিল। তাই বিশ গিনির পোশাক কিনে দিতে হত। দেনায় ডুবে টাকার লোভে ঠিক করেছিল সিলভার ব্লেজয়ের পেছনের টেন্ডন একটু চিড়ে দেবে গভীর রাতে। শুধু চোখে ধরা যাবে না। কিন্তু খোঁড়া হয়ে যাবে বিখ্যাত ঘোড়া। ওই জন্যেই ছানিকাটা ছুরি আর মোমবাতি রেখেছিল সঙ্গে। তাড়া খেয়ে ফেলে যাওয়া সিম্পসনের গলাবন্ধ তুলে নিয়েছিল ঘোড়ার পা বাঁধবে বলে। কিন্তু ঘোড়াদের অদ্ভুত অনুভূতি ওদের অনেক বিপদ থেকে বাঁচায়। মাঠের মধ্যে ঘোড়া নিয়ে গেল স্ট্রেকার–দাপাদাপিতে ছোকরাদের ঘুম ভেঙে যেতে পারে–এই ভয়ে। কিন্তু দুরভিসন্ধি আঁচ করে সিলভার ব্লেজ চাট মেরে খুলি গুঁড়িয়ে দিল ট্রেনারের–পড়বার সময়ে হাতের ছুরি আপনা থেকেই চিরে দিয়ে গেল দাবনা।

হে পাঠক হে পাঠিকা! আপনিও কম বুদ্ধিমান নন। বলুন দিকি হোমস কী করে বুঝল কুকর্মের হোতা স্ট্রেকার স্বয়ং?

গোয়েন্দা ধাঁধার সমাধান

এক–কুকুরটা রাতে চেঁচায়নি কেন? চেনা মানুষ দেখেছিল বলে।

দুই–ভেড়া তিনটের খুঁড়িয়ে চলা রোগ হল কেন…ওদের টেন্ডন চিরে দিয়ে স্ট্রেকার হাত পাকিয়েছিল বলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *