বিমান দুর্ঘটনা
আমেরিকার আলোহা এয়ারলাইন্সে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন অবসরপ্রাপ্ত স্টুয়ার্ট গ্ৰীল। এখন নাতির সাথে সময় কাটান। বারো বছরের নাতির ইচ্ছা বড় হয়ে পাইলট হবে। দাদু আলোহা এয়ারলাইন্সে ছিলেন, তাই নাতি লিউনিড দাদুর কাছে প্লেনের গল্প শোনানোর আবদার করতো। শুনতে চাইতো প্লেন ক্র্যাশের ঘটনা। কি করে পাইলট নিরাপদে অবতরণ করলো জানাতে আগ্ৰহ তার।
নাতির ইচ্ছাতেই স্টুয়ার্ট গ্ৰীল এক শিহরণ জাগানো গল্প শোনালেন।
উনিশশো অষ্টাশির চব্বিশে এপ্রিল দুপুর বেলা আলোহা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ‘হিলো ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে হনলুলু যাচ্ছিল। প্লেন যখন মাঝ আকাশে চব্বিশ হাজার ফুট উচ্চতায় তখন হঠাৎ যাত্রী কেবিনের একটা অংশের ছাদ উড়ে যায়। যাত্রীরা সকলেই সিট বেল্ট বেঁধে থাকায় বাতাসের তীব্র আকর্ষণ সত্বেও বেসামাল বিমান হতে হাওয়ায় উড়ে যাওয়া থেকে রেহাই পায়। কিন্তু এক ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট বেল্ট না পরে থাকায় নিমেষে হাওয়ার টানে প্লেনের বাইরে উড়ে যায়। এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে যাত্রীরা ভয়ে চিৎকার, কান্নাকাটি করতে থাকে।
পাইলট ও কো-পাইলটও বেল্ট বেঁধে থাকায় নিরাপদ থাকে এবং প্রচন্ড ঝাঁকুনিতে বেসামাল হয়ে যাওয়া বিমানকে শক্ত হাতে সামাল দেয়।
ঠাণ্ডা মাথায় তাড়াতাড়ি নিকটবর্তী বিমানবন্দরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু তোলপাড় হাওয়ার কারণে সম্ভব হয়না। এদিকে কো-পাইলট নিমেষে প্লেন দশ হাজার ফুট উচ্চতায় নামিয়ে আনে, যাতে হাওয়ার চাপ একটু কমে ও অক্সিজেন পাওয়া যায়।
ইতিমধ্যে অনেক যাত্রী ভয়ে এবং ঘন দুলুনিতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। কেউ কেউ মুখে অক্সিজেন মাস্ক চেপে ধরে রাখে।
কোনো ভাবেই কিছু ব্যবস্থা করতে না পেরে পাইলট প্লেন জলে নামাবে ঠিক করে। কিন্তু যাত্রীদের নিরাপত্তার চিন্তায় বিরত থাকে।
অবশেষে পাইলট, মাউইয়ে কাহুলুই বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে যোগাযোগ করতে পারে। সেখানে জরুরি অবতরণের অনুমতি পায়।
কাহুলুই বিমানবন্দরে সব বিমান ওঠানামা বন্ধ করে দিয়ে ইমারজেন্সি সবরকম ব্যবস্থা করে রাখা হয়।
বিমানবন্দরের অবতরণের সময় আরেক সমস্যা দেখা দেয়। বিমানের বাম দিকের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। তবু দক্ষ পাইলট সন্তর্পনে বিমান ল্যান্ড করায়।
অসুস্থ , আহত যাত্রীদের এয়ার এম্বুলেন্স হাসপাতালে নিয়ে যায়। সকলে পাইলটদের প্রশংসা করে। দুর্ঘটনায় একজন এয়ার হোস্টেস ছাড়া কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।