Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বিজয়া বিষাদ ও অন্য পূজা || Manisha Palmal

বিজয়া বিষাদ ও অন্য পূজা || Manisha Palmal

বিজয়া বিষাদ ও অন্য পূজা

নীলকণ্ঠের পাখায় ভর করে আসে বিষাদী বিজয়া দশমী! মন কেমনের চাদর জড়ানো হিমেল বাতাস যেন চোখের জলে ভেজা! বুকের বাঁ পাশটা ব্যাথায় শিউরে শিউরে উঠছে। ভোরের আলোতে ও বিষাদমাখা। শিশির ভেজা শিউলি সুবাসে মায়ের বিদায় বার্তা। ঢাকের বোলে ব্যথার লহর। অপরাজিতা পূজার সঙ্গে সঙ্গে বিসর্জনের বাজনা বেজে ওঠে। আবার প্রতীক্ষা একটি বছরের। অশ্রু ভেজা চোখে মায়ের প্রতিমা ও আবছা হয়ে আসে। মায়ের চোখেও বিষাদের ছায়া।

জঙ্গল লাগোয়া গ্রামের বায়েন পাড়ায় কিন্তু অন্য চিত্র। শহর থেকে পুজো শেষে ঢাকি ঢুলিরা গ্রামে ফিরবে এবার। শুরু হবে অন্য পূজার। নদীর চরে বেনাকাশের জঙ্গলে খেলাধুলায় মেতেছে কচিকাঁচা গুলো। নদীতীরের পাকুড় গাছ থেকে উড়ান টানলো একলা নীলকন্ঠ পাখি টা। নীলকন্ঠ পাখি টা দেখেই বাচ্চাগুলো উল্লাসে ফেটে পড়লো—- নীলকন্ঠ যে মায়ের কৈলাসে ফেরার খবর আনলো— এবার যে দাদু বাবা কাকারা ফিরবে শহর থেকে!
” ঢেং কুর কুর কাই নানা” —ঢাকের কাঁসির বোলের মত মুখের সমবেত তানে সারা নদী চর ভেসে গেল আনন্দের জোয়ারে।
” উল্লু বাদাড়ের ফুল
মা গেল রে কত দূর?”
সমবেত মিষ্টি সুরের ছড়া সারা মাঠ ঘাটের বিষাদ ভুলিয়ে দিল।
দূরে মাঠ ছাড়িয়ে দিগন্তের পানে চলা রাঙ্গামাটির পথের বাঁক থেকে ভেসে এলো ঢাকের বাদ্যি—– উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠলো বাচ্চাগুলো–” ওই যে আসছে!!!”
দূর থেকে সারিবদ্ধ ঢাকিদের আবছা অবয়ব গুলো স্পষ্ট হতে থাকে! ঢাকের আওয়াজ নিস্তব্ধ গ্রামে প্রাণচাঞ্চল্য জাগায়! ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসে নারী ও শিশুর দল। ঢাকিরা ঢাক বাজাতে বাজাতে সারা গ্রাম পরিক্রমা করে। যে যার বাড়ির দুয়ারে দাঁড়িয়ে ধূমুল দেয়। বাড়ির মেয়েরা বেরিয়ে এসে ঢাকও ঢাকি কে বরণ করে। শুরু হয় অন্য এক উৎসবের।
বায়েন পাডা খালি করে সবাই চলে গিয়েছিল আয় করতে। এখন বাচ্চাগুলোর নজর খালি বাবা কাকার পোটলা ঝুলির দিকে। পুজোর গল্পের চেয়ে শহর থেকে কি কি সম্পদ এনেছে তার দিকেই তাদের মন। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ— পোটলা থেকে বেরোয় রঙিন জামা প্যান্ট খেলনা বন্দুক আতশবাজি আর মন্ডা মিঠাই। সদ্য বিবাহিত তরুণ বাদ্যকরটি লুকিয়ে কিনে এনেছে রঙের শাড়ীর সাথে মানানসই চুডি ক্লিপ আর প্রসাধনী। সদ্য কিশোরী বধূটির শরমের লালিমায় যেন রাঙ্গা হয়ে ওঠে প্রকৃতি। অস্তরবির লালিমার সাথে একাকার হয়ে যায় এই শরমের লালিমা।
এইতো শাশ্বত জীবন রঙ্গ। নটরাজের জপমালার মোতির সাথে ঘুরে চলেছে আবহমানকাল ধরে— আনন্দমুখর বায়েন পাড়ায় মুখে ঢাক কাঁসির বোল তুলে নেচে বেড়ায় ভবিষ্যৎ বায়েনের দল—–” ঢেং কুর কুর কাই নানা
ঢেং কুর কুর কাই নানা—“!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *