Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাদলের প্রাপ্তি || Sankar Brahma

বাদলের প্রাপ্তি || Sankar Brahma

পুজোয় কোনবারই নতুন জামা হয় না বাদলের। সে জন্য তার মনে কোন দুঃখ নেই। পুরনো জামা পরেই সে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখে।
‘শিবানী’ হোটেলের মালিক কিশোরীলালের মতো বিরাট ভুড়ি নিয়ে গনেশ ঠাকুর দাঁড়িয়ে থাকে ছোট একটা ইঁদুরের পাশে। অবশ্য মুখটা কিশোরীলালের মতো না, হাতির মতোন দেখতে। দেখে তার খুব হাসি পায়। আর কার্তিক ঠাকুর পাড়ার অবনী কাকুর মতো
সবসময়ই ফিটফাট হয়ে ময়ূরের উপর বসে থাকে। অবনী কাকু অবশ্য বাইকে বসে হুস করে বাইক চালিয়ে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। আর
কার্তিক ঠাকুর শুধু ময়ূরের উপর বসেই কাটিয়ে দেয় সারাটা দিন , কোথাও উড়ে যায় না।
আর লক্ষ্মী সরস্বতী ঠাকুর দেখতে যেন ঠিক ওই দোতলা বাড়ির বিকাশ কাকুর মেয়ে দু’টির মতো। ওদের নাম অলি দি, আর কলি দি।অলি দি স্কুলে পড়ায়। আর কলি দি যেন কোন কলেজে পড়ে। আর বাদল পড়ে, প্রাইমারী স্কুলে ওই অলিদির কাছেই। অলিদির মনটা খুব ভাল। পড়া না পারলেও বাদলকে কখনই বকাঝকা করেন না, বরং পড়াটা বুঝিয়েদেন সহজ করে।আর তা মনেও থাকে বাদলের। এইজন্য অলিদিকে তার খুব ভাল লাগে। মিড ডে মিলের খাবার সবাই ঠিক মতো খাচ্ছে কীনা ঘুরে ঘুরে দেখেন অলিদি। বাদলের পাত খালি দেখলে, বাদলকে বলে, কিরে তোকে আর দু’হাতা ভাত দিতে বলব? বাদল বলে, বল। অলি দি, সরমা দিকে ডেকে বলে, ওরে সরমা এখানে দু’হাতা ভাত দিয়ে যা, বাদলকে। সরমা দি দু’হাত ভাত, আর সঙ্গে এক হাতা ডাল দিয়ে যায়। বাদল তাই দিয়ে ভাত মেখে, চেটে-পুটে তৃপ্তি করে খেয়ে পাত পরিস্কার করে দেয়। অলি দি তা দেখে বলে, পেট ভরেছে এবার? বাদল একগাল হেসে, মাথা কাৎ করে সম্মতি জানায়।
বাদলদের বাড়িতে রান্না হয় সেই রাতে একবার। বাদলের মা এক বাড়িতে রান্নার কাজ করে। সেখান থেকেই দুপুরের খাবার বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে বসেই খায়। বাদল তখন ঘরে থাকলে, বাদলকেও ভাত মেখে নিজের হাতে দু’চার গ্রাস খায়িয়ে দেয়। বাদলের তখন কঁি যে ভাল লাগে,বলার নয়। ভাতের স্বাদ যেন অমৃত মনেহয় তার কাছে।
বাবা করেন স্টেশনে হকারি। সেই সকালে চা-বিস্কুট খেয়ে বেরিয়ে যায়। সারাদিন পর বাড়ি ফেরে প্রায় সন্ধ্যারাতে। দুপুরে কোথাও খেয়ে নেয় কিছু, ভাত রুটি যেখানে যা পায়। রাতে বাবা বাড়ি ফিরে এলে, মা স্টোভে ভাত চাপিয়ে দেয়। সঙ্গে করে ডিমের ঝোল। কোন দিন করে আলু পটলের তরকারি, কোন কোন দিন মাছের ঝোলও করে।
বাড়ি বলতে তাদের একটা খুপড়ি চালার ঘর, বারো ঘর এক উঠোন। বাদলদের মতো আরও অনেক ভাড়াটে এখানে থাকে। এখানকার বাড়ির বউ মেয়েরা অনেকেই ঠিকে ঝিয়ের কাজ করে লোকের বাড়িতে। কেউ কেউ শাক-সব্জি বেচতে যায় বাজারে।
স্কুলে বাদলের দু-একজন বন্ধু আছে। তারা অবশ্য বাদলের মতো এতটা গরীর নয়। তারা অনেকে আবার স্কুলের মিড-মিলের খাবার খায় না। বাড়ি থেকে নিয়ে আসা খাবার টিফিনের সময় ক্লাসে বসে খায়।
পুজোয় তাদের সবার নতুন জামা-কাপড় হয়। কার ক’টা জামা হয়েছে, এই নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়। একদিন বুবাই জিজ্ঞাসা করলো, কিরে বাদল তোর এবার পুজোয় ক’টা নতুন জামা হলো? বাদল বোকার মতো হেসে বললো, একটাও না।
শুনে নিতাই বলল, বলিস কিরে, পুজোয় তোর কোন নতুন জামা হয়নি? তাহলে, ঠাকুর দেখবি কি করে?
বাদল অবাক হয়ে বলল, কেন? ঘরে যা জামা আছে তাই পরে।
শুনে বুবাই বললো, পুজোয় নতুন জামা পড়তে হয়, না হলে মা দুর্গা খুব রাগ করে।
– মা দুর্গা তবে কেন সকলকে নতুন জামা দেয় না? বাদলের এই প্রশ্ন শুনে, বুবাই নিতাই কেউই তার কোন উত্তর দিতে পারে না।

এবার পূজা কমিটির থেকে পাড়ার কয়েকজন দুস্থ গরীর পরিবারকে নতুন জামা-কাপড় দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। পঞ্চমীতে উদ্বোধনের দিন সকাল দশটায়, বাদল বাবার হাত ধরে তার সঙ্গে সেখানে গেছিলো। ওরা বাবাকে আর বাদলকে দু’টো সুন্দর ছাপ ছাপ দেওয়া ছিট-কাপড়ের জামা দিয়েছে। একটা বাদলের গায়ের মতো ছোট মাপের, আর অন্যটা ওর বাবার গায়ের বড় মাপের। নতুন জামা পেয়ে বাদলের মনে খুব আনন্দ হয়। কিন্তু সেটা শুধু তাদের নতুন জামা পাবার জন্য নয়। আনন্দ হয় এই ভেবে যে, যখন সে বুবাই আর নিতাইয়ের সঙ্গে সে কথা বলছিল, ঠাকুর সেসময় বোধহয় তার কথা শুনে ফেলেছে অন্তরাল থেকে। তাই সে বাবা আর তার জন্য নতুন জামার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। মাকে কাজের বাড়ি থেকে নতুন শাড়ি ব্লাউজ দিয়েছে।
নবমীর দিন সন্ধ্যার সময় নতুন জামা পরে বাদল, মা-বাবার সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বের হলো। মা বাবাও নতুন পোষাক পরেছে। খুব সুন্দর দেখতে লাগছে তাদের। অন্য সব দিনের থেকে একদম আলাদা। অনেক রাত পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে কত যে ঠাকুর দেখলো তারা , তার কোন হিসেব নেই। প্রথম প্রথম বাদল গুনতে শুরু করছিল। নয় দশটা গোনার পর আর গোনা ছেড়ে দিয়েছে। কী সুন্দর সব প্যান্ডেলের সাজ-সয্যা, ঠাকুরের মূর্তি, আলোকসজ্জা, দেখে বাদল মুগ্ধ হয়ে গেল। সঙ্গে মা বাবা থাকায়, সেই গুগ্ধতা যেন তার শরীর মন জুড়ে বিস্তার করছিল আনন্দ রস্মির মতো।

প্রায় শেষ রাতে বাড়ি ফিললো তারা।
বাদলের মনে তখন খুব আনন্দ। কিন্তু একটু পরেই মনটা তার বিষণ্ণতায় ভরে গেল। যখন দেখলো, একটি আবর্জনা কুড়ানী অনাথ ছেলে ডাষ্টবিন থেকে খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে। পরনে তার একটা নোংরা ইজের, গায়ে ছেঁড়া একটা জামা, ঠাকুর কি এসব দেখতে পায় না? ভাবল বাদল। তারপর ছেলেটার কাছে গিয়ে, তার নিজের জামাটা খুলে তার গায়ে খুব যত্ন করে পরিয়ে দিলো।
তা দেখে বাদলের মা চিৎকার করে বলে উঠলো, এটা তুই কী করলি বাদল?
বাদলের বাবা খুশির গলায় বললো, ঠিকই করেছে আমাদের বাদল। মানুষের মতো কাজ করেছে। তারপর খালি গায়ের বাদলকে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, ছোট একটি চুমু দিলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *