বন্ধুত্ব
প্রীতি, কয়েকদিন পড়ায় মন বসছে না কেন বল তো।বই খোলা থাকলেও একটা শব্দ আমি বলতে পারবো না।
– হ্যাঁ সৌমি, আমারও তাই।
– তুই কাউকে বলিস না।এমনকি আন্টিকেও না।মা জানতে পারলে মেরে ফেলবে।
– সবসময় গার্ড দেয়। তোর সাথেও মিশতে দেবে না।
– কয়েকদিন আগেও মা ছাড়া স্কুলে আসতে ইচ্ছে করত না ।কিন্তু আজকাল মনে হয় মা না এলে ভালো হতো।
– সৌমি তুই চিন্তা করিস না।
– প্রীতি, অর্ক দীপকেকে দেখেছিস এখন আর মায়ের সাথে আসে না। বন্ধুদের সাথে আসে আর আমার দিকে কেমন করে তাকায়।
– হ্যাঁ সৌমি ,আমি ভেবেছিলাম তোকে কথাটা বলব।
– ও তো কমার্সের ফার্স্ট বয়।
– আমাদের ব্যাচে ছিল অন্য সেকশনে পড়ত।
– খুব ভালো ছেলে। দারুণ গান করে।
– গত বছর ডিবেটে ফার্স্ট হয়েছিল।
– প্রীতি, ও তোকে হয়ত কিছু বলতে চায়। তুই কিছু ভাববি তাই আমি তোকে বলিনি।
– হ্যাঁ জানি। মা থাকতো বলে কোনদিন কিছু বলেনি। শুধু দূর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
– সৌমি কাকিমাকে যেন কিছু বলিস না। কাকিমা হয়তো অর্কদীপ এর মাকে খারাপ কিছু বলবে।
– না বলবো না। তবে পড়াশোনায় যে আমি খারাপ হয়ে যাচ্ছি সেটা মা ধরতে পারবে।
– আমাকে ভালো রেজাল্ট করতেই হবে প্রীতি। প্রতিষ্ঠিত হতে গেলে এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বারবার মনটা উদাস হয়ে যাচ্ছে। তাই খুব চিন্তায় রয়েছি। নিজেকে পরিবর্তন করে নিতে হবে।
– অত ভাবিস কেন সৌমি।
– প্রীতি আমার লক্ষ্য যে অনেক উঁচুতে উঠবো। তাই সময়টা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
– সামান্য একটু ব্যাপার তো। তুই ওর সাথে একটু কথা বলবি। আর তো কিছু নয়। সৌমি তুই এত ভাবিস ,এতে তোর প্রচুর পড়াশোনার ক্ষতি হয়ে যাবে।
– হ্যাঁরে ক্ষতি হয়ে যাবে। এই সময়ের ক্ষতি আমার জীবনে বিরাট বিপর্যয় ডেকে আনবে। আমাকে পড়ার দিকে ধ্যান দিতে হবে। পড়াশোনা করা ছাড়া জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব না।
– তোর একটু বাড়াবাড়ি হল না সৌমি।
– প্রীতি তুই বুঝতে পারবি একদিন যে এই সময়টায় মন অন্য দিকে চলে যেতে চায়, কিন্তু তাকে জোর করে বেঁধে ফেলতে হবে নিজের কাছে এবং পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে হবে, যদি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাও।
– তাহলে অর্কদীপ কে বলে দিতে পারিস।
– কী বলব।
– এই যে তুমি ওকে পাত্তা দিতে চাইছিস না।
– তা কেন বলব। ও আমাকে কিছু বলেনি। যদি বলে তো উত্তর দেব।
– তুই পারিস সৌমি।
– প্রীতি, এদিকে একটু শুনবি।
– অর্কদীপ আবার আমাকে কি বলতে চায়।
– হ্যাঁ কি বলছিস বল।
– সৌমিকে একটু বলিস না আমার ওকে ভালো লাগে।
– আমি বলতে পারব না।
– কেন?
– ও পড়াশোনা ছাড়া কিছু বোঝোনা।
– আমিও তো পড়াশোনা করি।
– তুই নিজে গিয়ে কথা বল।
– আমি চেয়েছিলাম বলতে। কিন্তু কাকিমা ছিলেন।
– সৌমি, পরীক্ষার প্রিপারেশন কেমন হচ্ছে।
– ভালো। তোর?
– হয়েছে ভালোই।
– কিছু বলবি অর্ক?
– তোর সাথে কথা বলতে ভালো লাগে সৌমি। কিন্তু কাকিমা কে খুব ভয় পাই ,তাই কথা বলা হয়ে ওঠেনা।
– আমার মা খুব ভালো অর্ক। কি কথা বলবি বুঝতে পারবি।
– যদি কাকিমা রেগে যায়।
– রাগবে কেন। তুইতো আমার সহপাঠী। প্রতিবছর ফার্স্ট হোস।
– তোকে খুব ভালো লাগে সৌমি।
– হ্যাঁ জানি।আমরা বন্ধু অর্ক। ভালো লাগা স্বাভাবিক।তুই বাড়িতে আয়। মায়ের সাথে কথা বলিয়ে দেবো।
– দেখবি আমার মা খুব ভালো।তোরা বন্ধু। তোদের সাথে বন্ধুত্ব আমার চিরদিন থাকবে। একসাথে প্রিপারেশন নেব বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য।কালকেই বাড়িতে আয়।
– অর্ক সহজ হলো। ওদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হলো। পড়াশোনা ওরা মন দিয়ে করতে থাকলো। বুঝতে পারলো কিছুটা ভুল হয়ে যাচ্ছিল।