আটকে গেলাম
শেষ প্রান্তে সেই মাঠটা দেখে, বট গাছটা আজও মুখ উচিয়ে দাড়িয়ে,
সূর্যের রাগকে তুচ্ছ করে দাপুটে ছেলেগুলো বল পায়ে ছুটে বেড়াচ্ছে
ছুটি এখন, হয়তো তারা নিজেরাই ছুটি করেছে
বাড়িতে কি আর ম্যাথের এক্স খোঁজায় মন টেকে?
ঝুরিগুলো আজও হাত বাড়িয়ে আছে ক্ষুদে ছেলেগুলোর দিকে,
এই আশায় হয়তো আমাদের মতো তারাও তাকে আকড়ে বেড়ে উঠবে।
তাদের মতনই খুনসুটি আর ভালোবাসায় একসময় জড়িয়েছিলাম আমরাও।
আচমকা এই বৃষ্টির জলে স্মৃতির স্তূপটা থেকে ময়লা সরতে শুরু করলো,
বন্ধুদের বেলের আওয়াজেই ছুটে বেরিয়ে পড়া সাইকেল নিয়ে,
সবে সাইকেল শেখা, দু চারবার পরেও শিক্ষা হয়নি
জেতা চাই!
ব্যাট হাতে রান চুরির ঝগড়া, পড়ে গিয়ে তুলে ধরার ভরসা
সবই যেনো চিরন্তন তখন।
ভুল বুঝে আকড়ে বাঁচা, অবুঝ মনকে বোঝানোর চেষ্টা
সব জেনেও প্রেমে পড়া, বন্ধুত্বে ফুলস্টপ, অথবা বাড়িতে ঝগড়া করা
এতটাই নিষ্ঠুর আমি।
পড়া ধরার সময়ে ঘুমিয়ে পড়া বা বকুনির ভয়ে পড়তে বসা
সেই সিনসিয়ার আমি!
এসব যেনো আজও নোটবইটার প্রথম পাতার মতোন নতুন।
হ্যাঁ, আমরাই সেই আগের জেনারেশন
যারা ওই মাঠে ব্যাট হাতে তেন্ডুলকর হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম, বল পায়ে মেসির!
ক্লাসে গিয়ে বড়ো হওয়ার স্বপ্ন আর স্বপ্নগুলোতে
কেও পাইলট, ডাক্তার আবার কেও ইঞ্জিনিয়ার।
ছিলো না কোনো অন্তর, না হিন্দু না মুসলমান, ছিলো না টাকার হিসেব বা মার্কসের লড়াই!
ছোটো ছিলাম, সরল ছিলো পৃথিবীটা
আর স্বপ্নগুলো সহজ।
আমরাই সেই জেনারেশন যাদের টাকার চেয়ে সম্পর্ক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, অথবা
ব্র্যান্ডডেডর চেয়ে ফুটপাথ, কিংবা মোবাইল গেমের চেয়ে মাঠই শ্রেয়।
চোখে ভেসে ওঠে দাদুর কোলে চেপে দোকানে চকলেট কেনার কথা
অথবা বাবার কাছে রিমোট গাড়ির জেদ
মায়ের কাছে ফাস্ট ফুডের বায়না বা জন্মদিনের উপহার,
হ্যাঁ আমি ঠিক এতটাই স্বার্থপর ।
সব স্মৃতি প্রদীপের শিখার মতোন উজ্জ্বল আজও।
চোখের পলকে সব যেনো কোথায় ভ্যানিশ হয়ে গেলো
দাদু দিদা নেই, জেদও কমেছে, রিমোট গাড়ি বা ফাস্ট ফুডের ক্রেজ কমেছে
কিন্তু মাঠ, স্কুল বা টিউশন?
সেই স্মৃতিগুলো আজও যে চিবিয়ে খায়!
হঠাৎ করে সেই শৈশবটা হারিয়ে গেছে
ঝগড়া করার সঙ্গীগুলো আজ নিজেদের কে প্রতিষ্ঠিত করার ইঁদুর দৌড়ে ব্যস্ত
সেই সব “ফ্রেন্ডস ফরেভার” কোথায়?
একসাথে হওয়ার দীর্ঘ অপেক্ষায় যে দিন কাটছে…
হ্যাঁ কলেজের নতুন ফ্রেন্ডস ক্লাব?
হেরে গিয়ে ঘুরে দাড়ানোর জন্যে যথেষ্ট
কিন্তু তারাও তো একদিন সেই শৈশবের মতোনই হারিয়ে যাবে!
জীবনের লড়াই যে বড়ই কঠিন
কমে যাচ্ছে আপনজনদের সাথ, থমকে যাচ্ছে অনেকের জীবন
তার সাথে বেড়ে চলেছে অ্যারিস্টটল বা কার্ল মার্ক্সের থিওরি।
এতো জটিলতা কেন?
হারিয়ে গিয়েও যে হারিয়ে যেতে নেই
হেরে গিয়েও যে ফিরে তাকাতে হয়,
কিন্তু তারও মধ্যে
কমে যাচ্ছে আনন্দে থাকার উৎস, গ্রাস করছে হতাশা, অশান্তি।
চাইবো হতে বট বৃক্ষের মতোন শক্ত
চাইবো সবাইকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে ঠিক যেমন
জীর্ণ শাখাগুলো জানান দিচ্ছে পরের জেনারেশনের জন্য সে আজও রেডী!
শেষ স্টেশনটায় তো সবাইকেই নামতে হবে,
তার আগে নাহয় যাত্রাটা উপভোগ করি?