প্রেম পীড়িতি ভালোবাসার খুন
রমা ও অলকের প্রেম ছোট থেকে। কিন্তু এই প্রেম বিবাহ বন্ধনে আবব্ধ হবার নয়।রমা গরীবের কন্যা আর অলকতো ধনীর ছেলে।
অলকের বাবা নেভিতে আছেন।সারা বছর দেশের বাইরে থাকেন। বাড়িতে রাশি রাশি টাকা পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ। অনেক সময় অলকের মা স্বামীকে অভিমান করে বলেন এবার দেশে ফিরে এসো। টাকাটা কি সব! তোমার ছেলেতো বাবার অভাববোধ করে।আর আমার তো বিয়ে করে কোন লাভ হয় নি।স্বামী সুখ কি বুঝলাম না।
হ্যাঁ আসব বলে অপেক্ষায় এক বছর কেটে যায়।
অলকের মা জীবনে প্রেম পান নি তাই ছেলের ভালবাসাটা উপলব্ধি করতে পারে না। তাঁর ধারণা অলকের বাবা কি ভাববেন।গরীব ঘরে কেন বিয়ে দিয়েছেন বকাবকি করবেন।অলক মাকে বুঝিয়ে বলেছে,”মা এরকম করো না, টাকাতো আমাদের আছে।একটা গরীব ঘরের মেয়ে বৌ হয়ে আসলে বাড়িতে শান্তি থাকবে”।
মা অনশন শুরু করেন। অগত্যা বুকে পাথর চাপা দিয়ে রমাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে অলক। রমা বলেছে মা তো তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন ,তাহলে আমাদের ভালোবাসার ইতিই হোক।
আজ থেকে খুব দরকার না পরলে যোগাযোগ রাখব না।জানি দুজনের খুব কষ্ট হবে।
অলক তুমিতো ধনী পুত্র,দেখবে তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী মা আছেন ঠিক আলোর পথের ঠিকানা পেয়ে যাবে।
রমার সুপাত্রের সাথে জামসেদপুরে বিয়ে হয়ে যায়। রমার খুব জানতে ইচ্ছে করে অলক কেমন আছে। রমার বছর ঘোরার আগেই মেয়ে জন্ম নেয়। স্বামীর আসল রূপ বেরিয়ে আসে , বন্ধু বান্ধব নিয়ে সারাদিন হৈচৈ করে। চাকরি ও চলে গেছে। সারাদিন বন্ধুদের নিয়ে তাস খেলা চলে। মেয়ের দুধের টাকা পর্যন্ত নেই
সঠিক আলোর পথের ঠিকানা কোথায় পাবে! স্বামীর অত্যাচারে রসাতলে গিয়ে পৌঁছেছে রমার জীবন।
স্বামীর বন্ধুরা খুবলে খাচ্ছে , স্বামীর সামনেই। মেয়েটা ওই পাপের
টাকাতে দুধ খাবে।এমন পোড়া কপাল ছোট্ট মেয়েটির মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত।
একটি মেয়ে বিয়ে করে স্বামীর দৌলতে রসাতলে গেলে হয়তো বেশ্যা বলে না।
এক বৃষ্টির দিনে অলককে ফোন করে রমা।
অলক খুশি হয়ে বলে এতদিনে ফোন করলে!
নিশ্চয় খুব সুখে আছো।
রমা মিচকি হাসি বলে অলক তিন বছরের বিবাহিত জীবনে সুখ বলতে আড়াই বছরের আমার মেয়ে অলকা।
কেন তুমি ও কি আমার মায়ের মতো অসুখী?
হঠাৎ গালিগালাজ শুনতে পায় অলক।এই খুঁজে পেয়েছিস মেয়ের বাপকে।
ফোনটা হাতে ধরে বলে সুশান্ত একটু ভদ্র ভাবে কথা বলো।
আহ সুশান্ত লাগছে ছাড়ো।
সুশান্ত বলে বিয়ের ছয়মাসের পর বাচ্চা।সতী সাবিত্রী দেবী।
রমা ক্রোধে বলে ওঠে সকালে মদ খেয়ে মাতলামি করছ। এদিকে মেয়েটার দুধ নেয় ঘরে। একটু ভাত খেতে শুরু করেছে।ডাল ,মাছ লাগে বাচ্চার।
যা রে পাশের ঘরে লোক আছে,দুটো গান শুনিয়ে আয়।দুশ টাকা নিয়েছি একটু গা ঘেঁষে গান শুনিয়ে দিস।
ছি ছি তুমি কি মানুষ। আমি ভদ্রঘরের মেয়ে।
যা বলছি শোন। তাড়াতাড়ি যা।এরপর বটুকবাবু আসবে।তার আবার একটু বেশি সময় লাগবে। পাঁচ হাজার দেবে।তোর অলকার ভাত ,মাছ সব আসবে।
না আমাকে দিয়ে পাপ কাজ করিও না। আমাদের ছেড়ে দাও চলে যাব।
ধস্তাধস্তিতে রমা ফলের ঝুড়ি থেকে ধারালো ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। চিৎকারে পাশের ঘরের লোকেরা ভয়ে খুন খুন বলে চিৎকার করে।
নিস্তব্ধ পরিবেশ । ফোনে আছো অলক। তুমি নিয়ে যাবে তোমার মেয়েকে।
অলক বলে তুমি খুন করলে রমা!
আমার মেয়ে রমা!কি বলছ!
তাহলে অলক তোমার মেয়েকে বাঁচাতে পারতাম না।
এক্ষুণি হয়তো পুলিশ আসবে।
চিন্তা করো না রমা। আমি এখন জামসেদপুরে থাকি চাকরি সূত্রে। সম্ভবত তোমার বাড়ির কাছাকাছি থাকি।
অলক তাহলে তোমার রমা নিশ্চিন্তে যেতে পারবে। আমাদের মেয়ে
সঠিক আলোর পথের ঠিকানা পাবে।
আজ ডায়েরীর পাতায় লিখে গেল রমা অলকাকে ওর বাবার হাতে তুলে দিয়ে বিদায় নিলাম। দুশ্চরিত্র স্বামীর কুকীর্তি ডায়েরীর প্রতি পাতায় চোখের জলে লেখা আছে। বিদায় পৃথিবী। আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়। বাবার সাথে ভালো থাকিস অলকা মা।তোর ঠাকুমা আমার প্রেমের খুন করেছে।আজ যে লোকটা খুন হয়েছে,সে তোর কেউ হয় না রে।আর বাবার পরিচয়ে বড় হোস ।