Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রাইসলেস বুদ্ধ || Sujan Dasgupta

প্রাইসলেস বুদ্ধ || Sujan Dasgupta

একেনবাবুর গলাব্যথা আর কাশি হয়েছে। ফলে আমাদের কান ঝালাপালা!

“কী মনে হয় স্যার, টনসিলাইটিস না ফ্লু? ব্রঙ্কাইটিস হল না তো, আমার আবার খুব সর্দি বসার ধাত! রাতে বুকটা বেশ ঘড়ঘড় করেছে— তাই ভাবছি। ব্রঙ্কাইটিস অবশ্য আগে হয়েছে, নিউমোনিয়া না হলেই বাঁচি!”

কাশির ফাঁকে ফাঁকে সারা সকাল ধরে এই চলছে।

ঘ্যানঘ্যান আর সহ্য না করতে পেরে প্রমথ বলল, “এত যখন আপনার দুশ্চিন্তা তখন ডাক্তারের কাছে যান না! নিশ্চিন্ত হয়ে ফিরবেন।”

“তা মন্দ বলেননি স্যার।” গলায় মাফলারটা একটু খুলে আবার ভালো করে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে মাথা নাড়লেন একেনবাবু। “তবে কিনা ওষুধটা আমি জানি। কলকাতা হলে অ্যাজিথ্রল-এর একটা কোর্স নিয়ে নিতাম। তিন দিনও লাগত না, একেবারে ফিট। আচ্ছা স্যার, এখানে অ্যাজিথ্রল পাওয়া যায় না?”

“যাবে না কেন! অ্যাজিথ্রল মনে হয় অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ওটাকে এখানে জি-প্যাক বলে। তবে প্রেসক্রিপশন লাগবে। এদেশে এসব ব্যাপারে খুব কড়াকড়ি। কিন্তু খামোখা অ্যাজিথ্রোমাইসিন খাবেন কেন? জ্বর-ফর কিছু হয়নি!”

“হবে স্যার, হবে। এগুলো হল জ্বরের পূর্বলক্ষণ।”

একেনবাবু খুব কনফিডেন্টলি কথাটা বলে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর উইক- ইন-রিভিউ সেকশনটা তুলে পড়তে শুরু করলেন। খানিক বাদেই, “অসুখ হলে কলকাতা হচ্ছে আইডিয়াল প্লেস।” পত্রিকায় মুখটা ঢাকা, ঠ্যাং নাচাতে নাচাতে একেনবাবু মন্তব্য করলেন।

“কী যা-তা বকছেন, পৃথিবীর লোক নিউ ইয়র্কে আসে চিকিৎসার জন্য!” আমি বললাম।

“না স্যার, বড়ো অসুখের কথা বলছি না। এই আমার টাইপের অসুখের কথা বলছিলাম।”

“তার জন্যেই-বা কলকাতা ভালো হতে যাবে কেন?”

“কলকাতায় এইসব প্রেসক্রিপশন-ট্রেসকিপশনের ঝামেলা নেই। টাকা ফেলুন, যে ওষুধ চান তাই পাবেন।”

সেটা ভালো কি মন্দ অবশ্যই তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু একেনবাবুর সঙ্গে এই সাতসকালে তার ফয়সালা করতে আমি রাজি নই। চুপচাপ পত্রিকা পড়ে চললাম। প্রমথ কফি করতে ব্যস্ত। তাই প্রসঙ্গটা আর গড়াল না।

খানিক বাদে কফি খেতে খেতে একেনবাবু হঠাৎ বললেন, “না স্যার, এক বার ঘুরেই আসি।”

প্রমথ অবাক হয়ে তাকাল। “কোত্থেকে ঘুরে আসবেন?”

“ওই যে স্যার, আপনারা বললেন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত! আপনাদের চেনাজানা কেউ আছে কম ভিজিট নেন?”

“এখানে সবারই প্রায় এক রেট,” আমি বললাম। “ডাক্তার খান্নার কাছে যেতে পারেন। দরকার পড়লে ওঁর কাছেই আমি যাই।”

“কত ভিজিট স্যার?”

“পঁয়ষট্টি ডলার নিতেন। এখন হয়তো একটু বেড়েছে।”

“পঁয়ষট্টি ডলার! দেবেন তো সেই অ্যাজিথ্রোমাইসিন!”

“নাও দিতে পারেন।” প্রমথ খুব গম্ভীরভাবে বলল। “হয়তো ডক্সিসাইক্লিন খেতে বলবেন, কিংবা লেভোফ্লোক্সাসিন। ছোটোখাটো ব্যাপার মনে করলে হয়তো গুড ওল্ড পেনিসিলিন ঠুকে দেবেন। যে-ওষুধই দিন, সেটা কিনতে আপনার লাগবে আরও ষাট কি সত্তর ডলার। সুতরাং, ডাক্তার আর ওষুধ মিলে কম সে কম একশো তিরিশই ধরে নিন। তাও তো আমি কম করে বলছি, তাই না বাপি? ডাক্তার খান্না আবার সুযোগ পেলেই একটা ইনজেকশন ঝেড়ে আরও পঁচিশ ডলার এক্সট্রা বাগান। যাক গে, ধরা যাক একশো তিরিশ ডলারই। ডলারের রেট এখন কত— পঁয়তাল্লিশ? তার মানে…” প্রমথ মনে মনে একটু হিসেব করে বলল, “প্রায় পাঁচ হাজার নশো টাকা— ছ’ হাজারই ধরুন।”

কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে প্রমথর জুরি নেই।

“ছ’ হাজার!” একেনবাবুর গলাটা প্রায় আর্তনাদের মতো শোনাল। “তার থেকে আমার নিউমোনিয়াই ভালো স্যার!” কথাটা বলেই আবার খক খক শুরু করলেন।

“আপনার ইন্সিয়োরেন্স নিশ্চয় কিছুটা কভার করবে,” আমি ওঁকে একটু প্রবোধ দেবার জন্য বললাম।

“না স্যার, আমার ইন্সিয়োরেন্সটা কঠিন অসুখের পক্ষে ভালো। কিন্তু এই সবে বোধহয় টাকা দেবে না।”

“তাহলে তো চিন্তাই নেই। ভালো করে অসুখটা বাধান, যাতে হাসপাতালে যেতে হয়। ব্যস, ইন্সিয়োরেন্সের পয়সায় হাসপাতাল ঘুরে আসবেন। রান্না-ফান্না কাজকম্ম কিচ্ছু করতে হবে না, শুয়ে-বসে দিব্যি ক’টা দিন কাটিয়ে দেবেন।”

প্রমথটা সত্যি মাঝে মাঝে বড্ড অসভ্যতা করে! আমি ওকে ধমকাতে যাচ্ছি, এমন সময় টেলিফোন বেজে উঠল।

“হ্যালো।”

“কে, প্রমথ?” গলাটা কাঁপা কাঁপা।

“না, আমি বাপি।”

“বাপি, আমি সমর। তোরা খবর পেয়েছিস কিনা জানি না, বিভাস চৌধুরী মারা গেছেন।”

“হোয়াট, কী বলছিস!”

“কাল রাতে ওঁর অ্যাপার্টমেন্টে হঠাৎ আগুন লাগে। উনি আর বেরোবার সুযোগ পাননি। পুরো বিল্ডিংটাই ছাই হয়ে গেছে।

“মাই গড!”

“আমি এক্ষুনি হাসপাতালে যাচ্ছি, পারলে তুইও আয়। প্রমথকে খবরটা দিয়ে দিস।”

“দেব, কিন্তু…”

সমর ইতিমধ্যে লাইনটা কেটে দিয়েছে।

প্রমথ আর একেনবাবু দু-জনেই উদ্‌গ্রীব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে। আমার মুখ দেখে নিশ্চয় বোঝা যাচ্ছে খবরটা শুভ নয়। আশ্চর্যের কথা এই কালকেই বিভাস চৌধুরীকে নিয়ে কত আলোচনা হল। একেনবাবু ভদ্রলোককে চিনতেন না। বললেন, ‘ওঁর সঙ্গে এক বার আলাপ করিয়ে দিন স্যার, মনে হচ্ছে উনি একজন জিনিয়াস।” তখন কি এক বারও ভেবেছি আজ উনি আর থাকবেন না!

প্রমথ জিজ্ঞেস করল। “কার ফোন?”

“সমরের। বিভাস চৌধুরী মারা গেছেন!”

নিউ ইয়র্কে অনেক বাড়িই কাঠের। ম্যানহাটানের হাই-রাইজগুলোর কাঠামো বা স্ট্রাকচার স্টিলের হলেও দেয়াল, মেঝে, ইত্যাদিতে প্রচুর কাঠ থাকে। চট করে সেগুলোতে আগুন লেগে যেতে পারে। বাড়ি পুড়ে যাবার খবর পত্রিকায় অনেক পড়েছি, টিভিতেও দেখেছি। কিন্তু চেনা-পরিচিতদের বাড়িতে যে এরকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ভাবিনি, যদিও না ভাবার কোনো কারণ নেই। মুশকিল হল এসব বাড়িতে আগুন এক বার লাগলে হু-হু করে ছড়িয়ে যায়, তাড়াহুড়ো না করলে পালাবার সুযোগ পাওয়া যায় না। বিভাস চৌধুরী তো আবার থাকতেন দোতলায়। ওঁর বাড়িটা চোখের সামনে ভেসে উঠল। বহু পুরোনো ছ’তলা একটা বাড়ি। বাড়িটার ফ্রেম কাঠের কিনা জানি না। তবে বাইরেরটা না হলেও ভেতরের ফ্রেমগুলো নিশ্চয় কাঠেরই হবে, ফ্লোরগুলো তো ছিল সব কাঠের। অত বড়ো বাড়িতে থাকবার অ্যাপার্টমেন্ট বলতে প্রত্যেক ফ্লোরে ছিল মাত্র একটা করে, বাদবাকি সবই হচ্ছে অফিস। একমাত্র বিভাস চৌধুরীর ছাড়া অন্যান্য অ্যাপার্টমেন্টগুলো এখন ফাঁকা পড়ে আছে। অর্থাৎ পুরো বিল্ডিং-এ রাত্রে মাত্র এক জন বাসিন্দা! ফায়ার অ্যালার্ম নিশ্চয় কাজ করেনি। নিউ ইয়র্কের প্রতিটা বাড়িতেই ফায়ার অ্যালার্ম থাকে। তবে থাকা আর সময়মতো কাজ করা দুটো স্বতন্ত্র প্রশ্ন। আমাদের বাড়ির অ্যালার্মই তো কাজ করছে না, অনেকদিন হয়ে গেল। ব্যাটারি ফুরিয়ে যাবার আগে কয়েক দিন অ্যালার্মটা করুণ আর্তনাদ করেছে, কিন্তু উদ্যোগ নিয়ে নতুন ব্যাটারি এখনও লাগানো হয়নি। অবশ্য ফায়ার অ্যালার্ম বাজলেও-বা কী? এক তলায় আগুন লাগলেও আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের অ্যালার্ম বাজতে বাজতে পালাবার পথ থাকবে কিনা সন্দেহ। নতুন বিল্ডিংগুলোতে কমন অ্যালার্ম সিস্টেম আছে শুনেছি। আমাদের বাড়িটা বহু পুরোনো। ফায়ার এস্কেপের জন্য বাইরের যে সিঁড়িটা আছে সেটাও ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিতে হবে। সত্যি, কী আত্মসর্বস্ব হয়ে গেছি! বিভাস চৌধুরী মারা গেছেন, আর আমার চিন্তা শুধু নিজেকে নিয়ে!

প্রমথ এদিকে সমরকে ধরার চেষ্টা করছে ঘটনাটা বিস্তারিত জানার জন্য। কোন হাসপাতালে বডিটা আছে জানতে পারলে আমরা চলে যেতে পারতাম। যদিও সেখানে গিয়ে কী করব ধারণাই নেই! বিভাস চৌধুরীর আত্মীয়স্বজনদের খবর দেওয়া দরকার, কিন্তু তাঁরা কে বা কোথায় থাকেন জানি না। নিকট আত্মীয়দের খবর না দেওয়া পর্যন্ত পুলিশ দেহটা দাহ করার অনুমতি দেবে না। তবু যাওয়াটা দরকার ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর জন্য।

একেনবাবু চোখ বুজে বসে আছেন, কী ভাবছেন জানি না। আমার মাথায় খালি বিভাস চৌধুরী ঘুরছে। আমাদের থেকে বেশ কয়েক বছরের সিনিয়র ছিলেন। কম্পিউটার সায়েন্সের লোক। সায়েন্স বিল্ডিং-এর তিন তলায় উনি বসতেন। আমার ঘর থেকে মাত্র কয়েকটা ঘর পরে ছিল ওঁর অফিস। কথা কিন্তু কদাচিৎ হয়েছে। আমার ধারণা রিসার্চের ক্ষতি হবে বলে তিনি কথা বলে সময় নষ্ট করতে চাইতেন না। যখনই ওঁর ঘরের সামনে দিয়ে গেছি, দেখেছি তন্ময় হয়ে কম্পিউটারে কাজ করছেন। আর ঘরটা দেখলে অফিসঘর বলে মনে হত না, মনে হত কম্পিউটারের কোনো দোকান। ভিডিয়ো মনিটরই গোটা চারেক, তা ছাড়া দামি স্ক্যানার, লেজারের কালার প্রিন্টার… আরও হাবিজাবি অনেক কিছু। সমরের মতে অফিসে যা আছে, তার তিন গুণ গ্যাজেট ওঁর বাড়িতে। সমর বিভাস চৌধুরীকে ভালোই চিনত, ও নিজে কম্পিউটার সায়েন্সের ছেলে তো। ওর কাছেই শুনেছিলাম, কম্পিউটার ফিল্ডে বিভাস চৌধুরীর নাকি দারুণ নাম। ভদ্রলোকের গবেষণার বিষয় ছিল প্যাটার্ন রেকগনিশন। কথাটা শুনতে গালভারী, কিন্তু এই কাজটা নিজের অজান্তেই আমরা করি। একটা ছবি দেখে কত সময় বলি, “আরে, এটা তো আগেই দেখেছি!’ অর্থাৎ আগে যা দেখেছি, সেটা আমাদের মনে গেঁথে আছে। পরে দেখার সঙ্গে সঙ্গে সেটা মনে পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কী করে সেগুলো আমরা মনে রাখছি বা বাস্তবের ছবিটা তার সঙ্গে মেলাচ্ছি, সেটা আবছা-আবছা ভাবে বলতে পারলেও খুব স্পষ্ট করে বলতে মনে হয় পারব না। প্যাটার্ন রেকগনিশনের গবেষকদের কাজ হল সেটাই কম্পিউটারকে পরিষ্কার করে শিখিয়ে দেওয়া। সেক্ষেত্রে কম্পিউটার নির্ভুলভাবে এত দ্রুত কাজটা করবে, আমরা কল্পনাও করতে পারব না! এই নিয়েই একেনবাবুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। একেনবাবু ক’দিন আগে ওয়াশিংটন ডিসি-তে এফবিআই-র অফিসে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে আমাকে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলছিলেন কী করে ওখানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলানো হয়। কাগজে লাগানো আঙুলের ছাপ কম্পিউটার স্ক্যানারে ঢুকিয়ে কয়েকটা বোতাম টেপার পরেই স্ক্যানারের সঙ্গে লাগানো মনিটরে উঠবে ওটা এফবিআই ডেটাবেসের কোনো ছাপের সঙ্গে মিলছে কিনা। একেনবাবু নিজে পরীক্ষা করার জন্য কাগজে -নিজের আঙুলের ছাপ লাগিয়ে স্ক্যানারে ঢুকিয়েছিলেন। সবিস্ময়ে দেখলেন মনিটরে উঠেছে একেন্দ্র সেন, ডেট অফ বার্থ (তারিখটা আর দিলাম না), সিটিজেন অফ ইন্ডিয়া, লাস্ট ডেট অফ এন্ট্রি টু ইউএসএ… ইত্যাদি ইত্যাদি। একেনবাবু ভুলেই গিয়েছিলেন, প্রথম বার যখন ট্রেনিং নিতে এদেশে আসেন, ওঁকে আঙুলের ছাপ দিয়ে ঢুকতে হয়েছিল। আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘বলুন তো স্যার, এফবিআই ডেটাবেসে কতগুলো ফিঙ্গারপ্রিন্ট আছে?”

‘আমার কোনো ধারণাই নেই। দশ লক্ষ?” একটু বাড়িয়েই সংখ্যাটা বলেছিলাম।

‘আড়াই কোটিরও বেশি।”

‘কী বলছেন যা-তা! সারা আমেরিকাতেই তো ছাব্বিশ কোটি লোক। তাদের মধ্যে দশ পার্সেন্ট ক্রিমিন্যাল?”

‘না না, তা হবে কেন স্যার! আমার ছাপ আছে, আমি শিওর, আপনার ছাপও আছে। ইমিগ্রেন্ট হয়ে যারা এদেশে ঢুকেছি, সবার ছাপ আছে।”

তখন মনে পড়ল ইমিগ্রেশনের জন্য অ্যাপ্লাই করার সময় একবার আঙুলের ছাপ দিতে হয়েছিল বটে।

‘কল্পনা করুন স্যার, কেমন ধাঁ করে আমার ছাপটা বার করে ফেলল! আমাদের দেশে এক্সপার্টরা তো মাসের পর মাস লাগিয়ে দেবে। অনেক সময়ে তফাতগুলো এত সূক্ষ্ম, আপনি-আমি চেষ্টা করলেও ধরতে পারব না। না স্যার, এই কান্ট্রি অ্যামেজিং, ট্রুলি অ্যামেজিং!’

তারপর কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলেছিলেন, ‘আসলে স্যার বড়ো বড়ো কম্পিউটার থাকলে কী না করা যায়!”

তখনই আমি বিভাস চৌধুরীর কথা বলেছিলাম। কথাটা অবশ্য সমরের কাছ থেকে শোনা। উনি প্যাটার্ন মেলানোর একটা যুগান্তকারী অ্যালগরিদম, মানে পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। ছোটোখাটো কম্পিউটার এমনকী পার্সোনাল কম্পিউটারেও এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে। একেনবাবু সেটা শুনে দারুণ উৎসাহিত হয়েছিলেন। …যাক সে-কথা, বিভাস চৌধুরী তো আর নেই— ওসব ভেবে কী হবে!

“ইউনিভার্সিটি হসপিটালে বডি নিয়ে গেছে”, প্রমথর কথায় সংবিৎ ফিরল। সমর নয়, আর কারও কাছ থেকে এক্ষুনি খবরটা পেয়েছে। আমরা দ্রুত বেরিয়ে পড়লাম।

হসপিটাল আমার বাড়ি থেকে মিনিট দশেকের পথ। গিয়ে দেখি কলেজের অনেকেই খবর পেয়ে এসেছেন। সবাই শক্ড। থমথমে আবহাওয়া, তবে কোনো কান্নাকাটি নেই। বডিটা দেখতে পেলাম না, কাপড় দিয়ে ঢাকা। ওটার নাকি পোস্টমর্টেম হবে। আগুনে পুড়ে কারও মৃত্যু হলে সেটাই দস্তুর কিনা জানি না। পুলিশ কি কিছু সন্দেহ করছে? কানাঘুষো শুনলাম এটা নাকি অ্যাক্সিডেন্ট নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে আসন, কেউ আগুন লাগিয়েছে! কোত্থেকে খবরটা এসেছে বার করতে পারলাম না।

আমাদের ডিন বডিটা দেখেছেন, একেবারেই পুড়ে গেছে, কিছুই বোঝার জো নেই। বডিটা বিভাস চৌধুরীর কিনা- সে ব্যাপারেই-বা কীভাবে নিশ্চিত হবে পুলিশ? প্রমথকে সেটা বলতেই ধমক লাগাল, “আইডেন্টিফিকেশনের এখন অনেক জেনেটিক মেথড আছে।”

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
Pages ( 1 of 11 ): 1 23 ... 11পরবর্তী »

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *