Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রথম কোকিল || Tarapada Roy

প্রথম কোকিল || Tarapada Roy

ইংরেজদের প্রকৃতি সচেতনতার কোনও তুলনা নেই। তারা বরফ পড়লে মাথা ঘামায়, বরফ না পড়লে মাথা ঘামায়, বরফ বেশি পড়লে মাথা ঘামায়, বরফ কম পড়লে মাথা ঘামায়। তারা প্যাচপেচে বৃষ্টির ঘোলা দিনকে আহ্লাদ করে বলে হোম ওয়েদার (Home weather)।।

বসন্তের কোকিল প্রত্যেকবারই কুহুস্বরে ডাকে। কোনওবার একটু আগে, কোনওবার কিছু পরে। কিন্তু ইংরেজের কাছে তার নিস্তার নেই, বসন্তে যেদিন তার প্রথম ডাক শোনা যাবে তার পরের দিনই চিঠি বেরবে লন্ডনের টাইমস কাগজে, ‘গতকাল ১৬ এপ্রিল সোমবার সকাল সাতটা বেজে পঞ্চান্ন মিনিটে এসেক্সে কোকিলের ডাক শুনলাম। অন্য বছর তো এত তাড়াতাড়ি কোকিল ডাকে না?’

শুধু কোকিলের ডাক বা বরফ পড়া নয়, জগৎসংসারের তাবৎ জিনিস নিয়ে মাথা ঘামায় সাধারণ ও অসাধারণ ইংরেজ, তাই নিয়ে চিঠি লেখে খবরের কাগজের পৃষ্ঠায়।

সমস্ত বিখ্যাত বিলিতি দৈনিকের প্রধান আকর্ষণ পাঠকদের ওইসব চিঠিপত্র।

পাঠকদের এইসব চিঠিপত্রের তিনটি সুসম্পাদিত সংকলন আমি দেখেছি। মহারানি ভিক্টোরিয়ার আমল থেকে অধুনাবধি টাইমস কাগজে সম্পাদক সমীপেষু যত চিঠি বেরিয়েছে এই তিনটি গ্রন্থই তার মনোজ্ঞ সংগ্রহ। বই তিনটির নাম যথাক্রমে প্রথম কোকিল (The first Cuckoo), দ্বিতীয় কোকিল (The second Cuckoo) এবং সর্বশেষ, তৃতীয় কোকিল (The third Cuckoo)।

টাইমসের পত্রদাতাদের মধ্যে কে নেই? মহামহিমান্বিতা মহারানি ভিক্টোরিয়া থেকে জর্জ বারনারড শ’, সেনাপতি থেকে সাধারণ নাগরিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপণ্ডিত অধ্যাপক থেকে ফাজিল তরুণী—সকলের সবরকম চিঠিই এর মধ্যে আছে।

দুয়েকটা নমুনা দর্শনীয়।

১৯৫৮ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে শ্রীযুক্ত জে. গুডচাইল্ড নামে এক ভদ্রলোক চিঠি দিয়ে টাইমসের সম্পাদককে জানিয়ে ছিলেন দুশো বছর আগে ১৭৮৫ সালের ১ জানুয়ারি তারিখের টাইমস কাগজে একটা ভুল হয়েছিল, একজন কবির নাম পল হোয়াইটহেড বলে ছাপা হয়েছিল, সেটা আসলে হবে উইলিয়াম হোয়াইটহেড—যিনি সে সময়ে পোয়েট লরিয়েট ছিলেন।

দুশো বছর আগের ভুল ধরার এমন নজির বুঝি টাইমস কাগজেই সম্ভব।

আরেকটা অন্য ধরনের চিঠির কথা বলি।

এন আর ডেভিস নামে ভদ্রলোক ১৯৩৭ সালের ৫ মে তারিখে কয়েকদিন আগে প্রকাশিত রয়টার পরিবেশিত একটি সংবাদে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

রয়টারের সংবাদে ছিল যে হলস্টেড নামক স্থানে এক দাড়িঅলা ভদ্রলোক তাঁর সাইকেলের খুলে-যাওয়া চেন পরাতে গিয়ে সেই চেনের সঙ্গে নিজের লম্বা দাড়ি জড়িয়ে ফেলেন।

ছোট একটি হালকা খবর। কিন্তু ডেভিসসাহেবের বক্তব্য হল যে পঁয়তাল্লিশ বছর আগে সেই আঠারোশো বিরানব্বুই সালের বসন্তকালে তিনি হলস্টেডে ছিলেন এবং তখন হলস্টেড অঞ্চলের একটা জনপ্রিয় গান ছিল এক বুড়োর দাড়ি সাইকেলের চেনে আটকে যাওয়া নিয়ে। সেই গানটিই এখন উড়োখবর হয়েছে।

আমি এই তিনটি কোকিলগ্রন্থের অধিকাংশ পুনর্মুদ্রিত চিঠিগুলি কৌতূহলভরে, আগ্রহ সহকারে পাঠ করেছি। প্রচুর গোলমেলে ঘটনা ও আশ্চর্য খবর আছে এই চিঠিগুলোর মধ্যে; তার মধ্যে আশ্চৰ্যতম বোধহয় এইটি।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় সেটা। ব্রিটিশ বোমারু বিমান যেত জার্মানিতে বোমা ফেলতে। প্রত্যেক বোমারু বিমানের সঙ্গে থাকত একটি করে পায়রা। বিমান-যুদ্ধে ভূপতিত হলে পায়রাটি বেরিয়ে ফিরে আসত। পায়রার প্রত্যাবর্তন দেখে বিমানের ভাগ্য জানা যেত।

একজন বৈমানিক, যিনি ওইরকম একটি বিমান নিয়ে বোমা ফেলতে গিয়েছিলেন এবং শত্রুপক্ষের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে তারপর কোনওরকমে বিমান নিয়ে ফিরে এসেছিলেন, তিনি লিখেছিলেন, ‘কী আশ্চর্য, এত বড় একটা ঘটনা গুলিগোলা, ঝাপটানি, তারই মধ্যে তাকিয়ে দেখি আমার পায়রাটা একটা ডিম পেড়েছে।’

দিনের-পর-দিন, বছরের পর বছর দশক-শতক অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উত্থান হয়েছে, পতন হয়েছে। ইংলন্ডেশ্বরী ভারতেশ্বরী হয়েছেন, আবার পুনরায় মূষিকে পরিণত হয়েছেন, দুই মহাযুদ্ধ ঘটে গেছে এরই মধ্যে। প্লেগ মহামারী, জার্মান বোমা।

সেই সঙ্গে পাশাপাশি টাইমসের পাতায় ছাপা হয়েছে পাঠকের চিঠিপত্র, সম্পাদক সমীপেষু।

শুধু আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয় নয়, দৈনন্দিন সমস্যা বা অভিযোগের ফিরিস্তিও নয়, প্রকাশিত হয়েছে অজস্র মজার চিঠি, যার ভিতর দিয়ে ব্রিটিশ চরিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।

মিস্টার জি প্রনের চিঠিটির কথাই ধরা যাক।

কী এক কারণে তাঁর বিষয়ে একটি সম্পাদকীয় লেখা হয়েছিল টাইমস কাগজে ১৯৪৬ সালের ৪ মার্চ তারিখে।

সেই সূত্রে একটা পত্র নিক্ষেপ করেছিলেন মিস্টার প্রন, টাইমসের সম্পাদকের উদ্দেশ্য। খুবই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য। চিঠিটি হুবহু পেশ করছি, অনুবাদে।।

৭ মার্চ, ১৯৪৬

মহাশয়,

আপনার চৌঠা মার্চের সম্পাদকীয়।

মহাশয়, আপনি কি আপনার সম্পাদকীয়তে আমার বিষয়ে কিছু লিখেছেন?

মহাশয়, আপনি অভিযোগ করেছেন, আমি আমার লম্বা, ঝুলো গোঁফ নাচিয়ে কী-সব বলেছিলাম সে-বিষয়ে।

কিন্তু মহাশয়,

সারাজীবনে আমার কোনোদিন কোনো গোঁফ ছিল না।

এমনকী আমি যখন খুব নাবালক ছিলাম, শিশু ছিলাম, তখনো আমার কোনো গোঁফ ছিল না।

ইতি

ভবদীয়

পি. প্রুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *