প্রতিবাদ হলো সমাজ সংস্কারের প্রথম ধাপ
আলোর সৃষ্টি হয়েছে অন্ধকারের বিপরীতে । মানুষের জীবনের লক্ষই হল অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণ । আর তাই মানুষ বানিয়েছে সমাজ , দেশ , আইন বা নানারকম নিয়মাবলী । সকল মানুষকে নির্দেশ দেওয়া হয় সেগুলো মেনে চলতে। এই সকল নিয়মাবলির সামাজিক নাম হল ন্যায় । শিক্ষার উদ্দেশ্য হল এই ন্যায়গুলোকে মেনে চলা, যাতে সকলের কল্যাণ হয়। কিন্তু কিছু মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য অন্যের স্বার্থের ক্ষতি করে থাকেন । আর অনেক মানুষ সেই অন্যায়কে মুখ বুজে সহ্য করতে থাকেন । আর এর ফলেই অন্যায়ের মাত্রাও বাড়তে থাকে। যুগে যুগে মনীষীরা সমাজ সংস্কারে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা বলেছেন।
“এবার ফিরাও মোরে” কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাই লিখেছেন –
“যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে
যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পলাইবে ধেয়ে ।”
প্রতিটি সমাজে প্রতিবাদ হচ্ছে অস্তিস্ত রক্ষার লড়াই শুধু নয় , নৈতিক কর্তব্যও বটে। এইজন্য উইলিয়াম ফকনার বলেছেন;-
”’কখনো অন্যায়, অত্যাচারের জন্য নিজের আওয়াজকে রুখে দিও সত্য ও ন্যায়ের কথা বলতে।“যখন কোন সমাজে ঈর্ষা, দ্বেষ, অসূয়া মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন যুগে যুগে সমাজ সংস্কারক মহামানবেরা এসে প্রতিবাদের ঝড় তুলে সমাজকে পরিশুদ্ধ করেন। অষ্টাদশ শতাব্দীতে রাজা রামমোহন রায় এদের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লাগাতার প্রতিবাদ করে সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি। এলা হুইলার উইলকক্সের উক্তি একারণেই প্রণিধানযোগ্য;-
”যে পাপ নীরবেই হয়ে যায় তার জন্য প্রতিবাদ করা উচিত এবং ভীতুদেরকে মানুষের ভেতর থেকে বের করে আনা উচিত।
পরবর্তী সময়ে আমরা দেখেছি অসহায় বাল্যবিধবাদের হিন্দু ধর্মের নিয়ম বলে যথেচ্ছ অত্যাচারিত হতে। বলাবাহুল্য বিধবাবিবাহ প্রচলন করতে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রতিবাদী ক্রিয়াকলাপ। বলাবাহুল্য তাঁর কীর্তি সমগ্র হিন্দু সমাজের অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থিতির আমূল পরিবর্তন হয়েছিল।
থমাস জেফারসন বলেছেন.”যখন অনিয়ম, দুর্নীতি একটা আইন হয়ে যায়, সেই মুহূর্তে প্রতিবাদ করা একটা দায়িত্ব হয়ে যায়।”-থমাস জেফারসন।
তাই সমাজ সংস্কারের প্রথম ধাপই হলো প্রতিবাদ। তা যদি না হয় সমাজে ধর্মের নামে, কুসংস্কারের সপক্ষে দূর্নীতি প্রতিরোধের অন্য কোন উপায় নেই। এহেন প্রতিবাদ সর্বদা হিংসাত্মক না হয়েও বাচিক বা লেখনী শক্তির মাধ্যমেই করা উচিত। কথায় আছে;-“অসির চেয়ে মসীর শক্তি বেশি।” বাহুবলীর প্রতিবাদ প্রতিরোধের চেয়ে হিংসার বাতাবরণ সৃষ্টি করে। অথচ বাচিক প্রতিবাদ সমাজের অভ্যন্তরে সাড়া ফেলে খুব তাড়াতাড়ি। তাইতো সংবাদপত্র বা সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রচারে সত্ত্বর সংস্কার জারিত হয়ে সমাজকে সচেতন করে। ডে. রে. ম্যাকেসন ঠিকই বলেছেন;-”আমি এ ব্যাপারে আশাবাদী যে প্রতিবাদের লক্ষ্য মোটেও আবার প্রতিবাদ ডেকে আনা নয়। বরং প্রতিবাদের লক্ষ্য হলো নতুন কিছু এনে সমাজের পরিবর্তন সাধন করা।
সমাজের অলিন্দে আজ যে বেনোজল ঢুকে গেছে তার শুদ্ধিকরণের প্রথম ধাপ হলো প্রতিবাদ। কবির ভাষায় তাই;-
“প্রতিবাদ হোক ব্যক্তি আমি’র সাথে সামাজিক আমি,
এভাবেই আজ সংগ্রামের ভাষা খুঁজে পাবে তুমি।”।