দীর্ঘকাল পর, মনে হলো, শুনতে পেলাম দেয়ালের শিস
শহরের অন্ত্যজ পাড়ায়। আবর্জনা,
ড্রেনের উগরে-দেয়া কুট গন্ধ সত্ত্বেও মেজাজে
রুক্ষতার রোঁয়া তীব্র গজিয়ে ওঠেনি। আসমানে কবুতর।
বিকেলে চায়ের স্বাদ নিতে চেয়ারে হেলান
দিয়ে পড়ছিলাম নিভৃতে
প্রতিবাদী কবিতার সংকলন। রক্তে জ্বালা ধরে
মানবতা আর সভ্যতার লাশঘেরা হাহাকার শুনে। কিছু
চিত্রকল্প বিপ্লবীর মতো
আমাকে ঝাঁকুনি দেয় শক্ত হাতে, আমার সত্তার
দিকে চেয়ে থাকে স্বপ্নময় চোখ মেলে। ভেসে ওঠে
দৃষ্টিপথে চাবুকের দাগময় হাজার হাজার
নগ্ন পিঠ, চকচকে বিশুদ্ধ বুটের লাথি-খাওয়া
সম্ভ্রমের মুখ-থুবড়ে-পড়া থাকা দেশ-দেশান্তরে।
পঙ্ক্তিমালা ঈগলের মতো উড়ে ঠুকরে ঠুকরে
খাচ্ছিল আমার হৃৎপিণ্ড, করোটির
ভেতরের স্নায়ুপুঞ্জ। অকস্মাৎ পাড়া-কাঁপানো কান্নায় ফিরে
প্রতিবাদী কবিতার সংকলন
থেকে চেনা প্রতিবেশে। কান্না শুনে বুকের ভেতর
আদিম যুগের সন্ধ্যা নামে,
জেগে ওঠে বলি-দিতে-নিয়ে-যাওয়া কুমারীর বন বনান্তরে
ব্যাপক ছড়িয়ে পড়া করুণ চিৎকার। কিছুক্ষণ
চুপ থেকে, পায়রার ওড়াউড়ি দেখে
আবার বুলোই চোখ বৈশাখী ঝড়ের মতো পঙ্ক্তিময় বইয়ে।
পুনরায় কান্না ভেসে আসে, খুব কাছ থেকে
নারীসত্তা দীর্ণ করা কান্না, যেন বা ঢেউয়ের ভেঙে
পড়া শিলাতটে; পুরুষের তর্জন গর্জন শুনে মনে হয়
দানবের বসবাস নয় শুধু পুরাণের প্রাচীন পাতায়,
ইচ্ছে হলো ছুটে গিয়ে খুঁজি সে কান্নার উৎস,
জানাই সরোষ প্রতিবাদ,
কিন্তু আমি ফ্ল্যাটে ক্ষুব্ধ, ভব্যতার খাঁচায় কয়েদ হয়ে থাকি,
হাতে প্রতিবাদী কবিতার সংকলন।