Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

পিলসুজ

নিয়নবাতির সহস্র আলোর রশ্মি কোটি নির্বুদ ঝর্ণা কণা হয়ে ঝরে পড়ছে গমগমে উচ্ছ্বল পিচ্ছিল রাজপথে ।
পরিযায়ী পর্যটকগন কলকাতার ফুসফুস থেকে কিছু শুদ্ধ বায়ু এবং আনন্দ – ফূর্তি সঙ্গী করে ঘরমুখো হচ্ছেন ধীরে ধীরে ।
বাকি কিছু আরও প্রমোদ পিপাসু এখনও ঝলমলে ঘোড়াটানা রথে আরূঢ় হয়ে কেউ নিজেকে রাজা , রানী , রাজপুত্র, রাজকুমারী ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে ইতিউতি স্বপ্ন ভ্রমণে ব্যস্ত । পড়ন্ত সন্ধ্যার শেষ হেমন্তের মৃদু ঠান্ডা হাওয়া প্রাণে খুশীর জোয়ার এনেছে ।
বাসস্টান্ডে ভীড় যাত্রীদের ।
ফুচকাওয়ালা খদ্দের সামলাতে – চতুর্ভুজ একেবারে ঘেমে নেয়ে একশেষ !
মনে মনে আওরাচ্ছে — এতো খেতেও পারে এই মোটাসোটা আদুরে দুলালীগুলো । গলে- পড়া ঢলঢলে ছলকে যাওয়া মায়েরাও কিছু কম যাচ্ছে না , লিপস্টিক বাঁচিয়ে
সমানে পাল্লা দিচ্ছে সোহাগীদের সঙ্গে !
শুধু আইসক্রিমওয়ালার ভীড় পাতলা হতে হতে রাত দশটা ।

ঠিক আলোকস্তম্ভের পাদপীঠে উদ্বিগ্ন মুখে বারবার ঘড়ি দেখছেন বছর পঁয়ত্রিশের সুবেশা ‘ দেখতে মন্দ না গোছের ‘ এক মহিলা ।
সঙ্গে আট দশ বছরের এক ছটফটে ছেলে । মাঝে মাঝে এগিয়ে যাচ্ছেন বাসের দিকে । আবার ফিরে আসছেন নিজের জায়গায় । মনে হয় কোনও বাসের অভ্যন্তরীণ অবস্থা তাঁর মনঃপূত নয় ।
ইতিমধ্যে ছেলের পাঁচটা ফুচকা এবং একটা ছোট্ট আইসক্রিম খাওয়া শেষ হয়ে গেছে । ছেলেকে সামলাবেন না বাসের খালি সিট খুঁজবেন বুঝে উঠতে পারছেন না ! এদিকে ঘড়ি ঠিক জানান দিচ্ছে রাত সাড়ে দশটা কিন্তু !
রুলার – ওয়ালা পুলিশের আনাগোনা শুরু হয়েছে ।
সামনে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল , ঠিক পেছনেই বিড়লা প্ল্যানেটোরিয়াম , পাশে বিশাল ময়দান ।
— সবমিলিয়ে মাত্র দুজনের কাঁধে পুরো দায়িত্ব । কাঁহাতক আর পারা যায় ! উপরি ইনকামও এখন পর্যন্ত কিছু আহামরি নয় ! কি রে বাপু, আজকাল কি সবাই নীতিনিষ্ঠ নিয়মবাগীশ হয়ে গেল নাকি রে ভাই ! — মনে মনে এইসবই গজরাচ্ছে মনে হয় পুলিশ দুটো ।

এদিকে মহিলাটির স্বযত্নে পরিপাটি করে সাজানো মুখে ঘামের বিন্দু জমতে শুরু করেছে । মাঝে মাঝে রুমাল বের করে মুছে নিচ্ছে চটপট ।
ক্রমশ কমে আসছে যানবাহন । এবারে যেন মরিয়া হয়েই কোনও গাড়ির লিফট চাইবেন মনস্থির করে ফেলেছেন ।
রাত্রি পৌনে এগারোটা প্রায় ।
আশেপাশে মানুষের ভিড়ও বেশ পাতলা হয়ে এসেছে ।
একটা গাঢ় লাল এবং একটা চকচকে কালো গাড়ি একটুখানি দাঁড়িয়েই সাঁ করে বেরিয়ে গেলো । — নাঃ একটাও নিল না ! ক্যাথেড্রিয়াল চার্চের ঢং ঢং ঘন্টা ধ্বনি , কাঁটায় কাঁটায় এগারোটা। পুলিশ একবার এসে কিছু বলে ঘাড় নেড়ে চলে গেছে ।
— ওইতো সামান্য দূরে একটা ধবধবে সাদা এসি গাড়ি আসছে হেলেদুলে মৃদু মন্দ বাতাসের মতো !
এবারে মহিলাটি যা থাকে কপালে- দানের ঘুঁটি চালার মতো নিজে না গিয়ে
ছেলেটিকে এগিয়ে দিলেন লাইটপোষ্টের সামনেই ব্রেক কষে থেমে যাওয়া গাড়িটার কাছে ।
অটোমেটিক উইন্ডোগ্লাস
খুলে গেলো চিচিং ফাঁকের মতো ।
যেন গোটা এক কালবোশেখী দলা পাকিয়ে আটকে আছে ছেলেটির গলার টাকরার কাছে ! হঠাৎই জ্বলন্ত লাভার টুকরোর মতো , বহুদিনের শেখানো অজীর্ণ বুলির খানিক বমির দমক ছিটকে এলো বাচ্চা ছেলেটির মুখ থেকে — স্যার , আমার মায়ের সঙ্গে একটু বসবেন ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress