Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পরিচায়ক || Jibanananda Das

পরিচায়ক || Jibanananda Das

মাঝে-মাঝে মনে হয় এ-জীবন হংসীর মতন-
হয়তো-বা কোনো-এক কৃপণের ঘরে;
প্রভাতে সোনার ডিম রেখে যায় খড়ের ভিতরে;
পরিচিত বিস্ময়ের অনুভবে ক্রমে-ক্রমে দৃঢ় হয় গৃহস্থের মন।
তাই সে হংসীরে আর চায় নাকো দুপুরে নদীর ঢালু জ’লে
নিজেকে বিম্বিত ক’রে;- ক্রমে দূরে-দূরে
হয়তো-বা মিশে যাবে অশিষ্ট মুকুরেঃ
ছবির বইয়ের দেশে চিরকাল- ক্রুর মায়াবীর জাদুবলে।
তবুও হংসীই আভা;- হয়তো-বা পতঞ্জলি জানে।
সোনায়-নিটোল-করা ডিম তার বিমর্ষ প্রসব।
দুপুরে সূর্যের পানে বজ্রের মতন কলরব
কন্ঠে তুলে ভেসে যায় অমেয় জলের অভিযানে।
কেয়াফুলস্নিগ্ধ হাওয়া স্থির তুলা দণ্ড প্রদক্ষিণ
ক’রে যায়;- লোকসমাগমহীন, হিম কান্তারের পার
ক’রে নাকো ভীতি আর মরণের অর্থ প্রত্যাহারঃ
তবুও হংসীর পাখা তুষারের কোলাহলে আঁধারে উড্ডীন।
তবুও হংসীর প্রিয় আলোকসামান্য সুর, শূন্যতার থেকে আমি ফেঁশে
এইখানে প্রান্তরের অন্ধকারে দাঁড়ায়েছি এসে;
মধ্য নিশীথের এই আসন্ন তারকাদের সঙ্গ ভালোবেসে।
মরঁখুটে ঘোড়া ওই ঘাস খায়,– ঘাড়ে তার ঘায়ের উপরে
বিনবিনে ডাঁশগুলো শিশিরের মতো শব্দ করে।
এই স্থান, হ্রদ আর, বরফের মতো শাদা ঘোড়াদের তরে
ছিলো তবু একদিন? র’বে তবু একদিন? হে কালপুরুষ,
ধ্রুব, স্বাতী, শতভিষা,
উচ্ছৃঙ্খল প্রবাহের মতো যারা তাহাদের দিশা
স্থির করে কর্ণধার?- ভূতকে নিরস্ত করে প্রশান্ত সরিষা।
ভূপৃষ্ঠের অই দিকে- জানি আমি- আমার নতুন ব্যাবিলন
উঠেছে অনেক দূর;- শোনা যায় কর্নিশে সিঙ্ঘের গর্জন।
হয়তো-বা ধূলোসাৎ হ’ইয়ে গেছে এত রাতে ময়ূরবাহন।
এই দিকে বিকলাঙ্গ নদীটির থেকে পাঁচ-সাত ধনু দূরে
মানুষ এখনও নীল , আদিম সাপুড়েঃ
রক্ত আর মৃত্যু ছাড়া কিছু পার নাকো তারা খনিজ, অমূল্য মাটি খুঁড়ে।
এই সব শেষ হ’ইয়ে যাবে তবু একদিন;- হয়তো-বা ক্রান্ত ইতিহাস
শানিত সাপের মতো অন্ধকারে নিজেকে করেছে প্রায় গ্রাস।
ক্রমে এক নিস্তব্ধতাঃ নীলাভ ঘাসের ফুলে সৃষ্টির বিন্যাস
আমাদের হৃদয়কে ক্রমেই নীরব হ’তে বলে।
যে-টেবিল শেষ্রাতে দোভাষীর- মাঝ্রাতে রাষ্ট্রভাষাভাষীর দখলে
সেই সব বহু ভাষা শিখে তবু তারকার সন্তপ্ত অনলে
হাতের আয়ুর রেখা আমাদের জ্বলে আজো ভৌতিক মুখের মতন;
মাথার সকল চুল হ’য়ে যায় ধূসর- ধূসরতম শণ;
লোষ্ট্র, আমি, জীব আর নক্ষত্র অনাদি বিবর্ণ বিবরণ
বিদূষ্ক বামনের মতো হেসে একবার চায় শুধু হৃদয় জুড়াতে।
ফুরফুরে আগুনের থান তবু কাঁচিছাঁটা জামার মতন মুক্ত হাতে
তাহার নগ্নতা ঘিরে জ্ব’লে যায়- সে কোথাও পারে না দাঁড়াতে।
নীলিমাকে যতদূর শান্ত নির্মল মনে হয়
হয়তো-বা সে-রকম নেই তার মহানুভবতা।
মানুষ বিশেষ-কিছু চায় এই পৃথিবীতে এসে
অতীব গরিমাভরে ব’লে যায় কথা;
যেন কোমো ইন্দ্রধনু পেয়ে গেলে খুশি হ’তো মন।
পৃথিবীর ছোট-বড়ো দিনের ভিতর দিয়ে অবিরাম চ’লে
অনেক মুহূর্ত আমি এ-রকম মনোভাব করেছি পোষণ।
দেখেছি সে-সব দিনে নরকের আগুনের মতো অহরহ রক্তপাত;
সে-আগুন নিভে গেলে সে-রকম মহৎ আঁধার,
সে-আঁধারে দুহিতারা গেয়ে যায় নীলিমার গান;
উঠে আসে প্রভাতের গোধূলির রক্তচ্ছটা-রঞ্জিত ভাঁড়।
সে-আলোকে অরণ্যের সিংহকে ফিকে মরুভূমি মনে হয়;
মধ্য সমুদ্রের রোল-মনে হয়—দয়াপরবশ;
এরাও মহৎ- তবু মানুষের মহাপ্রতিভার মতো নয়।
আজ এই শতাব্দীর পুনরায় সেই সব ভাস্বর আগুন
কাজ ক’রে যায় যদি মানুষ ও মনীষী ও বৈহাসিক নিয়ে-
সময়ের ইশারায় অগণন ছায়া-সৈনিকেরা
আগুনের দেয়ালকে প্রতিষ্ঠিত করে যদি উনুনের অতলে দাঁড়িয়ে,
দেওয়ালের ’পরে যদি বানর, শেয়াল, শনি, শকুনের ছায়ার জীবন
জীবঙ্কে টিটকারি দিয়ে যায় আগুনের রঙ আরো বিভাসিত হ’লে-
গর্ভাঙ্কে ও অঙ্কে কান কেটে-কেটে নাটকের হয় তবু শ্রুতিবিশোধন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *