Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পদাতিক কবি’ সুভাষ মুখোপাধ্যায় || Sankar Brahma

পদাতিক কবি’ সুভাষ মুখোপাধ্যায় || Sankar Brahma

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় ১৯১৯ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার (ব্রিটিশ ভারতের) নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
পিতা ক্ষিতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন আবগারি বিভাগের আধিকারিক। মাতার নাম যামিনী দেবী। পিতার বদলির চাকুরির কারণে তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে। এই স্থান পরিবর্তন তাঁর জীবনে বিস্তর প্রভাব বিস্তার করেছিল।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় ভবানীপুর মিত্র স্কুল থেকে প্রবেশিকা (১৯৩৭ সাল), স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আইএ (১৯৩৯ সাল) পাস করেন। ১৯৪১ সালে দর্শনে অনার্স – সহ স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শুরু করলেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার ফলে প্রথাগত পড়াশোনা আর সেভাবে এগোয়নি।

তাঁর সমসাময়িক সুকান্ত ভট্টাচার্যের মতো সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও অল্প বয়সেই দৃঢ় রাজনৈতিক বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল। তিনি সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন এবং কলেজের বছরগুলিতে বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। স্নাতক হওয়ার পর, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন । এইভাবে তিনি একজন দলীয় কর্মী এবং কর্মী হিসাবে প্রথম হাতের অভিজ্ঞতার সাথে মুষ্টিমেয় সাহিত্য অনুশীলনকারীদের একজন হয়ে ওঠেন।
এ সময় তিনি কবি সমর সেনের সান্নিধ্যে মার্কসীয় রাজনীতি ও লেবার পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪০ সালে তাঁর পদাতিক (১৯৪০ সাল) কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হলে তিনি শ্রমজীবী জনসাধারণের মুক্তিপ্রয়াসী কবি হিসেবে বাংলা কবিতাঙ্গনে পরিচিত হন।
সেই সময় থেকেই ‘পদাতিক কবি’ হিসাবে তার পরিচিতি কবি-মহলে ছড়িয়ে পড়ে।

পদাতিক’ প্রারম্ভে ছিল ‘প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য কাঠফাঁটা রোদে সেঁকে চামড়া’। কথ্যরীতিতে রচিত তার কবিতা সহজবোধ্যতার কারণে ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর আনুকূল্য লাভ করে। মানবিক বোধ ও রাজনৈতিক বাণী তার কবিতার অন্যতম প্রধান অভিমুখ। পদাতিক কাব্যগ্রন্থের মে দিনের কবিতা কেবল শ্রমিক শ্রেণির এক বিজয়কাব্য নয়, এতে ব্যক্ত হয়েছে ঔপনিবেশবাদের উচ্ছেদসাধনের ঋজু প্রত্যয় –

“শতাব্দী লাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা;
মৃত্যুর ভয়ে ভীরু বসে থাকা, আর না –
পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা।
প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা,
দুর্যোগে পথ হয়, হোক দুর্বোধ্য
চিনে নেবে যৌবন আত্মা।”

তাঁর কাব্যভাষা নিরলংকার। নিজ উপলব্ধি ও প্রত্যয় তিনি গদ্যের সুরে ব্যক্ত করেছেন। এক স্বতন্ত্র উজ্জ্বল কণ্ঠস্বর। অগ্রজ আধুনিক কবিদের মতো তিনি দুর্বোধ্য নন, দুরূহ নন। সহজেই তার কবিতা পড়া যায়, বোঝা যায় এবং অনুভব করা যায়।[চল্লিশের যুদ্ধ-দাঙ্গা-তেভাগা-মন্বন্তর সঙ্কুলিত রাজনৈতিক টালমাটালের যুগসন্ধিক্ষণে তিনি উচ্চারণ করেছিলেন —

“আমি আসছি—
দুহাতে অন্ধকার ঠেলে ঠেলে আমি আসছি।
সঙীন উদ্যত করেছ কে? সরাও।
বাধার দেয়াল তুলেছ কে? সরাও।
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে আমি আনছি
দূরন্ত দুর্নিবার শান্তি।”

জগৎজুড়ে যে পথে ‘শান্তি’ আনা সম্ভব, সেই পথেররেখা তার কাছে ছিল অত্যন্ত স্পষ্ট। তার কবিতায় সেই পথনির্দেশিকাও আছে। কবিতাটির নাম, ‘বাঁয়ে চলো, বাঁয়ে’—

“বাঁয়ে চলো ভাই,
বাঁয়ে—
কালো রাত্রির বুক চিরে,
চলো
দুহাতে উপড়ে আনি
আমাদেরই লাল রক্তে রঙিন সকাল।”

কখনও কখনও প্রতীয়মান হয় তার কবিতা চড়া সুরে বাঁধা। চল্লিশের দশক থেকে তার অ-রোম্যান্টিক গদ্যপ্রধান কাব্যভঙ্গী পরবর্তীকালের কবিদের কাছে অনুসরণীয় হয়ে ওঠে। সমাজের তৃণমূল স্তরে নেমে গিয়ে সেই সমাজকে প্রত্যক্ষ করে তবেই কবিতা রচনায় প্রবৃত্ত হতেন তিনি। আদর্শ তার কবিতাকে দিয়েছিল পরিব্যাপ্ত জনপ্রিয়তা। তবে কবিতার মাধ্যমে একটি বার্তা পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে গিয়ে তিনি অক্ষরবৃত্তের চালে আধুনিক কবিতার গদ্যঋদ্ধ নতুন রূপ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
সে সময়ই কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৪২ সালে পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন।
১৯৪২ সালের মার্চ মাসে একজন সহ-লেখক ও মার্কসবাদী কর্মী সোমেন চন্দকে হত্যার প্রতিক্রিয়ায় গঠিত “ফ্যাসিস্ট বিরোধী লেখক ও শিল্পী সমিতি” এর অন্যতম নেতা ছিলেন তিনি।
১৯৪৮ সালে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ হলে তিনি আব্দুর রাজ্জাক, সতীশ পাকড়াশী, পারভেজ শহীদি, চারু মজুমদার, গিরিজা মুখার্জী, চিন্মোহন সেহানবীশ প্রমুখ ব্যক্তির সঙ্গে বন্দী হন। ১৯৫০ সালের নভেম্বর মাসে কারাগার থেকে মুক্তি পেলে একটি প্রকাশনা সংস্থায় তিনি সাবএডিটার হিসেবে নিযুক্ত হন। এ বছরই তাঁর চিরকুট (১৯৫০ সাল) কাব্য প্রকাশিত হলে তিনি মার্কসীয় বস্তুবাদী ধারার কবিরূপে খ্যাতি লাভ করেন। পরের বছর (১৯৫১) তিনি পরিচয় পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
তিনি ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান বাঙালি কবি।
পরবর্তীতে ১৯৭০ এর দশকে, সুভাষের কবিতা আখ্যান এবং রূপকতার দিকে মোড় নেয়। কিন্তু তিনি কখনই তার অনন্য কণ্ঠ হারাননি। পদ্য ছাড়াও, সুভাষ উপন্যাস, প্রবন্ধ এবং ভ্রমণকাহিনী সহ গদ্যের রচনাও লিখেছেন। তিনি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকীয় কর্মীদের দায়িত্ব পালন করে সাংবাদিকতায়ও সক্রিয় ছিলেন। তিনি বাংলা সাহিত্য পত্রিকা পরিচয়ের সম্পাদক ছিলেন । তিনি শিশুদের জন্য একজন দক্ষ এবং জনপ্রিয় লেখকও ছিলেন। ষাটের দশকের গোড়ার দিকে কয়েক বছর তিনি সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলা শিশুতোষ সাময়িকী সন্দেশ সম্পাদনা করেন।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় কেবল কবি নন, শক্তিমান গদ্য লেখক ছিলেন। আমার বাংলা (১৯৫১ সাল), অক্ষরে অক্ষরে (১৯৫৪ সাল), কথার কথা (১৯৫৫ সাল) প্রভৃতি গদ্য রচনায় পাওয়া যায় তাঁর মনস্বিতার পরিচয়। সাহিত্য-সংস্কৃতির সাংগঠনিক নেতৃত্বেও তিনি পারদর্শিতার পরিচয় দেন। ১৯৫৮ সালে তিনি তাসখন্দে অনুষ্ঠিত আফ্রো-এশীয় লেখক সম্মেলনে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।

ছোটোবেলায় তিনি বাড়ির পিছন দিকে ধোপাদের কাপড়কাচার শব্দ শুনতেন , তাঁর কানে লেগে ছিল সেই তাল, আর ছিল লোকমুখের স্পন্দের উপর ভর করার সাহস, কথার চালগুলি ভালো করে লক্ষ করবার ইচ্ছে। ভেবেছিলেন, লিখতে হবে ঠিক তেমন করে, যেমনভাবে কথাবার্তা বলে লোকে, ছন্দকে তুলে আনতে হবে কেবল সেইখান থেকে। আর, ঠিক সেখান থেকে তুলতে পেরেছেন বলেই বাংলা অক্ষরবৃত্তে একটা স্বাভাবিক বাচন তৈরি হয়ে গেছে তাঁরই কবিতার পথ ধরে।’ এই হচ্ছে স্বনামধন্য বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবি হয়ে-ওঠার প্রস্তুতিপর্ব।
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের মাত্রারীতিতে তিনি যে বৈপ্লবিক এক বদল এনে দিয়েছেন, তা নিয়ে সুভাষের ব্যাখ্যা… বিশ্লেষণ করাতে ছন্দজ্ঞানের দরকার হয় না কবির, দরকার হয় কেবল বোধময় ছন্দজ্ঞানের।

চল্লিশের দশকে ‘পদাতিক’-য়ের কবি পার করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ, দাঙ্গা। সদস্য ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির, স্বাধীনতার পর তা নিষিদ্ধ হওয়ায় জেলেও কাটে কিছুকাল, লিখেছিলেন ‘শতাব্দীলাঞ্ছিত আর্তের কান্না/ প্রতি নিশ্বাসে আনে লজ্জা।’ বহুকাল পরে আবার লিখেছিলেন ‘লেনিন যেন চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বললেন,/ শতাব্দী শেষ হয়ে আসছে—/ একটু পা চালিয়ে, ভাই, একটু পা চালিয়ে।।’

সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জীবনের প্রতিটি পর্বে লক্ষ্য করা যায় মানবীয় বোধের উদ্বোধন। তিনি তাঁর সাহিত্য-সাধনায় মানুষের অসীম সম্ভাবনার কথা দৃঢ় প্রত্যয়ে ব্যক্ত করেন। এজন্য বলা হয়েছে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সাহিত্য-সাধনা ছিল তাঁর জীবন-সাধনার অঙ্গ। সমাজ, রাজনীতি, সাহিত্য, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সবকিছুর কেন্দ্রে তিনি মানুষকে স্থাপন করে জীবনের সদর্থক দিকের উন্মোচনা করেন। এ ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর কবিতাকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করে তুলেছে । কবিতাকে তিনি শ্রমশীল, উৎপাদনক্ষম মানুষের উজ্জীবনের মন্ত্র হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাকে তিনি সাহিত্যের প্রকাশে রূপান্তরিত করেছিলেন। তাঁর কবিতায় কবি ও কর্মীর মেলবন্ধন ঘটতে দেখা যায়। তিনি কবিতায় দুর্বোদ্ধতা সর্বদা পরিহার করার চেষ্টা করেছেন। কেননা তাঁর লক্ষ্য ছিল জনসাধারণের চেতনাকে জাগ্রত ও শাণিত করা। সে লক্ষ্যে তিনি সমাজের সর্বস্তরে তাঁর কণ্ঠস্বর পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। তাছাড়া সারল্য কবিতার একটি প্রধান গুণ হিসেবে তিনি বিবেচনা করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, সমাজের কবিকে সুবোধ্য হতে হয়। ফলে সমাজমনস্কতা এবং রাজনীতি-চেতনার স্বার্থেই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতায় সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রামের ছবি চিত্রিত হয়েছে।

সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে – ফুল ফুটুক (১৯৫৭ সাল), যত দূরেই যাই (১৯৬২ সাল), কাল মধুমাস (১৯৬৬ সাল), এই ভাই (১৯৭১ সাল), ছেলে গেছে বনে (১৯৭২ সাল) ও ধর্মের কল (১৯৯১ সাল) প্রধান। গদ্যগ্রন্থ: ক্ষমা নেই (১৯৭২ সাল), খোলা হাতে খোলা মনে (১৯৮৭ সাল) প্রভৃতি। আত্মজীবনী: আমাদের সবার আপন ঢোলগোবিন্দের আত্মদর্শন (১৯৮৭ সাল), ঢোলগোবিন্দের মনে ছিল এই (১৯৯৪ সাল)। উপন্যাস : হাংরাস (১৯৭২ সাল), কে কোথায় যায় (১৯৭৬ সাল), কাঁচা-পাকা (১৯৮৯ সাল)। উল্লেখ্য যে, কমরেড, কথা কও (১৯৯০ সাল) গ্রন্থ প্রকাশের আগেই ১৯৮১ সালেই কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ থেকে তিনি অব্যাহতি নেন।

কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী ও অন্যান্য লেখা নিয়ে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ৭০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আরও লেখা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। বিভিন্ন সংগঠন, পত্রিকা সম্পাদনাসহ নানা রকম কাজেও তিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নানামুখী সংবেদনশীল ভূমিকায়ও তৎপর ছিলেন তিনি।
১৯৩৫ সালে ডিসেম্বরে ‘নিখিল ভারত প্রগতি লেখক’-এর ইস্তেহার প্রকাশিত হয়, এরই সূত্র ধরে ১৯৩৬ সালে ‘নিখিল ভারত প্রগতি লেখক সংঘ’-এর গোড়াপত্তন হয়। এর ফলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী মানস-চেতনা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে স্পষ্ট হতে থাকে। ১৯৩৬ সালের ২৫শে জুন কলকাতায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নিখিল বঙ্গ প্রগতি লেখক সংঘ’ গঠিত হয়। এই উদ্যোগের সঙ্গে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও জড়িত ছিলেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এই লেখক সংঘের প্রথম সভাপতি ছিলেন নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত , প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ গোস্বামী এবং কোষাধ্যক্ষ ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার । এই উদ্যোগের সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন–হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, ড. ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, নীরেন্দ্রনাথ রায়, হিরণকুমার সান্যাল, আবু সায়ীদ আইয়ুব, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে ও সমর সেন প্রমুখ।
এটি পরিলক্ষিত যে, ১৯৩০ সাল পর্যন্ত সৃজনশীল সাহিত্যে মার্কসীয় চেতনার প্রকাশ ছিল খুবই সীমাবদ্ধ। পরিচয় (১৯৩১ সাল) সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশ হলে–তা মার্কসবাদী চেতনা ধারণের অন্যতম বাহন হয়ে ওঠে। ১৯৩৯ সালের মধ্যেই অবিভক্ত বাংলায় ২৮টি জেলায় কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সংগঠন গড়ে উঠলে–সমাজে সমাজতাত্ত্বিক চেতনার প্রভাববলয় বিস্তৃত হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় লেখক-সাংস্কৃতিক কর্মীরা জীবনবাদী প্রগতিশীল চেতনার উন্মেষ ঘটাতে থাকেন। অন্যদিকে অবিভক্ত ভারতবর্ষ তখন ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শাসন দ্বারা শৃঙ্খলিত ও পরাধীন। এমন সময়কালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পদাতিক’ প্রকাশিত হয় ১৯৪০ সালে।
১৯৪০ সালে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘পদাতিক’ যখন গ্রন্থাকারে বের হয়, তখন কবির বয়স মাত্র একুশ। গ্রন্থের কবিতাগুলো লেখা হয়েছে–১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ হিসেবে কবির এই কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের পরপরই হৈচৈ ফেলে দেয়। গ্রন্থের কবিতাগুলো ছড়িয়ে পড়লো মানুষের মুখে মুখে, সাম্যবাদী আন্দোলনের কর্মীদের কাছে হয়ে উঠলো এই কাব্যগ্রন্থের পংক্তিগুলো অগ্নিময় উচ্চারণ, যা তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরণিত করলো।

‘পদাতিক’ কাব্যগ্রন্থটি পূর্ববর্তী কল্লোল প্রজন্মের কবিদের থেকে স্পষ্ট প্রস্থানের প্রতিনিধিত্ব করে; এবং সুভাষের স্বতন্ত্র, সরাসরি কণ্ঠস্বর, তার প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং আমূল বিশ্ব-দৃষ্টিভঙ্গির সাথে যুক্ত, তাকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সুভাষ তাঁর কবিতায় সেই যুগের ব্যাপক উত্থান-পতনের সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন যা বাঙালি সমাজকে ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত বিদীর্ণ করেছিল।
যেসব সমালোচক রাজনৈতিক বিষয়-আশয় নিয়ে লেখা কবিতাকে বাঁকাচোখে দেখতে অভ্যস্ত, তাঁরাও ‘পদাতিক’ এর কবিতাকে অস্বীকার না করে, বরং প্রশংসা করতে এগিয়ে এলেন।
‘পদাতিক’ প্রকাশের বছরেই কবি, সমালোচক ও সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু এই গ্রন্থের কবিতা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা লিখলেন। বুদ্ধদেব বসু লিখলেন: ‘সুভাষ মুখোপাধ্যায় দুটি কারণে উল্লেখযোগ্য: প্রথমত, তিনি বোধ হয় প্রথম বাঙালি কবি যিনি প্রেমের কবিতা লিখে কাব্যজীবন আরম্ভ করলেন না। এমনকি, প্রকৃতি বিষয়ক কবিতাও তিনি লিখলেন না; কোনো অস্পষ্ট, মধুর সৌরভ তার রচনায় নেই, যা সমর সেনেরও প্রথম কবিতাগুলিতে লক্ষণীয় ছিলো। দ্বিতীয়ত, কলাকৌশলে তাঁর দখল এতই অসামান্য যে কাব্য রচনায় তাঁর চেয়ে ঢের বেশি অভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরও এই ক্ষুদ্র বইখানায় শিক্ষণীয় বস্তু আছে বলে মনে করি।’ এই আলোচনায় বুদ্ধদেব বসু ‘পদাতিক’ কাব্যগ্রন্থের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন, আলোচনা করেছেন ছন্দ ও বিষয় নিয়েও। এই আলোচনার এক অংশে যথার্থ বলেছেন তিনি : ‘জনগণের কবি’ হতে যাওয়ার এই বিপদ সম্বন্ধে সুভাষ মুখোপাধ্যায় অনবহিত নন। ‘পদাতিকে’ রয়েছে সরলতার পাশাপাশি জটিলতা, নিঃসংকোচ, উচ্চ ঘোষণার পাশে-পাশে ব্যঙ্গের চাতুরি, ধ্বনির বিচ্ছুরিত আভা। সমসাময়িক অনেক কবির কাছেই তিনি পাঠ নিয়েছেন–বিশেষত বিষ্ণু দে ও সমর সেনের কাছে– কিন্তু তাঁর লেখা অন্য কারো অক্ষরের উপর মকশো-করা নয়; এত অল্প বয়সে যে নিজের একটি বিশিষ্ট রীতি তিনি নির্মাণ করতে পেরেছেন, এতেই তাঁর প্রতিভার পরিচয়।’

১৯৫১ সালে সুলেখিকা গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি বিবাহ করেন। ১৯৫২ সালে সস্ত্রীক বজবজের শ্রমিক বস্তির এক মাটির ঘরে এসে ওঠেন। আত্মনিয়োগ করেন সেই অঞ্চলের চটকল মজুর সংগঠনের কাজে। পরে কলকাতা বন্দর অঞ্চলে ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের কাজও করেছেন। ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হলে পুরনো পার্টিতেই থেকে যান। তাঁদের তিন পালিত কন্যা।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী সমিতির সহ-সভাপতি হয়ে জন্মভূমির ঋণ শোধে এগিয়ে এসেছিলেন কবি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন তিনি ছিলেন ভিয়েতনামে, সেখান থেকে এসেই তিনি বলেছিলেন ‘চোখের সামনে জ্বলছে আমার প্রিয় জন্মভূমি, বাংলাদেশ। বাতাসে ভাসছে আমার ধর্ষিতবোনের চিৎকার–দু’আঙুলে কান চাপা দেই। বানের জলের মতো সর্বহারা মানুষ আসছে এপারে, প্রাণ নিয়ে সম্ভ্রম বাঁচাতে। কী লিখব আমি ভিয়েতনাম নিয়ে? আমার সামনে আর এক ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ।’ প্রকৃত কবির মানববোধের উচ্চারণই সেদিন অন্তর্গূঢ়-চৈতন্যের কণ্ঠলগ্ন হয়ে জেগে উঠেছিল। সুভাষ মুখোপাধ্যায় ক্লান্তিহীনভাবে কবিতা লিখেছেন, উপহার দিয়েছেন চেতনা জাগানো স্মরণীয় কাব্যপংক্তি। তিনি ছন্দ ও শব্দের বিচিত্র ব্যবহার করেছেন কবিতায়, কবিতার আঙ্গিক পরিবর্তনেও হয়েছেন বিভিন্ন অধ্যায়ে সফল। তাঁর কাব্য-ভূমিকা দীর্ঘতর হয়েছে, এই দীর্ঘকালে অনেক বাঁকবদল রয়েছে। তবে, তাঁর কাব্যিক জীবন-দর্শনে বিভিন্ন মোচড় লাগলেও, মূল ভূমি পুরোপুরি পরিবর্তন করে ফেলেননি।
পদাতিক কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘মে-দিনের কবিতা’– এই কবিতার পংক্তি : –


‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,
চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।’


এই ধরনের স্মরণীয় পংক্তির মত আরও স্মরণীয় পংক্তি ‘পদাতিক’ কাব্যগ্রন্থে রয়েছে, যেমন–


‘কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?
কুয়াশা কঠিন বাসর যে সম্মুখে।
লাল উল্কিতে পরস্পরকে চেনা–
দলে টানো হতবুদ্ধি ত্রিশঙ্কুকে,
কমরেড, আজ নবযুগ আনবে না?’


‘পদাতিক’র পর ‘চিরকুট’ কাব্যগ্রন্থের কবিতা রচিত হয় ১৯৪১ থেকে ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। এই কাব্যগ্রন্থে ‘পদাতিক’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাসমূহের আরও সংহত ও উজ্জ্বল রূপ আমরা পাই। যেমন–
‘পেট জ্বলছে, ক্ষেত জ্বলছে
হুজুর, জেনে রাখুন
খাজনা এবার মাপ না হলে
জ্বলে উঠবে আগুন।’

১৯৪৮ সালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আর একটি কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিকোণ’ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থে আবেগ ও সরলীকরণ অনেকটা সংহত বাক্যে স্ফূর্তি লাভ করে। যেমন :


‘লক্ষ লক্ষ হাতে
অন্ধকারকে দু’টুকরো করে
অগ্নিকোণের মানুষ
সূর্যকে ছিঁড়ে আনে।
কোটি কণ্ঠের হুঙ্কারে লাগে
বজ্রের কানে তালা।’


পদাতিক, চিরকুট ও অগ্নিকোণের পর সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা ‘ফুল ফুটুক’ কাব্যগ্রন্থে ভিন্নমাত্রায় বাঁকবদলের পরিচয় নিয়ে উপস্থিত হয়। ১৯৫১ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে লেখা এই গ্রন্থের কবিতাগুলো শহর-গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনের গভীর তাৎপর্য ও ব্যঞ্জনায় উন্মুখ হয়। এই সময়কালে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় সংসার জীবনে প্রবেশ করেন, অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও বিভিন্নমুখী পরিবর্তন ঘটে, বিশ্বে বিভিন্ন ঘটনার অভিঘাত নতুন তাৎপর্যে উপস্থিত হয়, ভারতবর্ষ স্বাধীন ও বিভক্ত হয়, কমিউনিস্ট পার্টির রণরীতি বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিধা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়ে প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে পড়ে। এমন পরিস্থিতি নিয়ে কবির মানস-প্রতিক্রিয়া ভিন্ন হতেই পারে। কবির দায়িত্ব শুধু কবিতা লেখা নয়, যুগের সত্যকে আবিষ্কার করা, সেইসাথে সেই সত্যকে কবিতার প্রাণময়তা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা। এই দিক থেকে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মত কবিরা–তো অগ্রগামী।
‘ফুল ফুটুক’ কাব্যগ্রন্থের ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক’ কবিতায় সেই বহুল পরিচিত পংক্তি আমরা পাই–

‘ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।’

এই পংক্তিতে কবির কাব্য-ব্যঞ্জনা নতুন মাত্রা লাভ করে। আমরা পাই ‘সালেমনের মা’ নামক কবিতার পংক্তি:

‘মিছিলের গলায় গলা মিলিয়ে
পিচুটি পড়া চোখের দুকোণ জলে ভিজিয়ে
তোমাকে ডাকছে শোনো,
সালেমনের মা–’

আমরা পাই চিত্রকল্প নির্ভর পংক্তি–যে লোকটা একটু আগে গলায় দড়ি দিতে চেয়েছিল/এতক্ষণ সে বউয়ের গলা জড়িয়ে শুয়েছে (অগ্নিগর্ভ), কী এক গভীর চিন্তায়/কপাল কুঁচকে আছে/চড়িয়ালের রাস্তা (এক অসহ্য, রাত্রি), যখন ভোঁ বাজতেই/মাথায় চটের ফেঁসো জড়ানো এক সমুদ্র (সুন্দর) ইত্যাদি।

‘ফুল ফুটুক’ কাব্যগ্রন্থের পর্যায়ে এসে যে বাঁক বদলের শক্তি নিয়ে কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় আরও এগিয়ে যাওয়ার সৃজনশীলতা আয়ত্তে আনেন, তারই বিকশিত পথে তিনি ষাটের দশক, সত্তর দশক, আশির দশক, নব্বইয়ের দশক হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পথ হেঁটেছেন।
২০০১ সালের ৪ঠা অক্টোবর সংখ্যা ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ‘পিছু হটো’ নামক কবিতা:


‘ঝাঁঝালো রোদে বুঁজে আসছে চোখ
মাথা ঝিমঝিম করছে
মুখ থুবড়ে পড়ার আগে
চেয়ারটা ধরে
কেউ তাকে
পেছনে হটিয়ে দিক।’


উল্লিখিত কবিতার পংক্তিতে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের নিজস্ব কবিতা-ভঙ্গিরই রূপ আমরা খুঁজে পাই। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা ও কবিতা নিয়ে এত আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, তাতেও তাঁকে ‘পেছনে হটিয়ে’ দেওয়া সম্ভব হয়নি, ভবিষ্যতেও সম্ভব হবে না, বাংলার কবিতার ঐশ্বর্যে বিকাশে তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে।
সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জবানীতেই ব্যক্ত করেছেন তিনি কেন কবিতা লিখতেন–‘কথায় চিড়ে ভেজে না, কিন্তু মন ভেজে। অন্যের মনকে নাড়ানো যায়। তাতে কাজ হয়। কথা আর কাজের মধ্যস্থ হল মন। মনকে নাড়াতে পারলেই হাত চলে। আমি চাই কবিতা দিয়ে মানুষের হাতগুলোকে এমনভাবে লাগাতে যাতে দুনিয়াটা মনের মত করে আমরা বদলে নিতে পারি।’। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর কবিতা বদলিয়েছেন কিন্তু তাঁর বোধের ভিত্তি ও দর্শন আমূলে বদলে ফেলেননি, ধারাবাহিকতার সামঞ্জস্যে নিজের প্রতিকৃতি ও কবিতার প্রকৃতি গড়ে তুলেছেন। তাই তিনি দৃঢ়ভাবে বলতে পারেন–


‘আমি চাই কথাগুলোকে
পায়ের ওপর দাঁড় করাতে।
আমি চাই যেন চোখ ফোটে
প্রত্যেকটি ছায়ার।
স্থির ছবিকে আমি চাই হাঁটাতে।
আমাকে কেউ কবি বলুক আমি চাই না।
কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত
যেন আমি হেঁটে যাই।
আমি যেন আমার কলমটা
ট্র্যাক্টরের পাশে
নামিয়ে রেখে বলতে পারি–
এই আমার ছুটি
ভাই, আমাকে একটু আগুন দাও।’

ইংরেজি অনুবাদে সুভাষের সবচেয়ে পরিচিত ত্রিশটি কবিতার একটি বই, ‘অ্যাজ ডে ইজ ব্রেকিং’, ২০১৪ সালে বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক লেখক/সমালোচক অঞ্জন বসু দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। বইটিতে কবির কাজের একটি বরং বিশদ ভূমিকাও রয়েছে।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় ১৯৮৩ সালে আফ্রো-এশীয় লেখক সমিতির সংগঠক-জেনারেল ছিলেন।
এছাড়াও তিনি ১৯৮৭ সাল থেকে সাহিত্য একাডেমির নির্বাহী বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

(পুরস্কার ও সম্মাননা)

১৯৬৪ সালে সাহিত্য একাডেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন (‘যত দূরেই যাই’ কাব্যগ্রন্থের জন্য)।
১৯৭৭ সালে অ্যাফ্রো-এশিয়ান লোটাস প্রাইজ পান।
কুমারন আসান পুরস্কার , ১৯৮২ সাল।
মির্জো তুরসুনজোদা পুরস্কার (USSR সোভিয়েট ল্যান্ড), ১৯৮২ সাল।
আনন্দ পুরস্কার পান , ১৯৯১ সালে।
১৯৯১ সালে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার পান।
২০০৩ সালে ভারত সরকারের পদ্মভূষণে ভূষিত হন।
বিশ্বভারতী তাঁকে দেশিকোত্তম উপাধিতে ভূষিত করেছিল।
২০০৯ সালে কবির স্মরণে ‘পদাতিক’ বইটির নামানুসারে শিয়ালদহ-এনজেপি এক্সপ্রেসের নামকরণ করা হয় “পদাতিক এক্সপ্রেস”।
২০১০ সালে কলকাতার গড়িয়া-বাজার মেট্রো রেলওয়ে স্টেশন কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনের নামকরণ করা হয়েছে কবির নামে।

মুখোপাধ্যায় তাঁর শেষ বছরগুলিতে রাজনীতির প্রতি মোহভঙ্গ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি গুরুতর হার্ট এবং কিডনি রোগে ভুগছিলেন এবং ২০০৩ সালের জুলাই মাসে আপোষহীন কবি কলকাতায় মারা যান। তার বয়স ছিল ৮৪ বছর।
—————————————————————-
[সংগৃহীত ও সম্পাদিত। তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া]

সূত্র নির্দেশিকা –

“প্রত্যেকের কবি শেষ বিদায় নিলেন: মৃত্যু [সুভাষ মুখোপাধ্যায়]” । দ্য টেলিগ্রাফ (কলকাতা) । ৯ই জুলাই ২০০৩ সাল। ৩রা মার্চ ২০১৬ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । সংগৃহীত ২২শে মে ২০১৬ সাল।

“প্রত্যেক মানুষের কবির জন্য বিপ্লবের সমাপ্তি” । টেলিগ্রাফ কলকাতা । ৯ই জুলাই ২০০৩ সাল. ২রা ডিসেম্বর ২০১৩ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । সংগৃহীত ২৪শে জুন ২০১২ সাল।

সুভাষ মুখোপাধ্যায়; সুরভী বন্দ্যোপাধ্যায় (১লা জানুয়ারি ১৯৯৬ সাল)। টুপি . ওরিয়েন্ট ব্ল্যাকসওয়ান। পৃষ্টা. ৩. আইএসবিএন 978-81-250-0936-8. সংগৃহীত ২৪শে জুন ২০১২ সাল।

১৭৫তম ইয়ার মেমোরেশন ভলিউমে স্কটিশ চার্চ কলেজের কিছু প্রাক্তন ছাত্র । স্কটিশ চার্চ কলেজ, এপ্রিল ২০০৮ সার, পৃষ্ঠা. ৫৯১.

“পদ্ম পুরস্কার” (পিডিএফ) । স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ভারত সরকার। ২০১৫ সাল. আর্কাইভ করা (PDF) মূল থেকে ১৯শে অক্টোবর ২০১৭ সাল। সংগৃহীত – ২১শে জুলাই ২০১৫ সাল।

“অড টু এ কবি” দ্য টেলিগ্রাফ কলকাতা, ৬ই আগস্ট ২০০৩ সাল।

“কলকাতা মেট্রো নিউ গড়িয়ায় পৌঁছেছে” । রেলওয়ে গেজেট। ৭ই অক্টোবর ২০১২ সাল। ১৩ই জানুয়ারী ২০১২ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । সংগৃহীত ২৩শে জুলাই ২০১১ সাল।

“‘অগ্রসর’ অঞ্চলের জন্য ট্র্যাক ও ট্রেন” । টেলিগ্রাফ কলকাতা । ৫ই অক্টোবর ২০০৯ সাল। ৪ঠা মার্চ ২০১৬ সালে মূল থেকে আর্কাইভ করা হয়েছে । সংগৃহীত ৭ই অক্টোবর ২০১২ সাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress