নিখোঁজ
অরুপকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।একটা চিঠি লিখে চলে গেছে।চিঠিটা কাউকে উদ্দেশ্য করে লেখি নি।
পর্ব..১
মা তুমি ঐ লোকটার সাথে নিশ্চিন্তে থেকো।নিজের বাবাকে আমি লোকটা বলতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। দিনের পর দিন এরকম কঠোর শাসনে আমায় বড় করেছেন,একটুও কোনদিন হেসে ও কথা বলেন নি। তোমার সাথে তো কোনদিন রুঢ় ব্যবহার করেন নি।তবে আমার বেলায় কেন?
আচ্ছা যাবার বেলায় আমার একটা প্রশ্ন ছিল,আমি কি উনার ছেলে নয়?
মা তোমায় নিচু করছি না। আমি জানি বাবার ছোটবেলায় বাবা ও মা মারা গিয়েছিলেন, তাই পরের কাছে মানুষ।এর জন্য আমি তো দায়ি নয়।
আমি তো বি.টেক ভালভাবে নাইন পয়েন্ট নিয়ে পাশ করেছি।চাকরি করতে তুমি বারণ করেছিলে।বলেছিলে আরো পড়তে হবে,সব তো শুনি তোমাদের কথা। এখনো পর্যন্ত কোন নেশা করি নি।
তুমি দুদিন হল মাসীর বাড়ি গেছ।ভাবলাম তুমি নেই বাবার জন্য আমার কলেজের গাড়ি ভাড়া ,হাত খরচ বাঁচিয়ে যে টাকা জমিয়েছি।বাবার জন্য একটা নীল সার্ট কিনে নিয়ে যায়।কত খুঁজে এগারোশ নব্বই দিয়ে একটা সার্ট কিনে বাবাকে দিয়ে বললাম হ্যাপি ফাদার্স ডে ।
ঐ লোকটা কি করলেন জানো মা ,আমায় লাঠি দিয়ে মারলেন।আমি নাকি বাবার টাকা চুরি করে বাবাকে জামা কিনে দিয়েছি।সত্যি মা আমি চুরি করি নি।আমার জমানো টাকা দিয়ে কিনেছিলাম।ঐ পাষন্ড লোকটা কোনো কথা বলতে দিলেন না।
মা বাবার আলমারিতে নাকি পনেরশ টাকা ছিল,তুমি কি নিয়ে গেছ? মাসির বাড়ি গেছ, ভাবলাম টাকা লাগতেও পারে। ক্ষমা কর মা তোমায় আমি চোর বলি নি।
জান মা ভেবেছিলাম মরে যাব। তারপর ভাবলাম মরব না। মরলে তো হেরেই গেলাম।পৃথিবীতে থেকেও তোমাদের ধরা দেব না।তোমায় ফোন করতে পারতাম মা।তুমি ঐ লোকটার সাথে ভাল থেকো। আমি কিছু জামা,সার্টিফিকেট, আমার ব্যাঙ্কের বই, যেটা নেওয়া উচিত হয় নি,কারণ ওটা তো তোমার আর আমার নামের অ্যাকাউন্ট।ঐ লোকটারই টাকা ।তার থেকে আমি কিছুটা তুলছি।তারপর তোমরা ক্লোস করে দিও।একটু ব্যাঙ্কে যাচ্ছি।টাকা তুলেই চলে যাব।
হ্যাঁ পঞ্চাশ হাজার তুললাম।বাড়িতে এসে ব্যাঙ্কের বই রেখে ,চিঠির কটা লাইন বাকি ছিল লিখে চললাম বহুদুরে।
তোমরা আমায় পাবে না।চললাম।
………বাবি….(অরুপ)…
দ্বিতীয় পর্ব…মা
মা মাসীর বাড়ি থেকে এসে চিঠিটা পড়ে ভাবে কই তিনি তো টাকা নেন নি।তাহলে বাবিই নিয়েছে।আবার আরো পঞ্চাশ হাজার নিয়েছে।পরক্ষণে ভাবে অরুপ কোথায় গেল।ওর বাবা তাহলে মেরেছে বেশ করেছে।ওরকম চোর ছেলেকে আমাদের দরকার নেই।
মা ভাবে সন্ধ্যায় বেড়িয়েছে ঠিক রাতে ফিরে আসবে।রাত এগার টা বাজল ,ছেলে তো ফিরল না।
বর ও বাড়ি নেই।কিছুক্ষণ পর উনি ফিরতেই অরুপের মা কে জিজ্ঞাসা করে অরুপ কোথায়?আজ আমি অরুপকে এত মেরেছি জানো বসুধা।
মা বলে চোর ছেলেকে মেরেছ বেশ করেছ।না না বসুধা ,আমাদের ছেলে চোর নয়।এই দেখ আমার পকেটে পনেরশ টাকা।অরুপকে,তোমার আদরের ধন বাবিকে বসুধা ডাকো,আমি ক্ষমা চেয়ে নেব।।এটায় হবে আমার ফাদার্স ডে তে পাল্টা উপহার।
বসুধা ছেলের চিঠিটা বরকে দেয়।
তৃতীয় পর্ব…
বাবি ওরফে অরুপ চেন্নাইতে বন্ধু বিমানের কাছে যায়। ওরই অফিসে ইন্টারভিউ এর ব্যবস্হা করে।পাশ ও করে যায়। অরুপ চাকরিতে জয়েন করে।
বি.টেক পড়ার সময় কলেজ থেকে কানারা ব্যাঙ্ক জিরো ব্যালেন্সের বই করিয়েছিল।তাই ব্যাঙ্কের বই করতে আর অসুবিধা হয় নি। অরুপ বন্ধুর সাথে ঘর শেয়ার করে থাকে।যখন প্রথম মাসের মাহিনা পায় ,অরুপের একটু মার কথা মনে পডে।চোখের কোনায় জল চিকচিক করে ওঠে,সেটা অরুপের বন্ধু লক্ষ্য করে। বিমান বলে আমি তোর মার সাথে লুকিয়ে দেখা করে আসব। মনে হয় সামনের মাসে আমার দিদির বিয়ে ,তাই বাড়ি যাব।
অরুপ মন দিয়ে কাজ করে।অফিসের বস অরুপকে খুব স্নেহ করেন। ওদিকে বিমানের দিদির বিবাহ তিন মাস বাদে,বিয়েটা একটু পিছিয়েছে। ততদিনে অরুপের পাঁচ মাস চাকরি হয়ে যাবে। হয়ত অরুপ ও বিমানের দিদির বিয়েতে কলকাতা যেতে পারবে।
চতুর্থ পর্ব..মিলন পর্ব
বাড়ি ছাড়ার সাড়ে চার মাস বাদে একদিন অরুপ অফিসের পাড়ার টেলিফোন বুথ থেকে মা কে ফোন করে। মা যেন ছেলের নিঃশ্বাস শুনতে পেয়ে যান। অরুপ তো ফোন শুধু ধরে ছিল।,হঠাৎ করে মা বলে বাবি ফিরে আয়,নাহলে তোর বাবাকে বাঁচান যাবেনা। তুই যাবার পর তোর বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। ডাক্তার চেন্নাই নিয়ে যেতে বলেছেন। অরুপ বলে চেন্নাই কবে আসছ? মা জানায় কাল আসছেন। অরুপ বলে আমি চেন্নাই এয়ার পোর্টে থাকব। বাইরে থাকব।আমি তোমায় ফোন করে নেব।মা বলে তুই কি চেন্নাই থাকিস?অরুপ বলে ঠিক আছে চলে এস।
অরুপ ও বিমান চেন্নাইয়ের হাসপাতালে সব ব্যবস্থা করে রেখেছে। ওই তো মা বাবাকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে আনছেন। সঙ্গে মাসী,মেশোমশাই ও আছেন। ছেলেকে দেখে বাবার কি কান্না। বাবা হাসপাতালে ভর্তি হন।মা,মাসি,মেশো হোটেলে উঠেছেন। দিন পনের বাদে বাবা সুস্থ হন।স্টেন বসান হয়।বিমান দিদির বিয়ের জন্য বাড়ি গেছে। ঘর ফাঁকা বাবা,মা ছেলের কাছে কয়দিন থাকতে চাইলেন।মাসী ও মেশো চলে গেছিলেন।সেই বাবা পুরো আলাদা বাবা।অরুপের এরকম বাবাই পছন্দ।অরুপের বস একদিন বাবাকে দেখে ও গেলেন।প্রচুর ছেলের প্রশংসা ও করলেন।
বাবা ও মা কলকাতায় ফেরার দিন এসে গেল।অরুপ কাঁদতে থাকে।বাবাও কাঁদতে থাকেন,আর বাবা অরুপকে জড়িয়ে বলে তুই প্রকৃত সন্তানের কর্তব্য পালন করেছিস,আমি বাবা হয়ে তোর ভাল বাবা হতে পারিনি।অরুপ বাবাকে আদর করে বলে আমার বাবা..ই বেস্ট বাবা।