Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নবাবী আমলের গল্প || Narayan Gangopadhyay

নবাবী আমলের গল্প || Narayan Gangopadhyay

–আজ কিসের গল্প শুনবি?

–চোরের

–কী রকম চোর?

-দারুণ। মানে যেরকম চোর আজকাল আর দেখা যায় না, যেরকম চুরি এখন আর কোথাও হয় না। বেশ আলাদা ধরনের কিছু চাই!

হুঁ, তাহলে তো দেখছি একেবারে নবাবী আমলে চলে যেতে হয়। আচ্ছা, তাই সই। কিন্তু কেবল চোরের গল্পই বলতে হবে? চোর ধরার কথা শুনতে চাসনে?

বারে! চোর যদি ধরাই না পড়ল, তবে আর চোরের গল্প কিসের?

–আচ্ছা, ঠিক আছে। শোন–এক যে ছিল পান্তা-চোর, তার জ্বালায় কেউ ঘরে পান্তা ভাত রাখতে পারত না। রান্নাঘরের দরজা যত শক্ত করেই বন্ধ থাক, খেয়ে সে যাবেই। আর জানিস তো, সেই নবাবী আমলে সবাই রাত্তিরে পান্তা ভিজিয়ে রাখত, আর সকালে হুসহাস করে নেবু আর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে সেই ভাত খেত। এখন হয়েছে কি, এক বুড়ি–

–এই থাম, আর গল্প বলতে হবে না। রামোঃ, শেষে পান্তাবুড়ির গল্প আরম্ভ করলি? সেই ক্ষুর, গোবর, শিঙিমাছ

–মোটেই না, কে বলেছে পান্তাবুড়ির গল্প?

–তা ছাড়া আর কী! পান্তা-চোর এসেছে, বুড়ি এসেছে, পান্তাবুড়ির আর বাকি রইল কি?

-তাই বুঝি? তবে উঠে পড় এখান থেকে, কেটে পড় এক্ষুনি। তাদের মোটে গল্প বলবই না। বুড়ি আর পান্তো থাকলেই পান্তাবুড়ি? এতই যদি মগজ, তা হলে আমার কাছে কেন এসেছিস গল্প শুনতে?

–আচ্ছা আর কোনও কথা বলব না। তুই বলে যা।

–মনে থাকে যেন হুঁ! এখন হয়েছে কী, জানিস? এক বুড়ির পান্তো তো চোরে হামেশা খেয়ে যাচ্ছে। বুড়িও গল্পের মতোই গোবর রাখল, শিঙিমাছ রাখল, ক্ষুর পাতল–কিন্তু চোরের কিচ্ছুটি হল না। সে হাঁড়ি থেকে শিঙিমাছটা নিয়ে গেল রান্না করে খাবে বলে, আর ক্ষুরটা নিয়ে গেল দাড়ি কামানোর জন্যে। আর যাওয়ার সময় বুড়ির ঘরের দোরে খড়ি দিয়ে লিখে গেল : আমাকে গল্পের সেই চোর পাও নাই যে ইচ্ছা করিলেই বোকা বানাইতে পারিবে।–কী রে, কেমন শুনছিস?

–বেড়ে।

–পান্তাবুড়ির গল্পের মতো লাগছে?

–না-না, কে বলে! কিন্তু তারপর?

–হুঁ, দাঁড়া না। নবাবী আমলের গল্প কিনা, অনেকদিন হয়ে গেছে, একটু ভেবে-চিন্তে বলি। হাঁ, মনে পড়েছে। বুড়ি তো রেগে-কেঁদে খুব দাপাদাপি করল, শাপশাপান্ত করল, কিন্তু তাতে চোরের কী আর হবে বল দিকি? শেষকালে বুড়ি নিরুপায় হয়ে, গিয়ে হাজির হল কাজী সাহেবের কাছে।

কাজী সাহেব?

–হ্যাঁ-হ্যাঁ, নবাবী আমলে ওঁরাই তো ছিলেন দণ্ডমুণ্ডের কর্তা–এসব ওঁরাই দেখাশুনো করতেন। তাই বুড়ি কাজীর কাছে গেল। বুদ্ধিমান আর দয়ালু বলে কাজী সাহেবের খুব নামডাক ছিল, তিনি পান্তো চোরের গল্প শুনলেন, অনেক বার বললেন, ওয়াহ-ওয়াহ, একবার বললেন, বহুত মসিব্বত, তারপর চোখ বুজে নিজের মেহেদী রাঙানো শাদা দাড়িতে হাত বুলাতে লাগলেন।

–এই, মুসিব্বত মানে কী রে?

–বোধহয়, ঝঞ্জাট। কিন্তু ও-সব নবাবী আমলের শব্দ, আমি অত-শত মানে জানব কী করে? তোরা বরং ইস্কুলের মৌলবী সাহেবকে জিজ্ঞেস করিস। যাই হোক, কাজী সাহেব মেহেদী রাঙানো দাড়িতে হাত বুলিয়ে কখনও বলতে লাগলেন, ইয়াহ, কখনও বললেন, ওয়াহ, একবার বললেন, বহুত পোঁচদাগী, আবার বললেন, জালিম, শেষে চোখ খুলে বললেন, ফতে!

ফতে? মানে?

–মানে ফিনিশ।

–কে ফিনিশ হল?

–আঃ, থাম না, সবটা শুনেই নে আগে। অত বকর বকর করিস কেন?

–আচ্ছা, মুখ বন্ধ করেছি। বলে যা।

কাজীসাহেব খুশি হয়ে বললেন, ওয়াহ ফতে। শোনো বুড়ি, কাল তোমার পান্তার হাঁড়ি আমার এখানে নিয়ে আসবে। আমি তাতে ওষুধ মিশিয়ে দেব। খোদা রহম করে বলে বুড়ি চলে গেল।

-বুঝেছি, আর বলতে হবে না। কাজীসাহেব পান্তো ভাতে বিষ মিশিয়ে দিলেন, আর তাই খেয়ে চোরটা

উঁহু, উঁহু! অর্ধেকটা কেবল বুঝেছিস। বুড়ির হাঁড়ি খেয়ে চোরটা অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল, ধরাও পড়েছিল, কিন্তু কাজীসাহেব ওষুধ মেশাননি, কোনও বিষও নয়। সেই নবাবী আমলে মানুষ এত ছোটলোক ছিল না, তা জানিস?

–বিষ নয়, ওষুধ নয়, তবে চোরটা অজ্ঞান হল কী খেয়ে?

–কেন? পান্তোর সঙ্গে কাজীসাহেব মিশিয়ে দিয়েছিলেন এক মুঠো ঘি-চপচপে মোগলাই পোলাও। রাজা বাদশারা যা খেয়ে থাকে।

-সে তো অতি চমৎকার। তাই খেয়ে?

হুঁ, তাই খেয়ে। আরে, পান্তো-খাওয়া চোরের নাড়িতে মোগলাই জর্দা-পোলাও সহ্য হয় কখনও? মুখে দিয়েই চোরের মাথা ঘুরে গেছে, তিনদিন পরে তার জ্ঞান হয়। আনাড়িরা যদি জর্দা কিংবা দোক্তা খেতে যায়, তা হলে তার যা হয়, তাই।

যাঃ, বাজে কথা। গল্প তো নয়, স্রেফ গুল। –গুল? তবে শুনছিলি কেন বসেবসে? পালা পালা এক্ষুনি এখান থেকে গেট আউট!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *