Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ননদিনী || Samarpita Raha

ননদিনী || Samarpita Raha

বিমলাদি ও উপেনদার এক ছেলে ও দুই মেয়ে।বড় মেয়ে এম- এ পড়তে পড়তেই বিয়ে হয়ে যায় ব্যাঙ্গালোরে।তাই এম- এর পড়াটা শেষ করতে পারি নি।চেষ্টা ও করে নি,স্বামীর সাথে চুটিয়ে সংসার করছে।একা একা মহানন্দে উৎফুল্লে আছে,তাই পরীক্ষা দেবার কথা মাথায় আসে নি।

তারপরে ছেলে , সে
বি.কম অনার্স শেষ করতেই ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছে।
ছোট মেয়ে বি.এস সি পড়ে। বিমলাদি এবার ছেলে বিয়ে দেবার জন্য মেতেছেন। চব্বিশ বছরের ছেলে কি আর বিয়ে করে!
ছেলে বলে এখন বিয়ে করবে না। সবে ব্যাঙ্কের ক্লার্ক।প্রমোশনের চেষ্টা করতে হবে। তারপর মায়ের কাইকুই বন্ধ হয়।কয়েক বছর পর পরীক্ষা দিয়ে অ্যাসিস্টান্ট ম্যানেজার হয়।

ছোট মেয়ে বি এস সি পরীক্ষা শেষ করে চাকরির পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।এমন সময় ছেলে মা কে বলে অফিস কলিগকে বিয়ে করবে।হবু বৌমাও ব্যাঙ্কে চাকরি করে শুনে বিমলাদি খুব আহ্লাদিত হন।

খুব ধুমধাম করে ছেলের বিবাহ হয়। বিয়ের একমাস পর প্রতিবেশী বান্ধবীদের কুটবুদ্ধিতে বিমলাদি বৌমাকে অসহ্য মনে হতে লাগল। অফিস যাবার আগে একটু সাহায্য করেই অফিস চলে যায়।ছেলের টিফিন যায়,কিন্তু বৌমার কোন টিফিন দেন না।
ননদিনী বলে বৌদি তুমি মা কে বল আমিও টিফিন নিয়ে যাব।বৌদি বলে ঠিক আছে আমি পাউরুটি কিনে আনব ।সেটায় মাখন লাগিয়ে নিয়ে যাব।

বৌমা পাউরুটিতে মাখন লাগাচ্ছে,বিমলাদি বলে শুধু নিজেরটা চিন্তা করলে হবে।আমার ছেলেটা কি খাবে সেটা চিন্তা করেছ?
বৌমা বলে সে তো আপনি রোজই দেন,আমায় দেন না তাই,
আমার ও তো ক্ষিদে পাই বলুন।একটু রাগ করেই বলে বৌমা কথাটা।
শাশুড়ি বলে ওঠেন এত দেমাক তোমার ,ও বুঝেছি।কথা থামিয়ে বৌমা বলে কি বুঝেছেন মা?যাও যাও মুখে মুখে এত কথা,ছোটলোক মেয়ে কথাকার। শাশুড়ি ফস করে বলে ফেলেন।
ঘরে এসে রীনা কাঁদতে থাকে।বর অমল বলে কি করব বলো।মা কে কিছু বলি মার অভিমান হবে।এখন আমার দশা শাখের করাতের মতন।রাগ করে রীনা অফিস গেলই না সেদিন।

বিমলাদির ছোট মেয়ে রুপা ,বৌদির কান্না মুছিয়ে বলে একটু মাকে মানিয়ে নাও।আসলে তোমায় বুদ্ধি করে মায়ের মন জয় করতে হবে। বিকালে বড়ছেলে আর ছোটমেয়ে রীনার বানানো কফি খাচ্ছে ,একটুও মায়ের মত হয়নি কফিটা।মা খুব খুশি।রীনাকে রুপা চোখ টিপে দেয়।পরদিন সকালে বিমলা দি চা বানাচ্ছেন।বৌমা বলে মা আমায় একটু শিখিয়ে দেবেন,আমি তো অন্যদিন সময় পাই না।রবিবারটা আমায় করতে দেবেন,তবে আপনি শিখিয়ে দেবেন।তাহলেই তো সবাই বলবে মা শিখিয়েছে বলেই খেতে পারছি।বিমলাদেবী খুশি হয়ে চা,কফি বানানো শিখিয়ে দেন।
আর বলে আজ থেকে তুমি বলবে আমায়।
জলখাবারে মা কি করব বলো।শাশুড়ি মা বলেন তুমি চাল টা ধুয়ে ইন্ডাক্সানে ভাতটা বসিয়ে দাও ,আর ঠিক করেছি রান্নার লোক রাখব।একটা দিন ছুটি পাও ,তাও রান্নাঘরে কাটাবে।
ঠিক আছে মা ,আমি কিন্তু তোমায় দুহাজার করে দেব।এক হাজার হলেই হবে।আর এ বাদবাকিটা পাড়া তে তো অনেক প্রতিবেশী বান্ধবী আছে,তাদের বাড়িতে ডাকবেন চা সিঙ্গারা খাওয়াবেন। আর কাউকে বলবেন না ,এটা বৌমার টাকায় করছি। আপনাকে হিংসা করবে। হ্যাঁ মা তোমার যা লাগবে আমায় বলো।
রীনা ভাবে এত বুদ্ধি আমার ননদিনী যোগান দেয়।
সন্ধ্যায় সবাই কফি খাচ্ছে।উপেনদা বলে বিমলা তোমার হাতের কফিটা খেলে খুব এনার্জি পাই।
না না গো আমি করি নি,আজ কফি বৌমা করেছে। উপেনবাবু ,দুই ছেলে মেয়ের মত মজা পান। এই শাশুড়িকে কি যাদু করল ,বৌমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

রাঁধুনি দুইবেলায় আসে।শাশুড়ির বান্ধবীর জন্মদিন ,বৌমা সুন্দর ব্যাগ এনে দিয়েছে,এটা উপহার দিও মা।শাশুড়িকে সাজিয়ে গুছিয়ে পাঠিয়েছে।

বাড়ি এসে বিমলা দি চিৎকার করে বলে বৌমা ,আজ আমার বন্ধুদের কি হিংসা,বলে ওরা যদি আমার বৌমার মত বউমা পেত।

রীনা জানতে পারে শাশুড়ির ভাই কানাডা থেকে আসবেন,আবার শাশুড়ি সকাল থেকে খিটমিট করছেন।এত বড়লোক ভাই আসবে কারর মাথা ব্যথা নেই। রমা ননদের কাছ থেকে জেনে নিয়েছে মামার কি পছন্দ।সন্ধ্যায় অফিস করে বরকে সঙ্গে নিয়ে বড় ইলিশ কেনে। জামা কেনে,তারপর একটু রাত করেই বাড়ি ঢোকে।

শাশুড়ি বলেন জান তো আজ ভাই আসবে ,দুজনায় এত দেরী করলে! বৌমা কিছু না বলে ,ননদকে বলে মা কে বলো ,মামার জন্য ইলিশ এনেছি। মা রান্না করবে ,না বৌদি করবে। মা শুনে খুশি হয়ে বলেন ,না না বৌমা এখন সবে এত খেটে এলে ,আমি দেখছি ,কি করা যায়।

শাশুড়ি মা চিৎকার করে ডাকে বৌমা, তুমি কি মাছ ভাজা খাও। হুম খাই তো। মা তুমি কি নিজের জন্য একটা ভাজা করছ?না সবার কথা সারা জীবন ভাববে। শাশুড়ি মা গদগদ বলে ওরে তুই যে আমার আগের জন্মে মা ছিলি।
তুমি থেকে তুই।তারপর বৌমা শাশুড়ি কে বলে এই সার্টটা মামার জন্য কিনলাম। দেখো তো ভাল লাগছে? না না মা ওটা মামার প্রিয় রঙ।আমার লক্ষী বৌমা।

এই করে বুদ্ধি খাটিয়ে একটু একটু করে শাশুড়িদের মন পাওয়া যায়।শাশুড়িরা তার শাশুড়িদের কাছে কিছুই পান নি ,পেয়েছেন আদেশ। পেয়েছেন ভালবাসাহীন শ্বশুর ঘর।শাশুড়ি এখন বসার ঘরে বসে বান্ধবীদের কাছে বৌমার গুণাবলী মেলে ধরেন।
ননদ ছুট্টে এসে বলে,তাই নাকি গো।একবার ও মেয়ের প্রশংসা তো করো না,শুধু বৌদির।বান্ধবীরা হা হা করে হেসে বলে কেন রে ,সত্যি সত্যি বৌমা ভাল। দেখ আমার বৌমারা ও চাকরি করে,কই হাতে করে একটা জিনিষ ও কিনে আনে না শাশুড়ির জন্য।
বোনের বুদ্ধিতে দাদা শান্তি তে আছে।বৌদি ও খুব খুশিতে থাকে।সব সময় নাটক নভেলে দেখা যায়,ননদরা দুষ্টু,পাঁজি।কিন্তু রীনা ভাগ্য করে ননদ পেয়েছে।ননদের জন্য বরের সাথে সুসম্পর্ক আছে।
তাই একটু বুদ্ধি খাটিয়ে চললে কোন সংসার ভাঙে না, শান্তির জন্য ছেলেরা বৌকে নিয়ে অন্যত্র থাকেনা।
শাশুড়ি ও বৌমা সবাইকে এক কিঞ্চিৎ জমি ছাড়তে হবে।তবেই সংসার সুখের হবে।কথায় আছে সংসার সুখের হয় রমনির গুণে।পরিবার পাশে থাকলে সুখ আসে সংসারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress