Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নদীকথায় শিলাবতী || Manisha Palmal

নদীকথায় শিলাবতী || Manisha Palmal

অরণ্য কন্যা শিলাবতীর গল্প শোনাব আজ। নদীরও জন্মদিন আছে। এটা মনে করে পুরুলিয়া জেলা। নদী যে তাদের বাড়ির মেয়ে। প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিন হুডার বডগ্রামের কাছে শিলাবতী উৎস স্থলে 3 দিনের মেলা বসে। পুঞ্চা পুরুলিয়া রাস্তায় বডগ্রামের কাছে একটা ক্যালভার্ট আছে—- সেখান থেকেই শিলাবতী নদীর শুরু বলে মনে করা হয়! এই নদীর উৎস সম্পর্কে একটি লোক কাহিনী প্রচলিত—- এই জায়গায় এক আশ্রমে এক সাধু থাকতেন। তাকে আশ্রমের কাজে সাহায্য করত এক স্থানীয় মেয়ে। সাধু তীর্থে যাওয়ার সময় ওই মেয়ে তার হাতে একটি পুঁটুলি দিয়ে বলেছিলেন যে তা যেন গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়। কথিত যে সাধু গঙ্গায় পুটুলি টা ছুড়ে দিতে নদী থেকে দুটি হাত উঠে এসে ওই পুঁটুলি নিয়ে আবার ডুবে যায়। একরাশ বিস্ময় নিয়ে গ্রামে ফিরে আসেন সাধু। গ্রামে ফিরে দেখেন দূর থেকে কাঁখে কলসি নিয়ে সে আসছে। কিন্তু সাধুর ডাক শুনেই সে দৌড়াতে শুরু করে– হঠাৎ কাঁখের কলসি পড়ে গিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে ও মেয়েটি অদৃশ্য হয়ে যায়। জনশ্রুতি হলো ওই কলসির গড়িয়ে পড়া জল থেকে শিলাবতী নদীর জন্ম।
এই প্রবাদটিকে ঘিরেই প্রতিবার নদীর পাশে জমে ওঠে মেলা পৌষ সংক্রান্তিতে। ওই চত্বরে দেবী শিলাবতী মন্দির। পেছনে পুকুর। মন্দিরে এসে অনেকে শিলাবতীর মাটির মূর্তি দিয়ে যান।

পুরুলিয়ার পুঞ্চা শহরের কাছে উৎপন্ন এই নদী গভীর অরণ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাঁকুড়ায় প্রবেশ করেছে। একটি ছোট নদী বাঁকুড়ায় শিলাইয়ের সাথে মিলিত হয়েছে। সিমলাপাল এর দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে এই নদী পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রবেশ করেছে। মেদিনীপুরে এর প্রধান উপনদী কুবাই–তমালও পারাং। কুবাই টাঙ্গাশোলের কাছে উৎপন্ন হয়ে মুগবসনের কাছে তমাল নদীতে মিলেছে। কুবাই ও তমালের মিলিত প্রবাহ নাড়াজোল এর কাছে শিলাই এসে মিশেছে। বর্ষাকাল ছাড়া নদী গুলিতে জল প্রায় থাকেই না। অরণ্য সংকুল পশ্চিম মেদিনীপুরের গডবেতা ও খড়্কুশমা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শিলাই ঘাটালে দ্বারকেশ্বরনদে মিলিত হয়েছে। এই মিলিত প্রবাহ রূপনারায়ন নামে হুগলি নদীতে মিলে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।
গডবেতা য় জযপান্ডার সাথে মিলিত হয়ে শিলাবতীর মেদিনীপুরে আগমন। রূপনারানের প্রধান উপনদী এই শিলাবতী। প্রবাদ আছে যে শিলাবতী কে পুরন্দর ব্রাহ্মণ ভালোবাসতেন। ব্রাহ্মণ রোজ শিলাবতী তে স্নান করে কলসি করে জল নিয়ে যেতেন। একদিন পুরন্দর শিলাবতী কে তার সাথে মিলিত হবার আহবান জানান—– তখনই তার মাথার কলসি ফেটে পুরন্দর ব্রাহ্মণ নদ হয়ে স্বামী স্বরূপ শিলাবতী তে মিলিত হন।
শিলাবতী যেন এই শিখরভূমের অরণ্য কন্যা। স্বাধীন খেয়ালী চঞ্চল। সারাবছর শান্ত ।তির তির করে বয়ে চলে অরণ্য সংকুল অঞ্চলের বুকের উপর দিয়ে। বর্ষায় তার ভয়ঙ্করী রূপ। গভীর অরণ্যের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা শিলাবতীর বন্য সৌন্দর্য্যে মন ভরে যায়। দলমার দামাল মহাকাল জলকেলি করে নদীতে। লাস্যময়ী ঝুমুর শিল্পীর ছন্দ তার গতিতে। বিলাসী নটিনী নদী এঁকেবেঁকে নদী খাতের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে —-কি অপরূপ তার নদীখাত!” ভারতের গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন”— এই শিলাবতী র নদী খাত। গডবেতার গনগনিতে তার চরম বিকাশ। চোখ জুড়ানো ভূমিরূপ এর অলৌকিক ভাস্কর্য। নদীখাত যে এত অপরূপ হতে পারে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। এই সৌন্দর্য ই শিলাবতী কে জঙ্গলমহলের লোকপ্রিয় নদীর শিরোপা দিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *