Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জীবনের দাম || Dona Sarkar Samadder

জীবনের দাম || Dona Sarkar Samadder

সংশোধনাগারে তোড়জোড় চলছে। মাননীয় মন্ত্রী আসবেন। কেউ কেউ নাটকের মহড়া করছে। কেউ কবিতা পাঠ কেউবা গান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সেটা লাইভ সম্প্রসারণ হবে। প্রায় প্রতিটা চ্যানেল কভার করবে।

বর্তমানে কয়েদিদের সাথে আর কয়েদিসুলভ ব্যবহার করা হয় না। খুব গুরুতর অভিযোগ না থাকলে তাদের সংশোধনাগারে যথেষ্ট স্বাধীনতা দেওয়া হয়।

আজ সেই শুভ দিন। বিরাট স্টেজ হয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী এলেন। শুরু হলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কয়েদিদের এমন পারফরম্যান্স সত্যি অতুলনীয়। মন্ত্রীমশাই আপ্লুত। এক এক করে পার্সোনাল পারফরম্যান্স পরিবেশিত হল। এবার হবে নাটক। নাটকের নাম “পালাবদল”, ‌কোন এক কয়েদির রচনা। পরিবেশিত হল নাটক। মন্ত্রীমশাই তো আপ্লুত। আজ সারাদেশ দেখবে যে কয়েদিরাও মানুষ। তারাও স্বমহিমায় উঠে আসছে।

নাটক শেষ হলো। চারিদিকে করতালির জোয়ার। অসাধারণ হয়েছে। মন্ত্রীমশাই নিজেই স্টেজে উঠে নাট্যকারকে ডাকলেন, বিশেষ সম্মানে ভূষিত করার জন্য। নাট্যকার মঞ্চে এলেন। ২৬ /২৭ বছরের সুদর্শন যুবক। মন্ত্রীমশাই করমর্দন করতে গেলে, যুবক হাতজোড় করে প্রণাম জানালেন। নাম জিজ্ঞাসা করা হলো। যুবক জানালো ওর নাম উত্তম মোহান্ত। মন্ত্রী জানালেন তার নাটক খুব ভালো লেগেছে। ভীষণ মর্মস্পর্শী। যুবকের উত্তর, যা দেখলেন পুরোটাই আমার জীবনের কথা। আজ আমি কিছু বলতে চাই। যদি আপনি অনুমতি দেন। অনুমতি দেওয়া হল। যুবক বলতে শুরু করল,
ও উড়িষ্যার ছেলে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে কলকাতায় আসে কলেজ এডুকেশনের জন্য। কলেজে পরিচয় হয় শবরী নামে একটি মেয়ের সাথে। দুজনেই লেখাপড়ায় বেশ উজ্জ্বল। ক্রমে ক্রমে প্রেম দানা বাঁধে। ওরা খুব খুশি ছিল। কিন্তু শবরীর উপর নজর ছিল কোন এক ছেলের। সে শবরীকে প্রস্তাব দেয়। শবরী ঘৃণাভরে নাকচ করে। ছেলেটি ওদেরই কলেজের ছাত্র ছিল। সে শবরী ও উত্তমের ঘনিষ্ঠতা মেনে নিতে পারছিল না। ছেলেটি প্রভাবশালী ঘরের হওয়ায় উত্তম শবরী কলেজে প্রায় নির্বান্ধব হয়ে পড়েছিল।

একদিন শবরীর কাছে একটা চিরকুট এলো। চিরকুটে লেখা ছিল কলেজের মাঠে উত্তম শবরীকে দেখা করতে বলেছে। শবরী যায় কিন্তু উত্তম আসে না। আসলে চিরকুটটা উত্তম লেখেইনি। শবরী গেলে ওই ছেলেটি ওর বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে শবরীর মুখ চেপে কলেজের পিছনের দিকে নিয়ে যায়। ওরা গ্যাং রেপ করে। তারপর ওকে মেরে, ওর দেহটাকে ঝুলিয়ে দেয়। চারপাশে উত্তমের জিনিস ছড়িয়ে দিতে থাকে। যাতে উত্তম কালপ্রিট প্রমাণিত হয়। এবং হলো তাই। উত্তমের লাইফ টাইম সাজা হয়ে যায়। ও আত্মপক্ষ সমর্থন করারও চেষ্টা করেনি। উড়িষ্যা থেকে ছুটে আসে ওর বাবা মা। ওনারা শত চেষ্টা করেও উত্তমের মুখ খোলাতে পারেননি। ওর বাবা আত্মগ্লানিতে আত্মহত্যা করেন। পরে ওই ছেলেটির কোন এক বন্ধু যে গ্যাং রেপ করেছিল সে উত্তমের কাছে সব স্বীকার করে এবং কিছু প্রমাণও দেয়।

মন্ত্রী অবাক হয়ে শুনছিলেন এতক্ষন। বলেন কে সে ছেলেটি? উত্তম বলে, মানস গুপ্ত, স্যর আপনার ছেলে। উদ্বিগ্ন হয়ে মন্ত্রী বলে, তুমি প্রমাণ করতে পারবে, লাইভ অনুষ্ঠান হচ্ছে কিন্তু, না পারলে তোমার সাজা আরও বাড়বে। উত্তম বলল সব প্রমাণ আছে আমার কাছে। সে প্রমাণগুলো তুলে দেয় মন্ত্রীর হাতে। মন্ত্রী তৎক্ষণাৎ তার ছেলেকে বন্দি করার নির্দেশ দেন। উত্তম যাতে সসম্মানে আবার জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে পারে তার সবরকম ব্যবস্থা উনি করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

উত্তম জানালো সে চায় না জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে। ফিরবে যদি তাকে তার শবরীকে ও বাবাকে ফিরিয়ে দেয়। সে বলল হুজুর জেলে আমি ভালো আছি। আমি জানি এখানে সবাই অপরাধী এবং তাদের অপরাধের জন্য আজ তারা বন্দী। কিন্তু খোলা অপরাধীরা আরও ভয়ংকর, তারা ভদ্রলোকের মুখোশ পরা। আমি চাইনা মুক্ত হতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *