Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জলপাইয়ের পল্লবে পল্লবে || Shamsur Rahman

জলপাইয়ের পল্লবে পল্লবে || Shamsur Rahman

মা, আমি ঠিক বলে দিতে পারি,
এখন এই মূহুর্তে তুমি
বিবর্ণ মখমলী জায়নামাজে বসে কোরান শরীফের
আয়াত আবৃত্তি করছো
কিবলার দিকে মুখ রেখে। জানি,
এখনো বাড়ির কেউ বিছানা ছেড়ে ওঠেনি, কারো
সাড়া শব্দ নেই ধারে কাছে, কেবল অপরূপ শব্দহীনতায়
প্রকৃতি গাইছে কালাংড়া।

আর আমি তখন
একটা শেয়াল-গর্তে আধশোয়া, আধ-বসা অবস্থায়
সময় কাটাচ্ছি, আমার অটোমেটিক রাইফেলটা অঘোরে
ঘুমোচ্ছে আমার পাশে
দীর্ঘকায় কালো মোমবাতির মতো এবং
আমার বাঁদিকে পড়ে আছে
ইউনিফর্ম-পরা একটা মানুষ, ওর ডান পা উড়ে গেছে
গোলার আঘাতে। ওকে এখন
স্পর্শ করা যাবে না, ছুঁলেই ওর শরীর
বালির মতো ঝুর ঝুর করে ঝরে যাবে।
সত্যি বলতে কী, এখানে আমরা যারা আছি
ওৎ পেতে দলবদ্ধ শক্রর অপেক্ষায়, তারা প্রত্যেকেই
যেন আজ বালির মূর্তি। কাল রাতে সে
আমার কাছে সিগারেট চেয়েছিল-
সিগারেটের কথা বললাম বলে তুমি রাগ করো না, মা।
এখন আমি তোমাকে অনেক কিছুই
বলতে পারি অবলীলাক্রমে, যা তুমি শুনতে চাইবে না;
তোবা তোবা বলে আমার মুখ
বন্ধ করে দিতে চাইবে। আমার সব কিছু এখন
ওলট পালট হয়ে গেছে।
তো, যা বলছিলাম, কাল রাতে আমার পার্শ্ববর্তী টিউনিক-সজ্জিত
মানুষটা আমার কাছে সিগারেট
চেয়েছিল আর বুক পকেট থেকে বের ক’রে
দেখিয়েছিল ওর স্ত্রী এবং ছেলেমেয়ের ফটোগ্রাফ।
সেই ফটোগ্রাফ
এখন কাদায় লুটোচ্ছে, কীটপতঙ্গেরা
চলাফেরা শুরু করেছে ওর টিউনিকে,
নাকের খোড়লে। আমি ওদের
দু’একবার তাড়ানোর পর হাত গুটিয়ে নিয়েছি।
কেমন একটা গন্ধ অন্ধকারের মতো
ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।
আজরাইলের ডানার গন্ধ কি এরকম?
আমার চোখের ভেতর, বুকের ভেতর,
হাড়ের ভেতর জীবন গোঙায় সারাক্ষণ আর
আজরাইলের ডানার প্রতি
ভীষণ খেঁকিয়ে ওঠে আমার অস্তিত্ব!

মা, আমি দেখতে পাচ্ছি
তুমি তস্‌বি হাতে বসে আছো সংকীর্ণ বারান্দায়।
তোমার নীল আসমানের উদার ছায়া আর
আমার তিন বছরের ছেলে টুকুন
তোমার জানুতে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে,
দেখছে ভোরের পাখির উড়াউড়ি, তোমার বাঁহাত
ওর মাথায়। এমন একটা ছবি
অনেকদিন আগে আমি দেখেছিলাম, যদ্দুর মনে পড়ে,
চিত্রকলাবিষয়ক কোনো বইয়ে।

মা, এই শেয়াল-গর্তে মাঝে-মধ্যে মনে হয়,
যেন আমার কোনো স্বপ্ন নেই, স্মৃতি নেই, পিছুটান নেই,
কোনো আগামীকাল নেই।
মৃত্যু এখানে
একটানা বাজিয়ে চলেছে অ্যাকর্ডিয়ান এবং নিজের খেয়ালখুশি মাফিক
গান গাইছে বেজায় হেড়ে গলায়।
আমার নিজের প্রেত হেঁটে যাচ্ছে
আমার সকল স্বপ্নের ছাই ওড়াতে ওড়াতে।

জানিনা, আমি আবার
ফিরে আসবো কি না তোমাদের মাঝে; যুগ যুগ ধরে
অনেকেই ফেরেনি,
ফিরবে না কোনদিন আর
কী আশ্চর্য জানো মা, এই মূহুর্তে আমাদের
রান্নাঘরের পাশের সেই ডালিম গাছটার জন্যে,
টিউবওয়েলতলার জন্যে,
আমার ঘরের দেয়ালের কিছু দাগের জন্যে,
আমার মন কেমন করছে।
মা, তোমার কাছেই আমার শিক্ষার হাতে খড়ি।
আমার টুকুনের বর্ণ পরিচয় যেন
তোমার মারফতেই হয়। এখন থেকে ওকে
এভাবে গড়েপিটে তোলো যাতে সে
কক্ষনো ভুলেও গরম সীসের ছররা না ছোঁড়ে
কোনো পাখির ঝাঁকে,
ফুটো না করে কোনো মানুষের বুক।
ওকে তুমি জলপাই বাগানের দেখভাল করতে বলো মা, যেন সে ওর স্বপ্নগুলি
বুনে দিতে পার জলপাইয়ের পল্লবে পল্লবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *