জব্দ
রায়া খুব খুশি, বিদ্যালয় থেকে কোথায় যেন আজ বেড়াতে নিয়ে যাবে৷ মা ও বাবা এত ব্যস্ত, সারাক্ষণ তাঁদের অফিসের কাজ৷ কাজের মাসি, তিনিও কথা বলতে গেলে বলে,রায়া পড়তে বসো,গান করো, ছবি আঁকো৷ একটু ও কেউ খেলতে দেয় না। ওই ঠাম্মা ছিল,একটু গল্প শুনত বলে ,মা রায়াকে ও ঠাম্মাকে কত বকতো৷ মা, আপনার কাছে রায়া এতো গল্প শুনলে, পড়াগুলো মাথা থেকে বেরিয়ে যাবে। পরীক্ষাতে পুরো নাম্বার পাবে না৷ রোজ রোজ এরকম কথা শুনতে শুনতে রায়ার ঠাম্মা ছোটকাকুকে ফোন করে। ঠাম্মা আমেরিকায় যেতে চান। বাবা সেই মতো মেয়ের ভবিষ্যত ভেবে কাকুর সাথে কথা বলে রায়ার ঠাম্মাকে পাঠিয়ে দিলেন। রায়ার দুঃখ কেউ বুঝলো না।
ছয়মাস হলো, ঠাম্মার সাথে রায়ার কোনো কথা হয়নি। কাকুকে জিজ্ঞেস করলে বলে ঠাম্মা বাইরে বেড়াতে গেছে। রায়া কষ্টে ঝিমিয়ে থাকে৷ রায়ার মানসিক অবস্থা ধীরে ধীরে বদল হতে থাকে৷ অনেক পড়াশুনা করে রায়াকে আমেরিকা যেতে হবে। রায়া পঞ্চম শ্রেণী থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠলো, প্রথম হয়েছে। মা হয়তো খুব খুশি হয়েছে। অন্যবার রায়া দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়। নিশ্চয় ঠাম্মার দোষ দিয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠার কিছুদিন পর রায়া স্কুল থেকে বেড়াতে যাচ্ছে। মা বারণ করেছিল, বাবা মাকে বলে, যদি এতে নাম্বার থাকে,তাহলে ..৷ স্কুল থেকে রায়াদের এক বৃদ্ধাশ্রমে বেড়াতে নিয়ে গেছে। সেখানে কত দাদু,দিদা। রায়া এত দাদু ,দিদা ঠাম্মা দেখে এতোটাই খুশি,ও মনে হয় চিড়িয়াখানা বেড়াতে গিয়েও এত আনন্দ পায়নি। সারাদিন হুটোপুটি করার পর দেখে, শেষ ঘরে এক দিদুন অসুস্থ। রায়া ছুটে গিয়ে দেখে ঠাম্মা! ঠাম্মার শরীর প্রচন্ড খারাপ বলে, তার ছেলে বৌকে খবর দেওয়া হয়েছে। ওদিকে স্কুলের দিদিমণি রায়াকে বলে, তাড়াতাড়ি চলো,বাস ছাড়তে হবে।
রায়া বলে, আমার ঠাম্মা অসুস্থ, আমি কিছুতেই বাড়িতে যাবো না। ঠাম্মা বড়ো বড়ো চোখ করে রায়াকে কাছে ডাকে। দিদিভাই তুই! রায়া চিৎকার করে বলে, ঠাম্মা, তুমি আমেরিকা যাওনি। ততক্ষণে বাবা ও মা দরজায় দাঁড়িয়ে মেয়ের কার্যকলাপ দেখছে। রায়া ঠাম্মার মুখে জল দিতেই ঠাম্মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।রায়া স্কুল বাসে বাড়িতে ফেরে। মা ও বাবার রায়ার ওখানে থাকাটা আপত্তি। মা ও বাবা সব কাজ করে শেষ রাতে বাড়িতে ফেরে।কাকু আসবে ঠাম্মার কাজে। অফিসের কাজ থাকলে আমেরিকায় শ্রাদ্ধের কাজ করবে। রায়া মনে মনে ভাবে আর ছয় সাত বছর পর এর জবাব দেবে। রায়া একটু কানাঘুষোতে শুনতে পেয়েছিল, কাকু ঠাম্মাকে নিতে চাননি।তাই বাবা ও মা বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছে। রায়া বুদ্ধিমতি,সে বুঝতে পেরেছে পড়াশোনা না করলে বাবা ও মা কে জব্দ করতে পারবে না। দিন এগিয়ে চলে, রায়া জার্মানে। বাবা ও মায়ের খোঁজও নেয় না। শেষে রায়া ভাবে বাবা ও মায়ের সাথে তার পার্থক্য কী থাকলো! তারপর রায়া দেশে ফিরে মা ও বাবার পছন্দ মতো বিয়ে করে। রায়া আজ বাপের বাড়ি ও শ্বশুর বাড়ির বাবা ও মাকে নিয়ে খুব খুশিতে আছে।