Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ছোট কর্তা || Sharadindu Bandyopadhyay

ছোট কর্তা || Sharadindu Bandyopadhyay

আভার বিবাহের সময় বরপক্ষ ও কন্যাপক্ষের মধ্যে কি একটা মতান্তর হইয়াছিল। কিন্তু দুই পক্ষই ভদ্রলোক, তাই মতান্তর ঝগড়ায় পরিণত হয় নাই। বরপক্ষ আভাকে লইয়া চলিয়া গিয়াছিলেন, তারপর পনেরো বছর আভা আর পিত্রালয়ে ফিরিয়া আসে নাই। দুই পরিবারের মধ্যে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন হইয়াছিল।

এই পনেরো বছরে দুই পরিবারেরই কিছু কিছু পরিবর্তন হইয়াছে। কতারা গত হইয়াছেন, যুবকেরা বাড়ির কর্তা হইয়াছে। যাহারা ছোট ছিল তাহারা যৌবনপ্রাপ্ত হইয়াছে। আভার বিবাহের সময় কি লইয়া মনোমালিন্য ঘটিয়াছিল তাহাও বোধ করি কাহারও মনে নাই। তবু দুইপক্ষের মাঝখানে দূরত্বটা যেন মনোযোগের অভাবেই পূর্ববৎ রহিয়া গিয়াছিল।

আভার ছোট ভাই দেবু আভার চেয়ে সাত-আট বছরের ছোট। তাহার বয়স এখন পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর; সে ফৌজী দলের লেফটেনেন্ট, উপস্থিত পুণায় আছে। হঠাৎ কমোপলক্ষে তাহাকে কয়েকদিনের জন্য কলিকাতায় আসিতে হইল। এবং আসিয়াই তাহার মনে পড়িয়া গেল, দিদির। শ্বশুরবাড়ি কলিকাতায়।

দেবু জীবনটা যদিও পশ্চিমাঞ্চলেই কাটাইয়াছে, তবু কলিকাতা তাহার অপরিচিত নয়। ছেলেবেলায় কয়েকবার আসিয়াছে। কিন্তু তখন সে স্বাধীন ছিল না, এখন স্বাধীন। দিদিকে দেখিবার জন্য তাহার মন উৎসুক হইয়া উঠিল।

দিদির শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা তাহার জানা ছিল, শোভাবাজারের নামজাদা গোষ্ঠী। সে হোটেলে জিনিসপত্র রাখিয়া বিকালবেলা বাহির হইল। অবশ্য দিদির শ্বশুরবাড়িতে সে সমাদর পাইবে কি না সন্দেহ। কিন্তু না-ই বা পাইল সমাদর। সে একবার দিদিকে দেখিয়াই চলিয়া আসিবে। দিদির বিবাহকালীন কচি মুখখানি তাহার মনে আঁকা আছে। দিদির চেহারা এখন কেমন হইয়াছে কে জানে। দেবুর চেহারা অনেক বদলাইয়া গিয়াছে, দিদি কখনই তাহাকে চিনিতে পারিবে না।

সাবেককালের দোতলা বাড়িটা বেশ বড়। তারা দুই ভাই একান্নবর্তী ছিলেন। প্রায় দশ বছর আগে আভার শ্বশুর মারা গিয়াছিলেন, ছাপা দায়-জানানো পত্র দেবু দেখিয়াছিল। তারপর এ সংসারে কী ঘটিয়াছে সে জানে না। হয়তো একান্নবর্তীই আছে, ছোট কতা এখন বাড়ির কর্তা।

দেবু দ্বারের কড়া নাড়িল। ক্ষণকাল পরে দ্বার খুলিয়া দিল একটি মেয়ে, কিন্তু জঙ্গী পোশাক পরা অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখিয়া তাহার মুখের হাসি মিলাইয়া গেল, সে দ্বার খোলা রাখিয়াই তাড়াতাড়ি ভিতরে চলিয়া গেল। দেবু অপ্রতিভভাবে খোলা দ্বারের বাহিরে দাঁড়াইয়া রহিল।

বাড়িতে যে অনেকগুলি লোক থাকে এইবার তাহার পরিচয় পাওয়া গেল। দুই চারিটি বয়ঃপ্রাপ্ত লোক এবং অনেকগুলি কুচোকাচা দ্বারের কাছে আসিয়া পরম কৌতূহলের সহিত দেবুকে নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। দেবুর মুখ উত্তপ্ত হইয়া উঠিল। কিন্তু কি বলিয়া সে নিজের পরিচয় দিবে ভাবিয়া পাইল না।

তোরা সরে যা বলিয়া একটি গোলাকৃতি মহিলা দ্বারের কাছে উপস্থিত হইলেন, দেবুকে একমুহূর্ত ভাল করিয়া দেখিয়া বলিয়া উঠিলেন, ওমা, দেবু এসেছিস! আয় আয়।

তিনি দেবুর হাত ধরিয়া ভিতরে টানিয়া লইয়া গেলেন এবং দেবুর গণ্ডদেশে সশব্দে চুম্বন করিলেন। দেবু লজ্জায় রক্তবর্ণ হইয়া তাঁহাকে প্রণাম করিল, বুঝিল এই গোলাকৃতি মহিলাই তাহার দিদি। পনেরো বছরে দিদির স্বাস্থ্যের বেশ উন্নতি হইয়াছে।

আভা তাহার গায়ে হাত বুলাইয়া বলিল, কত বড় হয়েছিস রে! তার ওপর আবার মিলিটারি পোশাক! কিন্তু আমার চোখে কি ধুলো দিতে পারিস! দেখেই চিনেছি।

দেবুকে লইয়া বাড়িতে সমাদরের সমারোহ পড়িয়া গেল। বাড়িতে লোক অনেক; শাশুড়ি, খুড়শাশুড়ি, দেবর, ননদ; আভা সকলের কাছে লইয়া গিয়া দেবুর পরিচয় করাইয়া দিল। দেবু দেখিল, আভাই বাড়ির গৃহিণী। তাহার শাশুড়ি, খুড়শাশুড়ি ঠাকুরঘরে বসিয়া কেবল মালা জপ করেন।

ইতিমধ্যে আভার স্বামী পরিমলবাবু গৃহে ফিরিলেন। ইনি হাইকোর্টের উকিল। ভারি মজলিশী লোক, তিনি দেবুকে লইয়া মহানন্দে রঙ্গ রসিকতা শুরু করিয়া দিলেন। দেবু অবাক হইয়া ভাবিতে লাগিল, এমন লোকগুলোর সঙ্গে এতদিন বিচ্ছেদ ছিল কি জন্য?

গল্প করিতে করিতে সন্ধ্যা হইয়া গেল। আভা আসিয়া বলিল, দেবু, আজ তুই যেতে পাবি না। রাত্তিরে খাওয়া-দাওয়া করে এখানেই শুয়ে থাকবি। কাল সকালে যেখানে ইচ্ছে যাস।

দেবু কুণ্ঠিত হইয়া বলিল, কিন্তু তোমাদের অসুবিধে হবে—

কিছু অসুবিধে হবে না। আভা স্বামীর দিকে চাহিয়া বলিল, ওপরে ছোঠাকুরের ঘরে দেবুর শোবার ব্যবস্থা করি।

পরিমলবাবু চকিত হইয়া বলিলেন, বেশ তো। স্বামী-স্ত্রীর চোখে চোখে কি একটা ইঙ্গিত খেলিয়া গেল দেবু ধরিতে পারিল না। সে বলিল, কিন্তু জামা কাপড় যে কিছুই আনিনি।

আভা বলিল, বাথরুমে জামা কাপড় রেখেছি। তুই যা, তোর মিলিটারি পোশাক ছেড়ে নে।

দেবু বাথরুমে চলিয়া গেল। মুখ হাত ধুইয়া সাদা জামা কাপড় পরিয়া যখন ফিরিয়া আসিল তখন। দেখিল, দিদি জামাইবাবুর সঙ্গে চুপিচুপি কি কথা বলিতেছে। সে আসিতেই দিদি হাসিমুখে উঠিয়া চলিয়া গেল।

যে মেয়েটি দেবুকে দ্বার খুলিয়া দিয়াছিল সে বসিবার ঘরে আসিয়া চা-জলখাবার দিয়া গেল। মেয়েটির বয়স সতেরো কি আঠারো, রং ফরসা, ভাসা-ভাসা হাসিভরা চোখ। পরিমলবাবু বলিলেন, আমার খুড়তুতো বোন রানী।

গল্প করিতে করিতে অনেক রাত হইয়া গেল তখন পরিমলবাবু দেবুকে লইয়া রান্নাঘরে খাইতে বসিলেন। রানী লুচি বেলিয়া দিতেছে, আভা গরম গরম লুচি ভাজিয়া পাতে দিতে লাগিল। দেবু রানীর লুচি বেলা দেখিতে দেখিতে মনে মনে ভাবিল, বেশ মেয়েটা।

আহারের পর মুখ ধুইতে ধুইতে দেবু শুনিতে পাইল দিদি খাটো গলায় রানীকে বলিতেছে, ওপরে যা, ছোটঠাকুরকে বল আমার ভাই এসেছে, আজ রাত্তিরের জন্যে ঘরটা যেন ছেড়ে দেন।

শুনিয়া দেবু বুঝিল, তাহার জন্য কোনও বৃদ্ধকে কক্ষচ্যুত করা হইতেছে, সে মনে মনে অস্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করিল, কিন্তু এখন আর আপত্তি করিয়া লাভ নাই।

রানী সিঁড়ি দিয়া উপরে উঠিয়া গেল এবং পরক্ষণেই নামিয়া আসিয়া আভার দিকে ঘাড় নাড়িল। আভা বলিল, দেবু, রাত হয়েছে, শুয়ে পড় গিয়ে। আমি বাপু মোটা মানুষ, সিঁড়ি ভাঙতে পারব না। রানী, তুই আর একবার ওপরে যা, দেবুকে ঘরটা দেখিয়ে দিয়ে আয়। লক্ষ্মীটি।

রানী তখন দেবুর দিকে একবার কটাক্ষপাত করিয়া আবার সিড়ি দিয়া উপরে উঠিতে লাগিল, দেবু তাহার অনুসরণ করিল। সিঁড়ি বেশী চওড়া নয়, অর্ধপথ উঠিয়া বিপরীত মুখে ঘুরিয়া গিয়াছে। দেবু অর্ধপথ উঠিয়া দেখিল একটি বৃদ্ধ ভদ্রলোক উপর হইতে নামিয়া আসিতেছেন। রানী সিঁড়ির মাঝখানের চত্বরে দাঁড়াইয়া পড়িল, দেবুও দাঁড়াইল।

বৃদ্ধ ভদ্রলোকের গায়ে বেগুনি রঙের বালাপোষ, পায়ে চটি। মাথার চুল সাদা। স্বল্পালোকে মুখ চোখ ভাল দেখা গেল না, তিনি দেবুর মুখের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিয়া নিঃশব্দে সিঁড়ি দিয়া নীচে নামিয়া গেলেন।

রানী আবার উপরে উঠিতে লাগিল, দেবু তাহার অনুগামী হইল। দ্বিতলে উঠিয়া রানী কোনও কথা বলিল না, কেবল আঙুল দিয়া একটা ভোলা দরজা দেখাইয়া দিয়া দ্রুতপদে নামিয়া গেল।

ঘরে আলো জ্বলিতেছে। দেবু ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখিল, ঘরটি পরিপাটিভাবে সাজানো। খাটের উপর ধবধবে বিছানা পাতা, বিছানার পদপ্রান্তে একটি রঙীন সুজনি পাট করা রহিয়াছে। দেয়ালে একটি বড় ফটোগ্রাফ টাঙানো, দেবু কাছে গিয়া দেখিল, যে বৃদ্ধ সিঁড়ি দিয়া নামিয়া গেলেন তাঁহারই ফটো। শান্ত প্রসন্ন মুখে, চোখের দৃষ্টি জীবন্ত। দিদি যাঁহাকে ছোট্‌ঠাকুর বলিয়া উল্লেখ করিয়াছিল ইনি নিশ্চয় তিনিই।

কিন্তু ঘরের একটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করিয়া মনে মনে একটু বিস্মিত হইল। ঘরের বাতাস বদ্ধ, বাতাসে একটা মেটে-মেটে গন্ধ। অনেক দিন ঘর বন্ধ থাকিলে যেমন গন্ধ হয় সেইরূপ। দেবু জানালা খুলিয়া দিল, দ্বার ভেজাইয়া দিল, তারপর শয্যার পাশে বসিয়া সিগারেট ধরাইল। আজিকার নূতন অভিজ্ঞতাগুলি সে মনের মধ্যে গুছাইয়া লইতে চায়।

দিদি সুখে আছে, শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে একেবারে মিশিয়া গিয়াছে। উঃ, কি মোটাই হইয়াছে! কিন্তু মুখের ছেলেমানুষী ভাব এখনও যায় নাই। পরিমলবাবুও চমৎকার লোক। আর রানী! বাংলা দেশের মেয়েগুলো তো বেশ ভাল! ইহারা সকলেই সহজ স্বাভাবিক মানুষ, বড় সুখের একটি একান্নবর্তী পরিবার। দেবু নিশ্বাস ফেলিল, আবার কতদিনে ইহাদের সঙ্গে দেখা হইবে কে জানে!

সিগারেট শেষ করিয়া দেবু আলো নিবাইল, সুজনি গায়ে টানিয়া লইয়া শয়ন করিল। খোলা জানালা দিয়া রাস্তার আলো চোরের মতো তির্যকভাবে হাত বাড়াইয়াছে, ঘর একেবারে অন্ধকার নয়। দেবু ঘুমাইয়া পড়িল।

ওদিকে আভা ও পরিমলবাবুও শয়ন করিয়াছিলেন। আভা উৎসুক কণ্ঠে বলিল, হলে কিন্তু বেশ হয় না?

পরিমলবাবু বলিলেন, দেবুকে নেড়েচেড়ে দেখলাম, ছেলেটা খুব ভাল।

আভা গর্ব অনুভব করিয়া বলিল, আমার ভাই, ভাল ছেলে হবে না! এখন কাকা রাজী হলে হয়।

পরিমলবাবু বলিলেন, হ্যাঁ, অনেক সম্বন্ধই তো করলাম, কিন্তু কাকার পছন্দ হল না। এবার দেখা যাক। বলিয়া তিনি পাশ ফিরিয়া শুইলেন।

রাত্রি আন্দাজ তিনটের সময় দেবুর ঘুম ভাঙিয়া গেল। সে অনুভব করিল ঘরের মধ্যে কেহ ঘুরিয়া ফিরিয়া বেড়াইতেছে। কিছুক্ষণ শুইয়া থাকিয়া সে শয্যায় উঠিয়া বসিল; স্বল্পান্ধকারে মনে হইল কে যেন দরজা একটু ফাঁক করিয়া নিঃশব্দে বাহির হইয়া গেল।

আরও কিছুক্ষণ বসিয়া থাকিয়া দেবু উঠিল। আলো জ্বালিয়া দেখিল কেহ ঘরে নাই, তখন সে দ্বারে হুড়কা লাগাইয়া আবার আলো নিবাইয়া শয়ন করিল।

দ্বিতীয়বার দেবুর ঘুম ভাঙিল তখন চারটে বাজিয়া গিয়াছে, ভোর হইয়া আসিতেছে। সে চোখ মেলিয়া দেখিল, যে বৃদ্ধটিকে সে সিঁড়িতে দেখিয়াছিল তিনি শয্যার পাশে ঝুঁকিয়া একদৃষ্টে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া আছেন। দেবু ধড়মড় করিয়া উঠিয়া বসিতেই আর তাঁহাকে দেখিতে পাইল না।

শয্যা হইতে নামিয়া দেবু সুইচ টিপিয়া আবার আলো জ্বালিল। ঘরে কেহ নাই, দরজার হুড়কা পূর্ববৎ লাগানো রহিয়াছে।

দেবুর হঠাৎ গা ছমছম করিয়া উঠিল। সে হুড়কা খুলিয়া বাহিরে উঁকি মারিল। বাহিরেও কেহ নাই, বাড়ি সুপ্ত। তখন সে বৃদ্ধের ছবির দিকে তাকাইল। বৃদ্ধ প্রসন্ন অপলক চক্ষে তাহার দিকে তাকাইয়া আছেন।

সিগারেট ধরাইয়া দেবু জানালার কাছে গিয়া দাঁড়াইল। কী ব্যাপার! ভূতুড়ে কাণ্ড নাকি! কিংবা তাহারই স্নায়ুমণ্ডল উত্তেজিত হইয়া অবাস্তব ভ্রান্তির সৃষ্টি করিতেছে?

জানালার পাশে একটা আরামকেদারা ছিল, দেবু সিগারেট ফেলিয়া দিয়া তাহাতে লম্বা হইল। আর ঘুমের চেষ্টা বৃথা, ফরসা হইতে দেরি নাই।

হ্যাঁ রে, রাত্তিরে কি ঘুম হয়নি?

দেবু চোখ মেলিয়া দেখিল, ঘরে সকালের আলো ঝলমল করিতেছে; দিদি চায়ের পেয়ালা হাতে লইয়া তাহাকে ডাকিতেছে।

চোখ মুছিয়া দেবু চায়ের পেয়ালা লইল, তাহাতে এক চুমুক দিয়া বলিল, দিদি, উনি কে? বলিয়া দেয়ালে ফটোর দিকে আঙুল দেখাইল।

আভা থতমত খাইয়া বলিল, উনি? উনি আমার খুড়শ্বশুর ছিলেন, রানীর বাবা।

দেবু বলিল, খুড়শ্বশুর ছিলেন-তার মানে?

আভা থপ করিয়া মেঝেয় বসিয়া পড়িল, বলিল, দু বছর আগে উনি মারা গেছেন।

দেবু বলিয়া উঠিল, সে কি। ওঁকে যে আমি কাল রাত্তিরে দেখেছি।

দেখেছিস! আভা কিছুক্ষণ চাহিয়া থাকিয়া বলিল, মারা গেছেন বটে, কিন্তু উনি আছেন। এই ঘরটা ওঁর ছিল, এই ঘরেই আছেন। কোনও গণ্ডগোল নেই; বাড়িতে অতিথি এলে ওঁকে খবর দিলেই উনি ঘর ছেড়ে দেন। – তা তুই ভয় পাসনি তো?

দেবু বলিল, না, ভয় পাব কেন। কিন্তু সত্যি আছেন? মানে, সত্যি মারা গেছেন? আমি যে চোখে দেখলাম।

আভা ধীরে ধীরে বলিল, আমরা সবাই চোখে দেখেছি, ইচ্ছে করলেই উনি দেখা দিতে পারেন। তবে কথা বলেন না, ইশারায় নিজের কথা জানিয়ে দেন। মৃত্যুর আগে রানীর বিয়ে দেবার জন্যে ব্যর্থ হয়েছিলেন, কিন্তু বিয়ে দিয়ে যেতে পারেননি। তারপর আমরা রানীর বিয়ের অনেক সম্বন্ধ এনেছি, কিন্তু ওঁর পছন্দ হচ্ছে না।

দেবু কি বলিবে ভাবিয়া না পাইয়া বলিল, কি মুশকিল!

আভা তখন উৎসুক হইয়া বলিল, আজ কাকা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে তোকে ওঁর খুব পছন্দ হয়েছে। তুই রানীকে বিয়ে করবি? কাকা জানিয়েছেন রানীর বিয়ে হয়ে গেলে উনি চলে যাবেন, আর এ বাড়িতে থাকবেন না। করবি বিয়ে? ভারি ভাল মেয়ে রে, অমন মেয়ে আজকালকার দিনে দেখা যায় না।

দেবুর মাথাটা ঘুরপাক খাইতেছিল; সে দেওয়ালের দিকে চোখ তুলিল। দেখিল, বৃদ্ধের জীবন্ত চোখে যেন একটু হাসি খেলা করিতেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress