Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চোর ধরা || Chor Dhora by Lila Majumdar

চোর ধরা || Chor Dhora by Lila Majumdar

নন্দর আজ বেজায় মন খারাপ। সেই সকাল থেকে সব জিনিসকে কীসে যেন পেয়েছে! ঘুম থেকে উঠেই ভোদাকে ঠ্যাঙাতে গিয়ে অত ভালো হকি স্টিকটার হ্যাঁন্ডেলের সুতো কতখানি এল খুলে! তায় আবার ভোদা হতভাগা এমনি চেঁচাল যে বড়োমামা এসে নন্দর কান পেঁচিয়ে মাথায় খটাং খটাং করে দুই গাঁট্টা বসিয়ে দিলেন।

তারপর, সেই দেয়ালে কাজলকালি দিয়ে কুকুর তাড়া করছে, মোটা লোটার ছবি আঁকবার জন্যে বাবা মন্টুর সঙ্গে সেই চমৎকার জায়গায় সেই মজার জিনিস দেখতে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। নন্দ আর কী বলে! ছি, মই-বা কী ভাবল বলো তো? নাঃ! বুড়োরা যে কেন পৃথিবীতে জন্মায় বোঝা যায় না!

আচ্ছা, অন্যদের বাড়ির লোকেরাও কি এমন হাঁদা? এরা কিছু বোঝে না। এই তো কালই দিদির নাগরাইয়ের শুড় পাকিয়ে দেবার জন্য দিদি চাটাল। আচ্ছা, শুড় পাকিয়ে কী এমন খারাপটা দেখাচ্ছিল? ভারি তো নাগরাই! এর। চেয়ে আর কোথাও চলে যাওয়া ভালো–ইজিপ্টে যেখানে নীল নদীর ধারে ফ্লেমিংগো পাখিরা মাছ ধরে খায়, আর মস্ত মস্ত কুমিররা বালির উপর রোদ পোহায়।নয় তো মানস সরোবরে যেখানে এক-শো বছরে একটা নীল পদ্মফুল ফোটে। সেজদা বলেছে, কাগজে আছে কারা নাকি ছোটো ছোটো ঘোড়ার পিঠে বোঁচকা বেঁধে, টিনের দুধ, বিস্কুট, কম্বল-টম্বল নিয়ে সেখানে যাচ্ছে।

কিংবা তাদের ছেড়ে নন্দ আরও উপরে যাবে, যেখানে লোমওয়ালা মানুষরা কীসের জানি রস খায়, সে খেলেই গায়ের রক্ত গরম হয়ে ওঠে। কিংবা যাবার তো কত জায়গাই আছে!

খিদিরপুরের ডকেই যদি কাজ নেয় কে খুঁজে পাবে! সেই যে একবার নন্দ দেখেছিল, একটা পুলের তলায় ইট দিয়ে উনুন বানিয়ে মাটির হাঁড়িতে কী বেঁধে খাচ্ছিল কারা সব, ডকের কুলি হবেও-বা। সেইরকম করে থাকবে। কিংবা যারা গান করে করে গায়ে গায়ে ঘুরে বেড়ায় তাদের সঙ্গেও তো জুটে যাওয়া যায়। গোরুর গাড়ি নিয়ে মেলাতে মেলাতে বেড়ানো যাবে। কিন্তু তার আবার একটা অসুবিধে আছে। দিদিকে গান শেখাতে এসে গোপেশ্বরবাবু বলে গেছেন, কোকিলের ডিম ভেঙে খেলেও এ ছেলের কিছু হবে না।

গান করতে না পারুক, গোরুর গাড়ি তো চালাতে পারবে! হঠাৎ একটা ভীষণ সংকল্প করে নন্দ সটান উঠে একেবারে ঘোরানো সিঁড়ির দরজার কাছে এসে দাঁড়াল।

মা বলেছেন, খবরদার ও দরজা খুলবি নি। বিপদে পড়বি। কী বিপদ অনেক ভেবে নন্দ মাসিমাকে জিজ্ঞেস করেছিল। মাসিমা বলেছিলেন, ওরে বাবা! সে ভীষণ বিপদ!

কী ভীষণ? জিজ্ঞেস করাতে আবার বললেন, সিঁড়ির মোড়ে মোড়ে বেজায় হিংস্র লোকেরা নাকি বাঁকা ছুরি হাতে চকচকে চোখ করে ওত পেতে আছে সারা রাত, ভোর বেলা গঙ্গায় জাহাজের বাঁশিগুলো যেই বেজে ওঠে ওরাও কোথায় আবছায়াতে চলে যায়। নন্দ জানতে চাইল তারা কোত্থেকে এসেছে। মাসিমা বললেন, কেউ এসেছে জাভা থেকে, কেউ সানফ্রানসিস্কো, কেউ কাম্বোডিয়া থেকে। আউটরাম ঘাটের কাছে তাদের জাহাজ নোঙর দেওয়া আছে, জাহাজের পাশের রেলিং না-দেওয়া সরু কাঠের সিঁড়ি বেয়ে রাত দুপুরে নেমে এসেছে, ভোর না হতেই আবার ফিরে গিয়ে জাহাজের নীচে অন্ধকার ঘরে প্রকাণ্ড উনুনে কয়লা পুরবে।

একবার অনেক রাতে নন্দ কোথা থেকে নেমন্তন্ন খেয়ে ঘরে ফিরছিল। তখন নিজের চোখে দেখেছিল ছোটো ছোটো টিমটিমে আলো নিয়ে কারা যেন ঘোরানো সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করছে। তাই দরজার সামনে এসে নন্দ একবার থামল। বেশ রাত হয়েছে, বাইরে খুব হাওয়া দিচ্ছে, কেমন অদ্ভুত একটা আওয়াজ হচ্ছে। হাওয়া তো রোজই দেয় আজকাল, কিন্তু এ-রকম তো কখনো মনে হয় না।

নন্দ দরজা খুলল, চামচিকের খোকার কান্নার মতন একটা শব্দ হল। একটা বড়ো সাইজের ঠ্যাঙে লোমওয়ালা মাকড়সা সড়সড় করে নন্দর পায়ের উপর দিয়ে চলে গেল।

প্রথম সিঁড়িতে পা দেবার আগে নন্দ উপর দিকে তাকাল, যতদূর দেখা যায় সিঁড়ি ঘুরে পাঁচ তলার ছাদ পর্যন্ত উঠেছে, আর নীচের দিকে যতদূর দেখা যায় ঘুরে ঘুরে এক তলার শানবাঁধানো গলি পর্যন্ত নেমেছে।

সিঁড়ির রেলিংটা ক্যাঁ-কোঁ করে নড়ে উঠল, কার জুতো জানি চাপাগলায় মচমচ করে উপর থেকে নেমে আসতে লাগল। নন্দর হাত-পা হিম হয়ে গেল, অন্ধকারে দেয়ালের গায়ে চ্যাপটা হয়ে টিকটিকির মতন লেগে রইল।

তারপর দেখল বুড়ো-আঙুল-বার-করা, জিভ-কাটা ছেঁড়া হলদে বুট-পায়ে, তালি-দেওয়া সুতো-ঝোলা লম্বা পেন্টেলুন-পরা দুটো ঠ্যাঙ সিঁড়ির বঁক ঘুরে নামতে লাগল। তারপর দেখল, পিঠে তার মস্ত ঝুলি, থুতনিতে খোঁচা দাড়ি, নাকের উপর আঁচিল, তার উপর তিনটে লোম, ন্যাড়া মাথায় নোংরা টুপি বোঝ হয় সেই হিংস্র লোকদের কেউ একজন! ভয়ের চোটে নন্দর একপাটি চটি ছিটকে খুলে, ঠুংঠং করে সিঁড়ির ধাপ বেয়ে নীচে চলল, আর সেই হলদে বুটপরা হিংস্র লোকটা থতমত খেয়ে বোঁচকা ফেলে দে ছুট!

নন্দর কিন্তু আর কিছু মনে নেই। কেমন ভেড় বানিয়ে গিয়েছিল! লোকটা কিন্তু নিজেই টেনে কোথায় দৌড় লাগাল!

এদিকে পাঁচ তলার লোকেরা আজও গল্প করে নন্দ নামে একটি ছোটো ছেলে চোর ভাগিয়ে জিনিস বাঁচিয়েছিল।

শুনে শুনে নন্দ মনে ভাবে– বুড়োরা কী হাঁদা! কিন্তু বাইরে কিচ্ছু বলে না, চালাক কিনা!

1 thought on “চোর ধরা || Chor Dhora by Lila Majumdar”

  1. খুব সুন্দর গল্প, এদের প্রশ্ন ও উত্তর এর ধাঁচে গল্প গুলো কে পরা যায় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *