বেশ কদিন ধরে ছিলাম ত্রঁটেল মাটিতে
আপাদমস্তক লেপ্টে-থাকা কচ্ছপ যেন।
ঈষৎ নড়তে চড়তে চাই,
চাই গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে,
অথচ থকথকে কাদা
আটকে রাখে, পেয়ে বসে স্থিবিরতার ঝিমুনি।
তোমার আমার চুক্ষমিলনের জন্মবার্ষিকী আজ। চকিতে
ভোরবেলার আলোঝর্ণার স্পর্শে কাদামাখা পিঠ
চড় চড় করে, গাছের পাতা কানে ঢালে
সবুজ ধ্বনি, পাখির গান চোখ থেকে
সরায় শুকনো কাদার ভগ্নাংশ। কাদার টুকরোগুলো
স্বপ্নকণা হ’য়ে জ্বলতে থাকে। সবার অলক্ষ্যে দিনটি
লাল চঞ্চুতে নীল পদ্ম নিয়ে আমার ছোট ঘরের
সরোবরে এক রাজহাঁস; আহ্, এ কী আনন্দধারা ধমনী জুড়ে!
কেউ না জানুক, গোধূলিজড়ানো আকাশ আর হৃদয় জানে-
তোমার আমার প্রথম দেখার মুহূর্তটির
জন্মবার্ষিকী আজ। নিঃশ্বাস-কাড়া ডিজেলের কালো ধোঁয়া,
যানজটের দমবন্ধকরা গুমোট আর সন্ত্রাসীর অন্ত্রের ধমক
উজিয়ে কোত্থেকে
কয়েকটি প্রজাপতি উড়ে এলো এই নীরব, বড় নির্জন জন্মোৎসবে
আমার ঠোঁটে মিলনবেলার চুম্বন আঁকতে। কখন যে
ধমনী থেকে ঝংকার, একমুঠো চকচকে মুদ্রার মতো শব্দ, টের পেলাম
শরীর থেকে কাদার শক্ত খোলস জয়োল্লাসে
ফেটে চৌচির হওয়ার পর।
আমাদের প্রথম দেখার জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
জানায় তরুণ রোদ, তরুণী জ্যোৎস্না,
স্বর্ণচূড়া তোমার জন্যে উপটৌকন পাঠায়
নিজের হাতেবোনা লাল চেলী; কালপুরুষ ছড়িয়ে দেন
তার বিখ্যাত সুদূর হাসি এই অখ্যাত জন্মোৎসবে।
জীবিকার নাছোড় ত্র্যালবাট্রস গলায় নিয়ে
ঘেমো রাস্তায় ঘোরাঘুরি, হুমকি আর
বিদ্রূপের কাঁটা-ছড়ানো পথে হাঁটাহাঁটি সেরে নিজের
লেখার টেবিলের নির্জনতাকে আলিঙ্গন ক’রে
সত্তায় চকিতে হ’য়ে ওঠা এই আমিকে দেখে
অন্তঃপ্রেরণার ঝর্ণাটানে আমাদের নিবিড় প্রথম দেখার
জন্মবার্ষিকীকে সাজাই অপরূপ অদৃশ্য সাজে।
আমাদের প্রথম দিনের মুহূর্তগুলোকে জ্যোৎস্নাস্নাত
জলকন্যাদের মতো সাঁতার কাটতে দেখে বিস্মিত
তাকিয়ে থাকি। আমি হই ক্রিসমাস ট্রি এবং
আমাকে জড়িয়ে থাকে অনেক আশ্চর্য রঙিন বাল্ব।
আমার দিকে ছুঁড়ে-দেওয়া সব ইটপাটকেলকে
পুষ্পসার বানিয়ে হাসি; আহ্ কী আনন্দধারা জগৎ জুড়ে!