কী ক’রে কেবলি স্বরময় হ’য়ে যাও নিরালায়?
আমার মানসে তুমি মাঝে-মাঝে হ’য়ে ওঠো ধ্বনির প্রতিমা।
তোমার অমন কণ্ঠস্বরে একটি সামান্য যন্ত্র
কী মোহন পরীর খেলনা
হ’য়ে যায় নিমেষেই, কেমন সঙ্গীতময় হয় অগোচরে।
কম্পিত আঙুলে হ’য়ে, ঠোঁট হ’য়ে তোমার ব্যাকুল কণ্ঠস্বর
নিভৃত আমাকে ছোঁয় আমার এ ক্ষয়িষ্ণু বেলায়।
মুহূর্তের ঢেউগুলি তোমাকে অনেক দূরে সরিয়ে কোথায়
নিয়ে যায় ব’লেই আমার
এত কাছে এসে যাও। যখন হঠাৎ একা রুঢ় সমাজের
কাছ থেকে, তোমার নিজস্ব নাম থেকে নিজেকে লুকিয়ে তুমি
শুধু স্বর হ’য়ে
শুধু স্বর হ’য়ে
শুধু স্বর হ’য়ে
আমার অস্তিত্বে তুমি পূরবীর নির্জন সুরভি,
তখন আমিও লোকচক্ষুর আড়ালে গ্রন্থ আর
টেবিল চেয়ার থেকে, ডায়েরীর পাতা থেকে নিজেকে সরিয়ে
নিজস্ব চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার মতো
পান করি একটু সময়,
পান করি অবিরল তোমার শিশিরগন্ধী স্বর।
শুনেছি তোমার কণ্ঠস্বরে যেন কোনো একাকিনী
দূর কারাবাসিনীর কাতর প্রার্থনা
পাথরে পাথরে গুমরানো,
কখনো বা মধ্য সমুদ্রের
স্পর্শাতীত মৌনে জেগে ওঠা জলকিন্নরীর গান।
হে সুদূরতমা, শোনো, তুমি-ধন্য তোমার নিবাস
আমার আপনকার মৃত্যুহীন স্বপ্নের প্রদেশ।
ক্ষয়িষ্ণ, বেলায় একা বসে থাকি উৎকর্ণ, অধীর-
ফের বাজাবে কি সেই কণ্ঠস্বর স্বপ্নের জ্যোৎস্নায়?