Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কলুষ ধারণকারিনী || Roma Gupta

কলুষ ধারণকারিনী || Roma Gupta

শারদীয়া দুর্গোৎসব আসন্ন।নবীন খুড়ো ব্যস্ত প্রতিমা গড়ার কাজে। একাই থাকেন। স্ত্রী গত হয়েছে অনেকদিন। একটিমাত্র কন্যা দুর্বা,ঘটকের মাধ্যমে বিয়ে দেন পাশের গ্ৰামে উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে।ধার দেনা করে বাড়ি বন্ধক রেখে বরপণ দেন।
বিয়ের পর মেয়ে একবার এসেছিল, বাবা প্লাস্টিক ছাওনি দেওয়া দরমার ঘরে কোনোরকমে থাকে দেখে থাকেনি একটা রাতও। বলে বাবা বন্ধকী বাড়ি ছাড়াবে যবে এসে থাকবো ক’দিন। শ্বশুর বাড়িতে অবহেলিত, স্বামী মাতাল। কষ্টের কথা বাবাকে বলেনি।
মেয়ে চলে যাওয়ার মাসখানেক পর পাড়ার শুভাকাঙ্ক্ষীদের আর্থিক সাহায্যে বাড়ির বন্ধকী ছাড়াতে সক্ষম হয় নবীন খুড়ো।
তারপর একদিন মেয়ের শ্বশুর বাড়ি যায়, মেয়েকে এনে কিছুদিন কাছে রাখবে বলে। কিন্তু গিয়ে শোনে মেয়ের শাশুড়ি মুখ ঝামটা দিয়ে বলছে, কুলটা মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছে। জানিনা কোথায় আছে। জামাই বলে, এমন মেয়ে জানলে বিয়ে করতাম না। ফের এখানে আসলে মেরে তাড়াবো।
নবীন খুড়ো হতবাক। তাঁর দুর্বা তো বাজে মেয়ে নয়! গ্ৰামে ফিরে সবাইকে জানিয়ে হাতজোড় করে বলে আমার মেয়ে দুর্বার খোঁজ পেলে জানিও। মেয়েটা কোথায় আছে, কেমন আছে কে জানে? নাওয়া খাওয়া ভুলে পাগলপ্রায় খুড়ো। সবসময় মূর্তি গড়ার কাজে মেতে থাকেন, আর মূর্তির মুখে তাকিয়ে বলেন, এইতো আমার দুর্বা। কাছে কেউ থাকলে ডেকে বলেন, দেখ, দেখনা চোখটা আমার দুর্বার মতো না?
আজ দুবছরের উপর নবীন খুড়োর মেয়ের খোঁজ নেই। কোথায় যাবে খোঁজ করতে, নিজের বলে তো কেউ নেই। বৃদ্ধ, তাই একে ওকে মিনতি করেন। সবাই আশ্বাসের বাণী শোনায়, খুড়ো আশায় থাকেন।
এক সপ্তাহ বাদেই মহালয়া। নবীন খুড়ো প্রতিমা সজ্জায় দিনরাত ব্যস্ত। একদিন পাড়ার ছেলে মিঠুন এসে বললো, খুড়ো তোমার দুর্বা নিষিদ্ধ পল্লীতে আছে দেখলাম। শুনে খুড়ো শিউরে ওঠেন। বলেন এ হতে পারেনা আমি নিজের চোখে দেখবো।
পরদিন ভোরে ছেলেটির সাথে রওনা দিলেন সেই স্থানে। তল্টাটে ইতস্তত ঘুরছেন, শেষে খদ্দের সেজে ভিতরে যাবে ঠিক করে যেই এগিয়েছেন, দেখেন সামনেই তার দুর্বা।
বাবাকে বলে, তোমার জামাই আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে। আমার আর ফিরবার অবস্থা নেই, কেউ আমাকে ভালোভাবে নেবেনা।তোমায় একঘরে করবে। আমিও ভাবছিলাম আমার কথা তোমায় কি করে জানাবো। ফিরে যাও বাবা, পরিচয় দিওনা আমার, ভুলে যেও আমায়।
নবীন খুড়োর চোখে জল। অসহায়ের মত বলেন, “এ কোন সকাল দেখালি আমায় মা উমা! আমি তোর মূর্তি গড়ি,তুই এই দিলি পুরস্কার ? আসছিস ধরায়। আমার দুর্বা, সেও তো উমা, দেখ চেয়ে তার কি হাল!”
মেয়েকে জড়িয়ে ধরে হলেন অজ্ঞান।
হুলুস্থুল পড়লো পাড়ায়। জলের ছিটা দিয়ে বাবার জ্ঞান ফিরলে মেয়ে প্রণাম করে বলে , ভাগ্যের পরিহাস, ফিরে যাও বাবা।
নবীন কাকা উদাস ভাবে বলেন, হ্যাঁ মা আমার উমা, তুই যে জগতের কলুষধারিনী। তুই-ই আমার দেবী উমা। তোর পূজায় তো পতিতালয়ের মাটি লাগে। যাই নিয়ে যাই এই ভিটের মাটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *