Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কর্ণ || Chinmoy Banerjee

কর্ণ || Chinmoy Banerjee

হে মহাভারতের রূপকার,আদি কবি
মহর্ষি বেদব্যাস, প্রণমী চরণে তব।
বিরচিলে কবে কোন সুপ্রাচীন কালে,
মহাভারতের পবিত্র কাহিনী।বিরচিলে,
অধর্মের অবসান তরে ,ধর্মের জয়গাথা ।
জাহ্নবীর পূতধারা সম ,আজিও ভারতে,
যাহা অমৃতবাহিনী।প্রণয়ন করিলে, মহাবীর
কর্ণ সম, বীরের আখ্যান। হে দেব,আশীষ
করহ মোরে, প্রকাশিতে কর্ণের,বীরত্ব বৈভব।
মহাভারতের অবহেলিত ,উপেক্ষিত নায়কের
সেই মর্মন্তুদ গৌরবগাথা। আজিও বিরাজিছে
যাহা,সহস্রকিরণ সম,তোমার অমর সৃষ্টিতে।
শতদল যেমতি সরোবর নীরে ,অনুপম শোভা
লয়ে বিরাজে সেথায়,তেমতি শৌর্য,বীর্য, দয়া,
প্রেম লয়ে বিরাজিছে কর্ণ সুমতি, মহাভারতের
মহা পরিসরে , স্বর্ণাক্ষরে প্রখর প্রভায়।
পুত্রেষ্টি মন্ত্রলব্ধ কুন্তীভোজ রাজকুমারী
কুন্তী, যবে কৌতূহল বশে , সূর্যেরে করিল
আহ্বান,পুত্র লভিবার তরে।রক্ষিতে তাহার
মান ,সূর্য করিলেন তার গর্ভের সঞ্চার। এবে
কুমারী মাতার গর্ভে জম্মিল ,অক্ষয় বর্ম ও
কবচকুণ্ডল পরিহিত ,মহাভারতের মহাবীর
কর্ণ। তরুণ অরুণকান্তি,আহা কত শোভাময়।
কিন্তু,কানীন পুত্র বলি, লোকলজ্জ্বাহেতু,মাতা
কুন্তী,বেত্রের পেটিকা ‘ পরে স্থাপিয়া তাহারে,
ভাসাইয়া দিলো তাহে, জাহ্নবীর পূত ধারা
‘ পরে। ক্ষনিকের তরে,বিসর্জন দিলা মাতার
অপত্য স্নেহ। ডুকারিয়া কাঁদি ফিরে তাহার
হৃদয় ,আজীবন তরে। অবশেষে অধিরথ
দম্পতি ,নদী হতে উদ্ধারিয়া তারে,লালন
করিল পুত্রসম। বসুষেন নামে হলো, তার
পরিচয়। সূর্যপুত্র কর্ণ ,হলো অধিরথ সুতপুত্র।
ধনুর্বিদ্যার প্রতি বাল্যকাল হতে, আগ্রহ তাহার।
অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য , কুরু পান্ডবেরে লয়ে,
অস্ত্র শিক্ষা দানিতেছিলেন যবে, হেনকালে
কর্ণ আসি সেথা, শিষ্যত্ব যাচিল তাঁহার।কিন্তু সুতপুত্র বলি প্রত্যাখ্যান করিলেন তিনি,অনুরোধ
তার।অতঃপর, দ্রোণগুরু পরশুরাম সন্নিধানে
উপনীত এবে ,প্রত্যাখ্যাত কর্ণ ,আত্ম পরিচয়
সঙ্গোপন করি,ব্রাহ্মণ পরিচয়ে। বরণ করিলেন
তিনি, শিষ্য রূপে কর্ণেরে। অস্ত্রবিদ্যা দানিয়া
তাহারে,পারদর্শী করিলেন তিনি।পরিশেষে ,
তাঁর সমতুল্য যোদ্ধা রূপে ,করিলেন স্বীকার।
কিন্তু যবে পরশুরাম কর্ণের ক্রোড়ে,মস্তক
রাখি নিদ্রামগ্ন আছিলেন সেথা,হেনকালে
বিষাক্ত অলর্ক এক দ্রুত ,বিদীর্ণ করিল উরু
তার। যন্ত্রণায় কাতর কর্ণ,রহিল নিশ্চল ,
ধ্রুবতারা সম,গুরুর আননে চাহি বারম্বার।
কিন্তু উষ্ণ শোণিতধারা,গুরুঅঙ্গ ‘ পরে,
বহিল যখন ,নিদ্রাভঙ্গ হইলো তাহার ।
অনুমানে বুঝিলেন তিনি, অব্রাহ্মণ কর্ণ।
নিরূপায় কর্ণ,স্বীকার করিল তাহা,গুরুর
সকাশে। মিথ্যাচারে ক্ষুব্ধ গুরু ,শাপিলেন
তারে , ” ওরে মূঢ়মতি কর্ণ ! এই মিথ্যাচার
হেতু, দিব্যাস্ত্র ত্যাগের কৌশল, ভুলিবি রে
তুই,চরম সংকটকালে। কিন্তু, মুগ্ধ আমি
তুষ্ট আমি,তব অধ্যবসায়ে। তাই এবে,
উপহার দিনু তোরে, ভার্গবাস্ত্র সহ বিজয়
ধনু।” কালান্তরে ,দেবরাজ ইন্দ্রের মায়ায়,
ভ্রমবশে কর্ণ যবে,বধিল এক গোবৎসেরে,
তীক্ষ্ণ শরাঘাতে, তখন পালক ব্রাহ্মণ রূঢ়কণ্ঠে
কহিলেন তারে, ” রে পামর, যেমতি গোবৎস
মম অসহায়ভাবে,প্রাণ দিল তব শরাঘাতে,
তেমতি করুণভাবে ,মরিবি রে তুই। মেদিনী
গ্রাসিবে রথচক্র তোর ,যুদ্ধকালে। অন্যথা
হবে না তাহা ।” বিধির কি নির্মম পরিহাস !
দানশীলতার ক্ষেত্রে কর্নের সমকক্ষ কেহ
নাহি আর,এ বিশ্বসংসারে। ইতিহাস হয়ে
তাহা বিরাজিছে,মহাকাব্যের মহা পরিসরে।
একদিন ব্রাহ্মণ রূপ ধরি,কৃষ্ণ ভগবান,
আসিলেন তাহার সকাশে, পরীক্ষিতে
দানশীলতা তার। কহিলেন তিনি,” আমি
এক ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণ, আহার্য কিছু তাই ,
প্রার্থনা করিতেছি তোমার সকাশে, দেহ
মোরে তাহা। শয্যাপরে যে শিশুটি রয়েছে
শয়ানে,তাহার কোমল মাংস আনি দেহ মোরে,
ভক্ষিব এখনি।” অতঃপর সস্ত্রীক কর্ণ ,ব্যাথাতুর
চিতে, বধিল পুত্রেরে।এবে পুরাইলো আশা ,
ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণের। হেন ব্যবহারে, মন্ত্র মুগ্ধ কৃষ্ণ,
প্রকাশিল স্বরূপ তাহার। আশিসিয়া তারে,
দানিল জীবন তার,মুহূর্তের পরে।
একদিন যবে কর্ণ, জাহ্নবীর তীরে, প্রভাত
সূর্যের বন্দনায় আছিলেন রত, হেনকালে
ইন্দ্রদেব আসিয়া সেথায়,অর্জুনের জীবন তরে
যাচিলেন তাঁর ,সহজাত কবচকুণ্ডল। নিমেষের
তরে কর্ণ,চিনিলেন তাঁরে।তথাপি সত্যপালনের
তরে, আপন অঙ্গ হতে ছেদিয়া তাহারে,তুলি
দেন ইন্দ্রের হাতে। জীবন তুচ্ছ করি, মর্যাদা
দিলেন তিনি,দানশীলতার প্রতি।তাই এবে,
চির ভাস্বর হয়ে,বিরাজে তাহার নাম পূর্ণ ইন্দু
সম,মহাভারতের মহাকাশে ।
একদিন দ্রোণ মহামতি,শিষ্যদেরলয়ে,সমবেত হলেন এক প্রতিযোগিতায়, সমরবিদ্যা পরীক্ষার তরে।সেথায় প্রিয় শিষ্য অর্জুনের অস্ত্রকৌশলে
সবে বিমুগ্ধ যবে, হেনকালে মহাবীর কর্ণ আসি,
দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করিল তারে।কিন্তু সুতপুত্র পরিচয় জানিয়া সকলে,প্রত্যাখ্যান করিল তাহে।
হেন অপমানে কর্ণ ব্যথাতুর চিতে,প্রস্থানে উদ্যত
হলো রঙ্গভূমি হতে। হেনকালে কুরুকুলপতি
দূর্যোধন আসি আলিঙ্গন করি,অঙ্গরাজ্যের
নৃপতিরূপে ,তারে করিল বরণ। চিরস্থায়ী
বন্ধুত্বের হলো শুভ আবাহন। আজীবন তরে,
হৃদয়ের ডোরে বাঁধা,রহে পরস্পরে।
যবে দ্রোণ মহামতি, যুধিষ্ঠির মুখে,পুত্রের
মৃত্যুসংবাদ শুনি ,কুরুক্ষেত্র রণে ত্যজিলেন
দেহ মনোদুখে, সেইক্ষণে,মহাবীর কর্ণ,করিল
গ্রহণ, সেনাপতির দায়িত্বভার, কৌরবশিবিরে।
আমরণ সংগ্রাম করিল সে দ্বৈরথ সমরে।কিন্তু
যবে রথচক্র গ্রাসিল মেদিনী,প্রাণপণ চেষ্টা করি
তুলিতে নারিল তাহা, সেইক্ষণে অর্জুন অঞ্জলিক
বাণে , শিরচ্ছেদ করিল তাহার।এবে শাপগ্রস্ত
হীনবল কর্ণ ,বরিল মরণ অসহায়ভাবে।নিরস্ত্র
যে অরি ,ক্ষত্রিয়ের ধর্ম নহে আঘাতিতে তারে।
কিন্তু অর্জুন অন্যায়ভাবে ,বধিল নিরস্ত্র কর্ণেরে।
মহাভারতের মহাকাশ হতে,খসিয়া পড়িল যেন
উজ্জ্বল নক্ষত্র অবনী মাঝারে। ঝলসি উঠিল
দশদিশি, কোটি কোটি বিগলিত চিত্ত,আজিও
অশ্রুসিক্ত নয়নে ,খুঁজে ফেরে মহাবীর কর্ণেরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *