ওরে কবি , সন্ধ্যা হয়ে এল ,
কেশে তোমার ধরেছে যে পাক ।
বসে বসে ঊর্ধ্বপানে চেয়ে
শুনতেছ কি পরকালের ডাক ?
কবি কহে , ‘ সন্ধ্যা হল বটে ,
শুনছি বসে লয়ে শ্রান্ত দেহ ,
এ পারে ওই পল্লী হতে যদি
আজো হঠাৎ ডাকে আমায় কেহ ।
যদি হোথায় বকুলবনচ্ছায়ে
মিলন ঘটে তরুণ – তরুণীতে ,
দুটি আঁখির ‘পরে দুইটি আঁখি
মিলিতে চায় দুরন্ত সংগীতে—
কে তাহাদের মনের কথা লয়ে
বীণার তারে তুলবে প্রতিধ্বনি ,
আমি যদি ভবের কূলে বসে
পরকালের ভালো মন্দই গনি ।
‘ সন্ধ্যাতারা উঠে অস্তে গেল ,
চিতা নিবে এল নদীর ধারে ,
কৃষ্ণপক্ষে হলুদবর্ণ চাঁদ
দেখা দিল বনের একটি পারে ,
শৃগালসভা ডাকে ঊর্ধ্বরবে
পোড়ো বাড়ির শূন্য আঙিনাতে—
এমন কালে কোনো গৃহত্যাগী
হেথায় যদি জাগতে আসে রাতে ,
জোড় – হস্তে ঊর্ধ্ব তুলি মাথা
চেয়ে দেখে সপ্ত ঋষির পানে ,
প্রাণের কূলে আঘাত করে ধীরে
সুপ্তিসাগর শব্দবিহীন গানে—
ত্রিভুবনের গোপন কথাখানি
কে জাগিয়ে তুলবে তাহার মনে
আমি যদি আমার মুক্তি নিয়ে
যুক্তি করি আপন গৃহকোণে ?
‘ কেশে আমার পাক ধরেছে বটে ,
তাহার পানে নজর এত কেন ?
পাড়ায় যত ছেলে এবং বুড়ো
সবার আমি একবয়সী জেনো ।
ওষ্ঠে কারো সরল সাদা হাসি
কারো হাসি আঁখির কোণে কোণে
কারো অশ্রু উছলে পড়ে যায়
কারো অশ্রু শুকায় মনে মনে ,
কেউ বা থাকে ঘরের কোণে দোঁহে
জগৎ মাঝে কেউ বা হাঁকায় রথ ,
কেউ বা মরে একলা ঘরের শোকে
জনারণ্যে কেউ বা হারায় পথ ।
সবাই মোরে করেন ডাকাডাকি ,
কখন শুনি পরকালের ডাক ?
সবার আমি সমান – বয়সী যে
চুলে আমার যত ধরুক পাক । ‘