আজকাল প্রায়শই অনিদ্রা-পীড়িত রাত কাটে। মাঝে-মাঝে
ধু ধু ক্লান্তি দু’চোখ বিছিয়ে দেয় কুয়াশার জাল
বিলম্বিত নিদ্রায় এবং দেখি আমি ভ্রাম্যমাণ
কাঁটাবনে বড় একা। আমার শরীর থেকে রক্ত
ঝরছে তো ঝরছেই আর পর মুহূর্তেই আমার মাথাটা
খাচ্ছে গিলে অর্ধেক- নেকড়েরূপী জীব।
আচমকা দুঃস্বপ্নের ধোঁয়া ছিঁড়ে জেগে
উঠেছি বলেই মনে হয় নাকি প্রকৃতই কোনো ঘোরে বন্দি
হয়ে আছি? সুতপা চাঞ্চল্যে তুমি সুললিত কৈশোরের বেড়া
ডিঙিয়ে যৌবনে পৌঁছে বুনেছিলে কত না স্বপ্নের অত্যুজ্জ্বল
মায়াজাল, ছিলে মগ্ন অপরূপ ঘোরে। সুতপা, তোমার আর
প্রমীলার পূর্বপুরুষেরা অবিরল
ঝরিয়েছে ঘাম এ দেশের শ্যামল মাটিতে। রোদে পুড়ে
অঝোর বৃষ্টিতে ভিজে ফলিয়েছে সোনালি ফসল। অবিনাশ,
তোমার জনক এই এলাকায় সুশৃঙ্খল বিদ্যানিকেতনে
মানুষ গড়ার কারিগর রূপে কাটালেন সারাটি জীবন
তবু, অবিনাশ, নিজ বাসভুমে নিজ চোখে তোমাকে দেখতে হলো
সহোদরা সুতপা এবং প্রমীলার কুমারীত্বহরণের
পৈশাচিক লীলা আর রক্তাপ্লুত বাবা মা’রে নিঃসাড় শরীর
বিধ্বস্ত বাস্তুভিটায়, ক্ষণকাল আগেও ছিল যা ছিমছাম,
রুচিশীল। প্রতিরোধ ভঙ্গুর, নিষ্ফল ছিল। সুতপা, প্রমীলা
পাথরের মতো ছিল নিথর, নিশ্চুপ; অবিনাশ, তুমি নিজে
ভীষণ আহত, প্রতিবেশীগণ ভীত, পলাতক। আমরাও
অতিশয় ব্যর্থ, অসহায়, যোজন-যোজন দূর থেকে ছুটে
এসে ঠিক পারিনি দাঁড়াতে তোমাদের পাশে
বাড়িয়ে মৈত্রীর হাত রুখে দিতে কবন্ধ তাণ্ডব। এ ব্যর্থতা
প্রেতচ্ছায়া হয়ে প্রায়শই জুড়ে দেবে বিভীষিকাময় নাচ,
আমরা ধিক্কারে বিদ্ধ করব নিয়ত নিজেদের।