কঠিন সময়
রমলা স্কুল থেকে সাইকেলে ফেরে। বাড়ি থেকে স্কুল প্রায় এক মাইলের বেশি দূরত্ব। আগে স্কুলের খাঁচাগাড়ি করে ফিরত।নবম শ্রেণীতে ওঠার পর বিভিন্ন কোচিং ক্লাসে যেতে হয়।তাই বাবা সাইকেল কিনে দিয়েছে। সাইকেল কেনার পর স্কুলেও রুমেলা সাইকেলে যায়।
এত পড়ার চাপ ,গান, আঁকা করতে গিয়ে প্রকৃতির সুন্দর রূপ,আত্মিয় পরিজনের বাড়িতে যাওয়া সব বন্ধ।
সারাদিন মার বকবক আর রমলার ভালো লাগত না।স্কুল থেকে ফিরে কোচিং করে ফেরার সময় দেখে সাইকেলে হাওয়া নেয়।এতটা পথ কি করে আসবে!!প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে। হঠাৎ পিটে হাত। চমকে ওঠে রমলা!
কে কে করে চিৎকার করে ওঠে। দেখে কোচিং স্যার।স্যার বলে সাইকেল টা আমার কোচিং ঘরে রেখে আয়। টাকা দিচ্ছি রিক্সাতে বাড়ি চলে যা।রুমেলা বলে না স্যার কাল স্কুল নেই ,পরশু তো স্কুলে সাইকেল লাগবে। আমি হেঁটেই চলে যাব।স্যার বলে কাল সকালে আমি সারিয়ে দেব।তুই বাড়ি যা।এরপর তো কাশ জঙ্গল।বেশ ফাঁকা। এরমধ্যে স্যারের বাড়ি থেকে ফোন আসে। রুমেলা সাইকেল নিয়ে
হাঁটা শুরু করে।কাশবনে জ্যোৎস্নার আলো পড়ে মনে হয় কাশবন আজ রঙিন লাগে !! অপরূপ শোভা!
ঝাউবনে অমূল্যদা, প্রকাশদা,জয়ন্তদা কি করছে!!!
আরে অতসী কাঁদছে কেন। দাদারা কোচিং এর বিভিন্ন বিষয় পড়ায়।
অতসী তো রুমেলার চেয়ে ও ছোট!
ওনারা অতসীকে টানাটানি করছে।
হটাৎ রুমেলা সাইকেল ফেলে স্যারের কাছে ছুটে এসে সব কিছু জানাতে চেষ্টা করে। রুমেলা আর স্যার ছুটে যায়।তখন চলছিল এক একের দাদা র অত্যাচার। অতসীর আর্তনাদ শুনে স্যার রুমেলার সাইকেলের চেন খুলে তেড়ে যায়।অতসী তখন রক্তাক্ত। একবার বলে স্যার আমার রক্তে #কাশবন আজ রঙিন লাগে। রুমেলা ও স্যার মিলে ডাক্তার খানায় নিয়ে যায়। বাড়ি থেকে লোকজন আসে।এগার বছরের মেয়ে কাশবনে ধর্ষণ। রুমেলার বাড়িতে হুমকি,স্যারের বাড়িতে হুমকি।মুখ খুললে জীবন শেষ করে দেবে।স্যার বলে রুমেলার বাড়িতে এসে পুলিশকে জানাতে স্যার ও রুমেলা গোঙানির শব্দে কাশবনে যায়। ওদের নাম বললে রুমেলার ক্ষতি হতে পারে। সবার জানা স্যারকে প্রচুর টাকা দিয়ে ছিল তিন ধর্ষকের পরিবার। রুমেলা প্রতিবাদ করেছিল বলে রুমেলার মুখটা পুরো পোড়া। একটা চোখ পাথরের।
দিন যায় রুমেলা এখন এক চোখে জগৎ দেখে।শরৎ এলে কাশ ফুটলে সেই অতসীর কথা মনে পড়ে ..স্যার কাশফুল সব রঙিন লাগে।আজ অতসী কোথায় কে জানে!তবে অতসী তোর রুমেলা দি প্রতিবাদ করে এই হাল। তোরা না বলে কোথায় চলে গেলি। তোরবাবা তোর কথা ভেবে হয়ত জায়গা বিক্রি করে চলে গেছিল।তোর বাবা ও মা রুমেলার জীবনের কথা ভাবল না।ধর্ষকদের বিচার হলো না।আর কেউ কারর উপকার করবে না।