Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ঐতিহাসিক স্যার যদুনাথ সরকার || Sankar Brahma

ঐতিহাসিক স্যার যদুনাথ সরকার || Sankar Brahma

ঐতিহাসিক স্যার যদুনাথ সরকার

যদুনাথ সরকারের জন্ম ১৮৭০ সালের ১০ই ডিসেম্বর, বৃহত্তর রাজশাহী জেলার আত্রাই থানার (বর্তমান নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলার ছাতারদিঘী ইউনিয়ন) কড়চমারিয়া গ্রামে৷
তাঁর পিতা রাজকুমার সরকার এবং মাতা হরিসুন্দরী দেবী। তাদের সাতজন পুত্র এবং তিনজন কন্যার মধ্যে তিনি পঞ্চম সন্তান, তৃতীয়তম পুত্র। তাদের পূর্বপুরুষ ধনাঢ্য জমিদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বিদ্যানুরাগী রাজকুমার সরকারের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ছিল বিশালাকায়। গণিতের ছাত্র হলেও ইতিহাসের প্রতি ছিল তাঁর গভীর আগ্রহ। নানা জনহিতকর কাজের জন্য তিনি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে ভালোবাসতেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
এইসব বিষয় যদুনাথ সরকারকে প্রভাবান্বিত করেছিল। পিতার মাধ্যমেই অল্প বয়সে তাঁর পরিচয় হয়েছিল বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘হিস্ট্রি অব ইংল্যান্ড’ নামের গ্রন্থের সঙ্গে। রাজকুমার সরকার পুত্রের হাতে প্লুটার্ক রচিত প্রাচীন গ্রিক ও রোমান নায়কদের জীবনী তুলে দিয়েছিলেন। পিতাই তাঁর কিশোর চিত্তে ইতিহাসের গভীর চেতনা জাগিয়ে দিয়েছিলেন।

গ্রামের স্কুলে তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু। তারপর অধ্যয়ন করেছেন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে। এরপর গন্তব্য কোলকাতার হেয়ার স্কুল ও সিটি কলেজিয়েট স্কুল। পরে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৮৮৭ সালে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করেন প্রথম শ্রেণীতে ষষ্ঠ স্থান অর্জন করে। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে দশম স্থান অধিকার করে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন ১৮৮৯ সালে। পরবর্তী গন্তব্য কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ। থাকতেন ইডেন হোস্টেলে।

১৮৯১ সারে তিনি ইতিহাস ও ইংরেজি সাহিত্য – এই দুটি বিষয়ে অনার্সসহ বি.এ পাশ করেন এবং ১৮৯২ সালে ৯০% নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ পাশ করেন৷ ১৮৯৭ সালে তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ‘প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ’ স্কলারশিপ পান এবং স্বর্ণপদকসহ দশ হাজার টাকা বৃত্তি লাভ করেন৷

অধ্যাপনার মাধ্যমে ১৮৯৮ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁর প্রথম কর্মস্থল ছিল। ১৮৯৯ সালে পাটনা কলেজে বদলী হয়ে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন। মাঝখানে কিছুকাল ১৯১৭ সাল থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অধ্যাপনা করেন। অধ্যাপক জীবনের বেশীরভাগ সময়ই কাটে পাটনা ও কটকে। ৪ঠা আগস্ট, ১৯২৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর মনোনীত হন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনিই প্রথম অধ্যাপক ভাইস-চ্যান্সেলর ছিলেন তিনি।
যদুনাথ সরকার ১৯২৩ সালে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির সম্মানিত সদস্য হন।

ইতিহাস শাস্ত্রে অসাধারণ ও প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন যদুনাথ সরকার। তাকে ইতিহাস-চর্চায় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন তার পিতা ছাড়া আর একজন, তাঁর নাম ভগিনী নিবেদিতা।
তিনি ঐতিহাসিক গবেষণা-গ্রন্থ রচনার জন্য বাংলা, ইংরেজি, সংস্কৃত ভাষা ছাড়াও উর্দু, ফারসী, মারাঠীসহ আরও কয়েকটি ভাষা শিখেছিলেন।
তিনিই প্রথম মীর্জা নাথান রচিত ‘বাহারিস্তান-ই-গায়বী’র পাণ্ডুলিপি ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত জাতীয় গ্রন্থাগারে খুঁজে পান এবং এ বিষয়ে বিভিন্ন জার্নালে বাংলা ও ইংরেজিতে প্রবন্ধ লিখে বিশেষজ্ঞ জনেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ঐতিহাসিক গবেষণা ছাড়াও তিনি একজন বিশিষ্ট সাহিত্য-সমালোচক ছিলেন। এছাড়াও, রবীন্দ্র-সাহিত্যের সমঝদার পাঠক ছিলেন যদুনাথ সরকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার পাবার আগেই তিনি কবির রচনার ইংরেজি অনুবাদ করে পাশ্চাত্য জগতের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
তাঁর দাম্পত্য সঙ্গী ছিলেন – লেডি কাদম্বিনী সরকার।

যদুনাথ সরকার ২৫টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এছাড়াও, ১২টি গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। ১৯০১ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম গ্রন্থ পাঁচ খণ্ডে সমাপ্ত ‘হিস্ট্রি অব ঔরঙ্গজেব’। তাঁর রচিত অন্যান্য গ্রন্থ হলো –

১). দ্য ফল অব দ্য মুঘল এম্পায়ার (মুঘল সাম্রাজ্যের ফতন)
২). শিবাজী, মিলিটারী হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া (ভারতের সামরিক ইতিহাস)
৩). দ্য রানী অব ঝাঁসী (ঝাঁসীর রানী)
৪). ফেমাস ব্যাটেল্‌স্‌ অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি (ভারতীয় ইতিহাসের বিখ্যাত যুদ্ধ)
৫). শিবাজী এন্ড হিজ টাইম (শিবাজী ও তার সময়)
৬). ক্রোনোলজী অব ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি (ভারতীয় ইতিহাসের কালক্রম)
তার সংগৃহীত গ্রন্থ ও পাণ্ডুলিপি ভারতের জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত আছে।

ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবেষণায় যদুনাথ সরকার পথ প্রদর্শক ছিলেন। এই কারণে দেশবাসী তাকে আচার্য হিসাবে বরণ করে নিয়েছিলেন।
যদুনাথ সরকার তার প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে বিরল সম্মাননা অর্জন করেছিলেন।
১৯২৯ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘নাইট’ উপাধি প্রদান করেন।
১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৪৪ সালে পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট উপাধি প্রদান করে।
আচার্য যদুনাথ সরকার প্রায় ৮৮ বৎসর ( ৮৭ বছর – ৫ মাস – ৯ দিন) বয়সে ১৯৫৮ সালের ১৯শে মে তারিখে কলকাতায় পরলোকগমন করেন।

————————————————-

[তথ্যসূত্র – উইকিপিডিয়া –
Chakrabarty 2015,
“স্যার যদুনাথ সরকার”। www.sahos24.com।
“সরকার, যদুনাথ – বাংলাপিডিয়া” bn.banglapedia.org
বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, সম্পাদনায় – সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম, (২য় সংস্করণ, ২০০৩, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, পৃ. ৩৩৩).
সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, সম্পাদক: অঞ্জলি বসু, (৪র্থ সংস্করণ, ১ম খণ্ড, ২০০২, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, পৃ. ৪৩৬.) ]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress