অনেকদিন আসিনি এ ঘরে,
যে ঘরে বসে মা জানালা খুলে
দীর্ঘ গোধূলির ম্লান আলোর ছটাকে
বড়ো আপন করে নিতেন।
অনেকদিন আসিনি এ ঘরে,
যে ঘরে বসে মা উদাত্ত কণ্ঠে
মহাভারতের পাঠে মোহিত করতেন
এক ছোট্ট কিশোরকে ।
অনেকদিন আসিনি এ ঘরে ,
যে ঘরে দিবস রজনী অনেক
অশ্রুসিক্ত ক্লান্তির ঘাম
শুকিয়েছে অবহেলায়, অনাদরে ;
অনেকদিন আসিনি এ ঘরে
যে ঘরে অনেক স্বপ্নের বুনন হয়েছিল নিভৃতে।
জীবনের প্রথম পাঠ যে ঘরের
তক্তপোশে বসে উচ্চারিত হয়েছিল
এক নির্বোধ শিশুর ছায়াচ্ছন্ন বেদনার কণ্ঠস্বরে।
অনেকদিন আসিনি এ ঘরে,
যে ঘরের বিকেলের ছায়া
মেলাত চাঁপা গাছের ‘পরে
অদূরে কৃষ্ণচূড়ার ডালে নীলকণ্ঠ পাখির
বিচরণ,কৃষ্ণচূড়ার লাল আভা
মিশে যেত দিগন্তের ওপারে।
অনেকদিন আসিনি এ ঘরে ,
যে ঘরের পবিত্রতা ছুঁয়ে আছে সমস্ত হৃদয় ,
আমার ফেরারি মন আজও খুঁজে ফেরে
সহজ সরল জীবনের অনুচ্চারিত কাব্যগাথা ,
অনুচ্চারিত মিথ ।
ঝড় বৃষ্টি রোদে যে স্বপ্নিল আঁখি
খুঁজে বেড়াত মায়ের শুকনো আঁচল
অসীম শূন্যতার মাঝে আজ
থেমে গেছে সব চলাচল ।
অনেকদিন আসিনি এ ঘরে ,
যে ঘরের বিছানায় শুয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর
প্রহর গুণতে গুণতে মা বিলীন হয়েছিলেন
এক পবিত্র চিতার অনলে।
অনেকদিন আসিনি এ ঘরে,
যে ঘরের কায়িক জীবন যেখানে মূল্যহীন
নিশ্চিত মৃত্যুর অনলে পিপীলিকার যে ঝাঁপ
সেই অজেয় শান্তির নীড়ের ঠিকানায়
নীরবে বিলীন হয়েছিল নশ্বর জীবন ।
তারপর অনন্ত ঘুম
পবিত্র চিতার অনলে
হাওয়ায় ভেসে আসা মেঘের ওপারে
বড়ো শান্তির নিদ্রা,
অনেকদিন আসিনি এঘরে,
যদি শান্তির নিদ্রায় কোন ব্যাঘাত ঘটে
অনেকদিন আসিনি এ ঘরে
যদি এ ঘরের পবিত্রতা কলুষিত হয়
আমার বেদনা ভরা অশ্রুর জলে।
Heart touching