আজ সন্ধ্যেবেলা যাদুঘরের ছোট মিলনায়তনে
আমার কবিতাপাঠ ছিল। কবিতা খুব ভালবাসো,
অথচ তুমি আসো নি। বলার মতো বলতে পারি নি ব’লেই
অভিমানের গাঢ় নীল শিখা জ্বেলে অন্তরে
ব’সে রইলে অন্ধকার ঘরে নিঃসঙ্গতাকে আঁকড়ে ধ’রে। আমি
ডানাভাঙা একটি দোয়েলকে
কংক্রীটে মুখ থুবড়ে পড়তে দেখলাম
ধোঁয়াশায়। আম্র খুব কষ্ট হ’তে থাকে; আকাশ থেকে
খ’সে পড়লে কয়েকটি তারা, চাঁদকে
একটা হিংস্র শকুন ছিঁড়তে শুরু করে। আকাশজোড়া আর্তনাদ।
সেই আর্তনাদে মিলনায়তন কাতর; তুমি আসো নি,
চতুর্দিক কেমন অন্ধকারাচ্ছন্ন। অথচ কোনও
বিদ্যুৎবিভ্রাট ছিল না। কবিতা পড়তে গিয়ে
হোঁচট খেলাম বারবার, যেমন খঞ্জ
বিব্রত হয় পথ চলতে। চেনা শব্দগুলো মনে হ’ল অচেনা।
তুমিহীনতায় মঞ্চে ব’সে একটিও প্রেমের কবিতা পড়তে পারি নি
কবিতাসন্ধ্যায়; আমার হস্তধৃত
বইয়ে পাতাগুলো, বিশ্বেস করো, পোড়োবাড়ি হ’য়ে গেল। আমার
নিজেরই কবিতা চাপা ক্ষোভ আর অভিমানে আসর ছেড়ে
চলে গেল যেন মহরমের মিছিলে বুক চাপড়াতে!
এরপর কেটে যাবে বহুকাল। আমাকে কখনও
কোনও কবিতাসন্ধ্যায় দেখা যাবে না আর;
হয়তো তুমি কোনও এক অলস বিকেলে বইয়ের দোকান থেকে
উপন্যাস আর কাব্যগ্রন্থ কিনে ছিমছাম বেরিয়ে আসবে, তখন
আমার হতচ্ছাড়া, বেঢপ একটি কবিতা
তোমাকে বিনীত জিগ্যেশ করবে,
‘কিছু মনে করবেন না প্লিজ, অনেকদিন পর দেখা, কেমন আছেন আপনি?
আঁচল গোছাবে, তারপর তোমার মধুর কিন্তু বিস্মিত কণ্ঠের প্রশ্ন, ‘কে তুমি?’
আমার কবিতা তার মলিন ফতুয়ার আলগা-হ’য়ে-আসা
বোতাম ঠিক করতে করতে দিনান্তের ভিড়ে করুণ মিলিয়ে যাবে।