হরিতকী বনে আর শিমূলের ছায়াঘন নিবিড় মায়ায়, দেখেছি তোমায়,- পলাশের লালিমায় ডালিম অধরে এলো চুলে লীলায়িত, প্রকৃতির অপরূপ আশ্চর্য বিস্ময়!
আমার প্রেয়সী তুমি সেই কবেকার–,
কবে কোন সুদূরের জন্ম লগ্ন পারে, দেখেছি তোমারে, শৈশবের কৈশোরের দীপজ্বালা নিশীথ মায়ায়, নিবিড় সন্ধ্যায়!
যেন কোন সুমেরুর স্বপ্নের ওপারে, সপ্তসিন্ধু পারাবারে, দোয়েলের,কোকিলের ত্রস্ত ঠিকানায় দেখেছি মেঘের দেশে দুনয়ন ভরে,নীল নীলিমায়।
যেন শতবরষের অসীম মায়ায়, সুনিবিড় বাহুলতা পাশে তুমি বেঁধেছ আমায়। কতশতবারে, বুকে ধরে রেখেছিলে সুনিপুন করে। কদমের, শিরীষের অসীম সম্ভারে,গোলাপের পলাশের মুগ্ধ লালিমায়,আমলকী বহেড়ার প্রগাঢ় ছায়ায়।
বকুলের,পিয়ালের মধুর মৌতাতে ক্রমশই মত্ত করে দিয়ে, উদভ্রান্ত করে ছিলে মহুয়ার মধুরসে বিমল মায়ায়।
পাকদন্ডী শুঁড়িপথে ত্রস্ত পায়ে হেঁটে যাই অনাঘ্রাত কুসুমের নাভিমূল দেশে, প্রান্ত সীমানায় । মধুভাণ্ড, অনাবৃত স্তনবৃন্ত হতে, নেমে আসে করুণার ধারা অবিরল, মমতার সপ্তসিন্ধু পারে।অবিরল, অবিরল ঝরণা ধারায়–
দুরন্ত আশ্লেষ ভরে,সঘন উল্লাসের সফেদ ফেনায়, সঘন চুম্বনের ব্যাপ্ত কামনায়।
ধরণীর বুকের ভিতরে, উথাল পাথাল করে ওঠে মহাকাল, সৃষ্টিসুখের নব জন্মলগ্ন পারে, জীবনের মরণের দৃপ্ত মহিমায়।
আরপারে, গোধূলির মায়াবী আলোকে সূর্য বসে পাটে। দিনের সকল কাজ সাঙ্গ করে এসে মায়াবক সবটুকু আলো নিয়ে চলে যায় দিগন্তের কাছাকাছি কোনো এক বিপুল আশায়। মায়াবক সবটুকু আলো নিয়ে চলে গেলে পরে অন্যপারে সন্ধ্যা নামে বায়সের বিস্তারিত কাজল ডানায়।
একে একে তারা ফুটে ওঠে বুঝি আকাশের গায়। এতোক্ষণে বুঝি চাঁদ চোখ মেলে চায়, শাল- পিয়ালের বনে, ডালিমের সঘন ছায়ায়। মনে পড়ে যায়,কবে কোন প্রভাতের পূণ্য তিথি ক্ষণে তুমি সেই পৃথিবীর প্রতিবেশী সনে সঙ্গমে হয়েছ লীন,জীবনের মহাসিন্ধু পানে,নবীনের জয়গানে নতুন মায়ায়।দোয়েলের কোকিলের বসন্ত বিতানে,সুনীল সাগর পানে, তারাদের দেশে,সেই দূর নীলিমায়।
ভ্রূণের প্রাণের স্পন্দন সচকিত করে তোলে শিহরিত পুলকিত জীবনের মিলন মেলায়।
নবতম জাতকের বিপুল বিস্ময়!–
দেহ হতে দেহান্তরে নতুন প্রাণের ধ্বনি সঞ্চারিত হয়, অসীমের আলোকিত আনন্দ ধারায়।
দামোদর, বরাকর জন্ম লয় গঙ্গা করতোয়া ইছামতী কাবেরী নর্মদা,সরযূ যমুনা সরস্বতী, শতদ্রু, ঝিলম আর সুরধনি মন্দাকিনী যত। সৃষ্টি হয় পাহাড় সাগর আর বনবীথি কত–।
জীবনের মোহনায় মাতৃদুগ্ধ অমৃতের মত মনে হয়, জীবনে জীবন যোগ হয়, ধরণীর ধূলিতেও ভালোবাসা হয় মধুময়। হে মোর ঈশ্বর, থেকে যেতে পারি যেন কিছুটা সময়, এই স্নিগ্ধ মমতায় নদী- গিরি- গুহা- বন- অরণ্য ছায়ায়। সবুজের সমারোহে, ভূলোক দ্যুলোক পারে, আকাশের সুনীল সীমায়, এই শুভ্র আলো আর ঝরণাধারায়।।