উৎপাত
রাতে ফুলস্পিডে পাখা চালিয়েও ঘেমে-নেয়ে একাকার। কিছুতেই ঘুম আসছে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি বারোটা বাজে। বিছানা ছেড়ে উঠলাম জল খেলাম। মুখে হাতে জল দিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। তন্দ্রা সবে এসেছে দুচোখ লেগেছে এমন সময় একটা শব্দ কানে এল।যেন কোন বাসন পড়ে গেল মনে হল। শব্দটা বেশ চেনা।রুটির কৌটোর ঢাকনা যেন পড়ে গেল। ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ায় আর উঠতে পারলাম না। সেই যে নাক ডেকে ঘুমালাম একেবারে পাখির ডাকে দুচোখ মেললাম। ছিটকিনি নামিয়ে দরজা খুলতেই দেখি দোরগোড়ায় কলার খোসা পড়ে আছে। চারটে কলা টেবিলের উপর প্লাস্টিক জালের ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রেখেছিলাম।ঢাকনার ভেতর থেকে কলা উধাও।
রুটির কৌটোর ঢাকনা মাটিতে গড়াচ্ছে। কৌট ফাঁকা।রুটি খুঁজে পেলাম না। ছেলে ঘুম থেকে উঠে এসে বলে গতকাল রাতে ও জানলায় দুটো আগুনের গোলা জ্বলতে দেখেছে। তারপর মিশমিশে কালো কে যেন ঘরে ঢুকল। আগুনের গোলাটাও ওর সাথেই ঘুরছিল।খানিক বাদে আর তাকে দেখতে পায়নি। তবে সে রাতেই একটা বাসন পড়ার শব্দ শুনেছিল। সে উঠেছিল। খুঁজে দেখেছিল। কিন্তু সে বুঝতে পারেনি।
একটু বেলায় পাশের বাড়ির ছোটো ছেলেটি ডেকে বলে আন্টি তোমাদের বাড়ি রাতে কেউ এসেছিল? মা বলছিল সে নাকি মানুষের মত কলা ছাড়িয়ে খায়। আমার জন্য যে দুটো কলা মা রেখেছিল ওই বেটা খেয়ে পালিয়েছে। তুমি জান? ওদের গন্ধ গোকুল বলে। ওর মা অমনি ছুটে এসে বলে বেশ কয়েক দিন ধরেই নাকি পাড়ায় উৎপাত করছে সে। আমি বললাম আমার ছেলে রাতেই তাকে নাকি দেখেছে।কিন্তু বুঝতে পারেনি , শুধু একটা ছায়া যেন ঘুরপাক খেতে খেতে মিলিয়ে গেল।, কিসের সংকেত দিতে এসেছিল কি জানি। তার দুদিন পরেই আমার শাশুড়ী মা পড়ে গিয়ে সেই যে বিছানা নিল আর সুস্থ হল না। ভাঙা কোমর আর ঠিক জোড়া লাগলো না। কয়েক মাস বিছানায় শুয়ে তাকে সব করতে হতো। সেই তখন থেকেই রোজ তারা ছাদে এসে উৎপাত করতো। শাশুড়ী মা মারা যাওয়ার পর আর ওদের উৎপাত শোনা বা দেখা যায় নি। মৃত্যুর আভাস দিতেই কি তারা এসেছিল?