সুন্দর প্রভাতে
একদিন, জীবনের নীল পারাবার তীরে,
অকলঙ্ক পাল তুলি
কযেছিল শৈশব আমার
চলিলাম যৌবনের দেশে |
সুপ্তিহীন সমুদ্রের গান
অহরহ তারে ঘিরে ঘিরে
ওঠে উচ্ছ্বসিয়া ;
সেথা নিত্য আনন্দের মেলা
সেথা চির নন্দনের খেলা |
তার পর একদিন পথহীন পারাবারে দিক্ ভ্রান্ত
কৈশোর আমার
কয়েছিল কাঁদি
–কবে উতরিব সেই যৌবনের দেশে
যেথা মায়া, যেথা সব বস্তহীন ছায়া
যেথা শুধু স্বপনের মেলা ;
যেথা মোর সব কান্না শুধু বিরহের,
সব হাসি মিলনের শুধু ;
যেথা প্রিয়া
ব্যাকুল নয়ন মেলি
জাগে চির প্রতীক্ষায়
অন্তহীন যুগযুগান্তর ;
বিরহের দীর্ঘশ্বাসে নিত্য উদ্বেলিয়া ওঠে অশান্ত সাগর |
যেথা দিন ক্লান্তিহীন তন্দ্রাহীন রাত,
যেথা কথা অশ্রান্ত প্রলাপ |
—আনন্দ যে ক্ষণে ক্ষণে পরিপূর্ণ আপনারে সহিতে না পারি
গলে যায় আঁখিজলে,
আঁখিজল মুক্তা হয়ে হাসে—
প্রিয়া বিনা যেথা কিছু নাই |
তাহারি প্রশান্ত প্রেম ফুটে আছে
জলে স্থলে নিখিল ভুবনে
অক্ষয় সৌরভে ভরা
একটি অপূর্ব চাওয়া—
পরিপূর্ণ পদ্ম একখানি |
আজ সূর্য অস্ত যায় পশ্চিমের ছিন্ন রক্ত-মেঘের আড়ালে
রক্তসিন্ধু স্থির অচঞ্চল
মূর্ছাহত সীমাহীন বালুচর !
মন্দবায়ে
ছিন্ন পাল তুলি ভগ্ন নায়ে
ফিরে চায় জীবন আমার
ফিরে চায় পশ্চাতের পানে |
পূর্বের সীমান্ত রেখা মুছে যায়
অন্ধকারে ধীরে
–জীবনের যাত্রা হল শেষ |
কি কহিতে চাহে আজি জীবন আমার—
হিম-ওষ্ঠে কি কথা বাধিয়া যায় কঠিন নীহারে –-
আরবার ফিরে চল হোথা
ফিরে চল যৌবনের দেশে,
প্রিয়ারে খুঁজিতে যেথা বিফলে কাটিয়া গেল দিন
তবু প্রিয়া দেখা নাহি দিল
চিনিতে হল না চেনা |
যেথা তার সাথে
বারবার নানা মত পরিচয় হল পলে পলে
অনন্ত অশেষ ;
তবু তৃপ্তি হল নাক হায় |
ফিরে চল উদ্বেলিত যৌবনের সিন্ধুতীরে
হাসি কান্না ভুল ভ্রান্তি ভরা
দীর্ঘ-নিশ্বাসের দেশে ;
স্বপ্ন সত্য যেথা সত্য প্রিয়া
যেথা প্রণয়ের জয় নিত্য ওঠে গানে গানে
মৃত্যুর কল্লোল উল্লঙ্ঘিয়া |
—দীর্ঘ জীবনের মোর সমস্ত আশ্বাস
ধন্য হল যে যৌবনে
একটি ছোঁয়ায় শুধু একটি চাওয়ায়
প্রাণের প্রিয়ার |