আমার মা তার শত স্নেহার্দ্র চুম্বনে কিছু শব্দ আস্তে সুস্থে
আমার সবুজ শৈশবের আদিপর্বে
অন্তরঙ্গ মিশিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর ওষ্ঠ, দৃষ্টিপাত
থেকে রোজ নিজের অজ্ঞাতসারে কুড়িয়ে নিয়েছি
ভাষার পরাগ কত আর
স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণ ফুটেছে কুসুমরূপে শিরায় আমার।
জাগরণে সর্বক্ষণ অবশ্যই, এমনকি গভীর ঘুমের ভেতরেও
মাতৃভাষা গুঞ্জরিত ঠোঁটে; স্বপ্নে দেখি, ‘হাসি খুশি’
খেয়া হয়ে ভাসে মগ্ন চৈতন্যে আমার
এবং ‘সহজ পাঠ’ হাঁসের ধরনে
প্রফুল্ল সাঁতার কাটে ভাবনার ঢেউয়ে ঢউয়ে, আঁধারে আলোয়।
নিজেকেই খুঁজি নিত্য আপন ভাষার নানা রঙে, নানা ছাঁদে।
কখন যে বাংলা বর্ণমালা কবিতার সাজে এল
আমার একান্ত ঘাটে, ভাসালো কলস
রহস্যের ছন্দে ভোরবেলা,
প্রখর দুপুরে আর গোধূলিরঙিন ক্ষণে, প্রগাঢ় নিশীথে,
বুঝতে পারিনি ঠিক, শুধু তার ইঙ্গিতে ঘুরেছি একা একা
মন্ত্রমুগ্ধ দিগ্ধিদিক। মাতৃভাষাকেই
নিশ্চিত প্রাণভোমরা জেনে
নিজেকে ক্ষইয়ে যুগিয়েছি তাকে সর্বদা জীবনসঞ্জীবনী।
বায়েন্নেয় ওরা এই প্রাণভোমরাকে
টিপে মেরে ফেলার চক্রান্তে মেতে করেছিল
হেলায় হরণ প্রাণ চিরতরে কতিপয় রাঙালির
তরুণ নিশ্বাস। সে-নিশ্বাস বয়ে যাবে যুগে যুগে
শহীদ মিনারে, গ্রন্থে, জাতীয় স্মৃতিতে। সর্বদাই
আমাকে নিবিড় আলিঙ্গন করে বাংলা বর্ণমালা।